বরগুনার আমতলীতে নির্মাণের ৩ দিন না পেরোতেই দেবে গেছে সড়ক। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৮ জুন সড়কে ধানের চারা রোপণ করে ঠিকাদারের কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, জিওবি ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় গুলিসাখালী ইউনিয়নের ডাক্তার বাড়ি পটুয়াখালী আরএসডি সড়ক থেকে গোছখালী অফিসবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পিচ ঢালাই করা হয়। ১ কোটি ১২ লাখ ৫১ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় বরগুনার ঠিকাদার কোম্পানি সালেহা এন্টারপ্রাইজ।
পরে সালেহা এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে কাজটি নেন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধা। তিনিই কাজটি শেষ করেন গত ২৩ জুন। কাজের ৩ দিনের মাথায় ২৬ জুন সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে ইটের খোয়া ও বিটুমিন উঠে সড়কের ইট বের হয়ে দেবে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটিতে নিম্নমানের ইট, বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিকাদার রাস্তার অনেক স্থানে পিচের পরিবর্তে পোড়া মবিল ব্যবহার করেছে বলে তাদের অভিযোগ। এ ছাড়া অপরিষ্কার রাস্তায় পিচ দেওয়ার কারণে এগুলো উঠে যাচ্ছে। হাত দিয়েই তুলে ফেলা যাচ্ছে পিচ। দুই দিনেও পিচ ও খোয়া জমাট বাঁধেনি।
নির্মাণকাজের শুরুতেই ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করেন এলাকাবাসী; কিন্তু ঠিকাদার এলাকাবাসীকে মামলা ও হামলার ভয়ভীতি দেখান। পরে তারা আর প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরির বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বেশ কয়েকবার জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ২৮ জুন এলাকাবাসী ওই সড়কের দেবে যাওয়া স্থান খেকুয়ানী গাজী বাড়ির সামনে ধান গাছের চারা রোপণ করে ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলীর অনিয়মের প্রতিবাদ করেন। আবার এ রাস্তা নির্মাণের দাবি জানান এবং এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তারা।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহসভাপতি বাইনবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, কাজের শুরুতেই ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা নিম্নমানের ইট, খোয়া, পাথর ও বিটুমিন দিয়ে কাজ করছিলেন। আমি তার অনিয়মের প্রতিবাদ করি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির মামলা করবে বলে হুমকি দেন। আমি এ বিষয়টি তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইজুর ইসলাম নয়ন, সদস্য সাইদ ও আল আমিন খলিফা বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা যোগসাজশে দায়সারা কাজ করে সড়কের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, দ্রুত সড়কের কাজ আবার করব।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।
আমতলীর ইউএনও মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। সড়কের কাজ যথেষ্ট নিম্নমানের হয়েছে। বরগুনা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। দ্রুত তারা ওই সড়কটি আবার সংস্কার করে দেবেন।
বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি বলেন, ওই সড়কটির কাজের বিল দেওয়া হয়নি। বৃষ্টি কমলেই ঠিকাদার আবার কাজ করে দেবেন। ভালোভাবে কাজ শেষ করলেই বিল দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন