

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় শীতকালীন ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষের এখন ভরা মৌসুম। উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজে মোড়া কপির সমারোহ যেন এক অনন্য শীতের সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষি বিভাগের নিয়মিত পরামর্শ ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এ বছর কপি চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাটিরাঙ্গায় ২৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছিল। সেখানে হেক্টরপ্রতি ২৮ মেট্রিক টন হিসেবে মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ৭০০ মেট্রিক টন। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও একই পরিমাণ জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আরও বেশি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বাঁধাকপির ক্ষেত্রেও রয়েছে সমান সাফল্য। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হেক্টরপ্রতি ৩০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি আবাদ করে মোট ৯০০ মেট্রিক টন উৎপাদন পাওয়া গিয়েছিল। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও একই পরিমাণ জমিতে বাঁধাকপি চাষ করা হয়েছে। এবারও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি অফিস।
মাটিরাঙ্গার চড়পাড়া, নতুন পাড়া, চৌধুরীঘাট, ওয়াছু, তাইন্দং, বড়নাল, তবলছড়ি, গোমতী, গড়াগড়িয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠজুড়ে এখন শীতকালীন সবজির উৎসব। নতুন পাড়া ও ওয়াছু এলাকায় গেলে চোখে পড়ে সারিবদ্ধ ফুলকপি-বাঁধাকপির বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ, যেখানে পত্রের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে কৃষকের পরিশ্রম ও আশার গল্প।
মাঠ পর্যায়ের সফলতার উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে ওয়াছু এলাকার কৃষক আবু তাহেরের নাম। তিনি ১ একর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষে দেড় লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। আরও ভালো ফলন হলে তিন লাখ টাকারও বেশি বিক্রির আশা করছেন তিনি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় তার আবাদে ভালো ফলনের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গোমতীর কৃষক শামসুল হক লাভের আশায় থাকলেও চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরে বলেন, ‘ফলন ভালো হলেও সার-কীটনাশকের দাম বাড়ছে। অসময়ের বৃষ্টিও ঝুঁকি। তবু মাঠে ভরা ফসল দেখে সব কষ্ট ভুলে যাই। যদি পরিবহন খরচ কমত, তাহলে কৃষকের লাভ আরও বাড়ত।’
তাইন্দং ইউনিয়নের কৃষক গনি মিয়া বলেন, ‘এবার বাজারে ভালো দাম পাচ্ছি। আগাম কপি তোলায় সাড়া মিলেছে। ন্যায্য দাম থাকলে আগামী বছর আরও বেশি জমিতে কপি চাষ করব।’
তবলছড়ির কৃষক আবুল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরের লোকসান কাটিয়ে এবার দুর্দান্ত ফলন হয়েছে। উন্নত বীজ ও সারের সঠিক ব্যবহারে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছি। এরই মধ্যে প্রথম চালান ভালো দামে বিক্রি করেছি।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শীতকালীন কপি চাষ মাটিরাঙ্গার গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। উৎপাদন, পরিচর্যা, বাজারজাতকরণসহ পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ, সুষম সার ব্যবস্থাপনা, রোগবালাই দমন ও মাঠপর্যায়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে আসছি। এ বছর আবহাওয়া কপি চাষের জন্য খুবই অনুকূল ছিল। তাই আবাদ ভালো হয়েছে, ফলনও আশাব্যঞ্জক। আশা করছি, এবার কৃষকরা বেশি লাভ পাবেন।’
মন্তব্য করুন