করোনাকাল থেকে শুরু, ২০২৩-এ এসে প্রাপ্তি। এ যেন অন্যরকম এক অনুভূতি। বলছিলেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অংকন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘ফাস্টেস্ট টাইম টু সেটআপ অ্যান্ড টপেল ফাইভ ইরেজার’ টাইটেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাঁচটি রাবার দাঁড় করিয়ে একটির ওপরে আরেকটি ফেলে তিনি এ রেকর্ড করেন। অংকন নাট্যকলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে পাঠানো স্বীকৃতিমূলক ইমেইলটি হাতে পেয়েছেন অংকন। তার রেকর্ডের এ বিষয়টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে ২৩ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি অংকনের কার্যক্রমকে রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, ২ দশমিক ৪৭ সেকেন্ডে পাঁচটি রাবার দাঁড় করিয়ে একটির ওপর আরেকটি ফেলে জাহিদুল ইসলাম অংকন নতুন এ রেকর্ডটি গড়েন। এর আগে একই বিষয়ে এক মালয়েশিয়ান নাগরিকের ৩.৬৪ সেকেন্ডের রেকর্ড ছিল। চলতি বছর ১৭ মে তিনি এ রেকর্ডের জন্য অনলাইন মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির কাছে আবেদন করেন। ২৩ আগস্ট ইমেইলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি অংকনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অনুভূতি প্রকাশ করে অংকন তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, আমার পুরো শরীর থরথর কাঁপছে। পারছি না শুধু হাউমাউ করে কান্না করতে। আপাতত আপনাদের দোয়া চাই। এখন শুধু সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষা।
শুরুটা কেমন ছিল জানতে চাইলে অংকন বলেন, ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখতাম গিনেস বুক সম্পর্কে জানার জন্য। কিন্তু সেখান থেকে স্পষ্ট ধারণা পেতাম না। পরে ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখেছি সবাই কোন কোন বিষয়ে রেকর্ড করেছে। শুরুতে কয়েন দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটার ওপর একটা রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু অন্যের রেকর্ড ভাঙার আগেই দেখি নতুন রেকর্ড তৈরি হয়ে গেছে।
এই আইডিয়া এলো কী করে এমন প্রশ্নের জবাবে অংকন বলেন, এটা আমার প্রথম রেকর্ড অ্যাটেম্প ছিল না। এর আগেও বেশ কিছু রেকর্ড অ্যাটেম্প নিয়েছি। যেমন—লারজেস্ট চেইন বাই স্টাপল পিন, মোস্ট কয়েন স্টক ইন ওয়ান মিনিট, ফাস্টেস্ট টাইম তো অ্যারেঞ্জ আ চেস বোর্ড ইত্যাদি। সবটিতেই ব্যর্থ হই। তবে হাল ছাড়িনি। আরও ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকি কী কী নিয়ে রেকর্ড করা আমার পক্ষে সম্ভব। খুঁজতে খুঁজতে এটা পাই। এরপর লেগে পড়লাম এই রেকর্ড নিজের করে নিতে।
প্র্যাকটিস কীভাবে করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে দোকান থেকে পাঁচটি রাবার কিনে নিই। এরপর বাসায় এসে পড়ার টেবিলের ওপর বই-খাতা দূরে ঠেলে দিয়ে এই অনুশীলন শুরু করি। এক হাতে এটা করতাম, অন্য হাতে স্টপ ওয়াচ রাখতাম আর দেখতাম কত সময় লাগছে। প্রথমে পুরোটা করতে পাঁচ সেকেন্ডের ওপরে সময় লাগত। এরপর প্র্যাকটিসের মাধ্যমে সময় কমিয়ে আনি।
অংকন বলেন, আমার মাথায় যখন যেটার ভূত চাপে সেটা না নামা পর্যন্ত আমি করতেই থাকি। আমার টার্গেট গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাব, যতক্ষণ না পর্যন্ত এইটা করতে পারছি, আমি হালকা হতে পারছিলাম না। দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা করে এটার প্র্যাকটিস করতাম। এর আগেরগুলোর ক্ষেত্রেও তাই।
তিনি আরও বলেন, কাজটি নিজে নিজেই করেছি। রেকর্ড করাকালীন অ্যাভিডেন্স হিসেবে ন্যূনতম দুজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং দুজন টাইম কিপার রাখা লাগে। আমার বন্ধুরা আমাকে সাহায্য করেছে এই বিষয়ে।
তবে প্রথমবার রেকর্ড গড়েই থেমে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন অংকন। তিনি এরপর কী রেকর্ড করবেন তা জানাননি। বললেন, কী রেকর্ড করব এটা আগে বলে দিলে তো মজাটাই থাকল না। সাসপেন্স থাকুক। তবে রেকর্ডের অ্যাটেম্প নেব। সফল হব কি না, তা জানি না।
আনন্দ প্রকাশ করে অংকন বলেন, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মতো সম্মানীয় একটি জায়গায় নিজের নাম লেখাতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এ রেকর্ডটি মালয়েশিয়ান এক নাগরিকের থেকেও কম সময়ে গড়ে সেটি বাংলাদেশের জন্য ছিনিয়ে নিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
অংকন আরও বলেন, করোনাকালীন অলস সময়ে চিন্তা করেছিলাম নতুন কিছু করার। তখন থেকেই বারবার চেষ্টা করি রেকর্ড করার জন্য। অনেকবার চেষ্টার পর আমি সফল হয়েছি। আমার বাবা-মাকে এ গৌরবময় অর্জন উৎসর্গ করতে চাই।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ছাড়াও অংকন একজন লেখক। এ পর্যন্ত তার চারটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম উপন্যাস শূন্য ঠিকানা প্রকাশিত হয় ২০২০ অমর একুশে বইমেলায়, এরপর খোঁপার বাঁধন, দখিনা চিঠি এবং হাওয়া যথাক্রমে ’২১, ’২২ ও ২৩ বইমেলায় প্রকাশিত হয়। বর্তমানে তার আরেকটি উপন্যাসের কাজ চলমান। জাহিদুল ইসলাম অংকনের এ কৃতিত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাবিল আনন্দের মাত্রা যোগ করেছে।
মন্তব্য করুন