রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা দল ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে মস্কো। বিধ্বস্ত প্লেন থেকে উদ্ধার করা ১০টি মরদেহের জেনেটিক বিশ্লেষণ করে গতকাল রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে তদন্তকারী দল। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
গত ২৫ আগস্ট মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তিন ক্রু, প্রিগোজিন ও ওয়াগনারের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ ১০ জন ওই বিমানটিতে ছিলেন। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই সবার মৃত্যু হয়। নিহতদের সবার দেহ বিকৃত হয়ে যায়। এ কারণে মরদেহগুলোর পরিচয় নিশ্চিত হতে জেনেটিক বিশ্লেষণ করা হয়। তদন্তকারী দল জানায়, দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত ১০টি মরদেহের সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দুর্ঘটনার পরপর রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটির যাত্রীর তালিকায় প্রিগোজিনের নাম ছিল। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তারা তার মৃত্যুর বিষয়ে সরাসরি কোনো ঘোষণা দেয়নি। তা ছাড়া এ বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রায় ২৪ ঘণ্টা কোনো কথা বলেননি। তবে এক দিন পর নীরবতা ভেঙে তিনি প্রিগোজিন ও বিমান দুর্ঘটনায় নিহত অন্যদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। ওই সময় পুতিন বলেন, প্রিগোজিন একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু তিনি অনেক ভুলও করেছেন। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর অনেকে এ দুর্ঘটনার জন্য অভিযোগের তীর ছোড়েন পুতিনের দিকে। তবে রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে বলা হয়, প্রিগোজিনকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে যেসব কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো সব মিথ্যা।
তবে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনের প্রতি পুতিনের ক্ষোভ ছিল। কারণ মৃত্যুর মাত্র দুই মাস আগে তিনি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে নিজের ২৫ হাজার সেনা নিয়ে বিদ্রোহ করেছিলেন। ওই বিদ্রোহে রুশ বাহিনীর একের অধিক বিমান ভূপাতিত করে ওয়াগনার সেনারা। আর এসব কারণে প্রিগোজিনের ওপর ক্ষুব্ধ হন পুতিন। এ কারণে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পশ্চিমা অনেক নেতা দাবি করেন, বিদ্রোহের প্রতিশোধ নিতে প্রিগোজিনকে হত্যা করেছেন পুতিন।
আফ্রিকায় ওয়াগনারের ভবিষ্যৎ কী : বিমান দুর্ঘটনায় প্রিগোজিনের মৃত্যু হওয়ায় ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে সেনাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মস্কোতে সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল ওয়াগনাররা। এ ছাড়া আফ্রিকান দেশগুলোতে ভালোই জনপ্রিয়তা পেয়েছে ওয়াগনার বাহিনী। সেখানে আলকায়দা এবং আইএসের মতো গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বেশ ভালোভাবেই লড়ে গেছে তারা।
রাজনৈতিক ও সমর বিশ্লেষকদের মতে, আধিপত্য কায়েমে পুতিন সরকার সম্ভবত আফ্রিকায় ওয়াগনার যোদ্ধাদের মোতায়েন রাখবে। এটা হতে পারে বাহিনীর নতুন প্রধান নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। অনেকের মতে, আফ্রিকায় প্রিগোজিন গভীর ও ব্যক্তিগত সংযোগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই দ্রুত তার প্রতিস্থাপন করা মস্কোর জন্য খুব একটা সহজ নাও হতে পারে। যদিও রাশিয়ার জন্য অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক—দুভাবেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আফ্রিকা।
চলতি গ্রীষ্মে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে হওয়া জাতীয় গণভোটে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ওয়াগনার বাহিনী। এ ভোটের পর দেশটির প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মালির সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো ওয়াগনার বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া সম্প্রতি নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর জান্তা সরকার ওয়াগনারের সাহায্যের জন্য বাহিনীটির সঙ্গে যোগাযোগ করে। আফ্রিকায় ক্রেমলিনের অন্যতম চাওয়া হলো, যোগাযোগ বাড়িয়ে মহাদেশটিতে পশ্চিমা প্রভাব কমানো।
মন্তব্য করুন