এনায়েত শাওন
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১২ জুন ২০২৩, ০৯:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংলাপ নিয়ে কী হচ্ছে

মন্ত্রীদের বহুবচন
সংলাপ নিয়ে কী হচ্ছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আবারও আলোচনায় দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপিকে আলোচনার টেবিলে বসানোর দাবি দেশি-বিদেশি সব মহলের। দল দুটি বিপরীত মেরুতে থেকে দৃশ্যত দূরত্ব বজায় রেখে বক্তব্য দিলেও কার্যত ভেতরে-ভেতরে সংলাপের তাগাদা অনুভব করছে উভয়পক্ষই। দেশি ও বিদেশি চাপে উভয় দলই সমস্যা সমাধানে তৎপর। প্রকাশ্যে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা না গেলেও দলের নেতারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকে অংশগ্রহণ করছেন। বিএনপি সংলাপ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের উদ্যোগী হওয়ার ইঙ্গিত দিলেও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সংলাপ নিয়ে আসলে হচ্ছেটা কী?

বিএনপি বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে কথা হলে সংলাপে রাজি, অন্যদিকে সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ। যদিও গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সংবিধানের ভেতরে থেকে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলটির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতাসহ মন্ত্রিসভার তিনজন বক্তব্য দেন। আমুর বক্তব্যকে ব্যক্তিগত ও দলে সংলাপ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলে উড়িয়ে দেন তারা। ফলে সংলাপের সম্ভাবনা সম্পর্কে দুই দলের অবস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে ঘোলাটে পরিস্থিতি।

ক্ষমতাসীন দল বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করে, কিন্তু বিদেশি কারও মধ্যস্থতায় অনাগ্রহী। যদিও দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে সংলাপের সম্ভাবনা সাফ উড়িয়ে দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার এক সভায় ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনার কথা বলেছিলেন। প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। সংবিধানের মধ্যে থেকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের জন্য আলোচনার দরজা খোলা আছে বলেও বলেন এই প্রবীণ নেতা।

এরপর শুরু হয় দলের ভেতরে-বাইরে সব মহলে আলোচনা-সমালোচনা, শীর্ষ নেতৃত্বের চাপ। পরের দিন বুধবার অবশ্য আমু ছয় দফা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে সুর পরিবর্তন করে বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে কাউকে আলোচনার জন্য আহ্বান করা হয়নি। নির্বাচন নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই।

এর আগে বুধবার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনার সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে এখনো দলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের দেশে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট হয়নি যে, জাতিসংঘের এখানে ইন্টারফেয়ার করতে হবে। আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব, এটা নিজেদের সমস্যা। নিজেরাই সমাধান করব।

বিএনপির সঙ্গে আলোচনা শিগগির হচ্ছে, এরকম কোনো ইঙ্গিত ওবায়দুল কাদের দেননি; কিন্তু সংলাপের সম্ভাবনা একদম বাতিল হয়ে গেছে, তাও বলেননি। গত শনিবার গণভবনে এক বৈঠক শেষে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে আশার প্রদীপ এখনো নিভে যায়নি। সংলাপ হবে কি না, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। তবে এখনই সংলাপ নিয়ে ভাবা হচ্ছে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংলাপ নিয়ে উদ্ভট ও মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছেন অভিযোগ করে দুটি শর্ত দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা যতদিন এদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত এবং নির্বাচন ও নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপতৎপরতা থেকে বিরত না হবে, ততদিন পর্যন্ত সংলাপের কোনো প্রশ্নই আসে না।

অন্যদিকে সংলাপ বিষয়ে আমির হোসেন আমুর বক্তব্য ব্যক্তিগত বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, এটি সরকার বা আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলের বক্তব্য নয়।

ওই বুধবার আরেক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সমস্যা সমাধানে সংলাপের পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, তথা গণতন্ত্রের স্বার্থে সংলাপের বিকল্প নেই। সংলাপ চলমান থাকবে। সবকিছুই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

জানা গেছে, বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের আগামী নির্বাচন ও সংলাপ নিয়ে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বৈঠক করেন দুদলের নেতারা। গত ২২ মার্চে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে তার বাসায় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ প্রতিনিধিদল। ২৪ তারিখ মার্কিন নতুন ভিসা নীতি প্রকাশের পরদিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে বৈঠকে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। নির্বাচন নিয়ে নিয়মিত বিরতিতে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক, সংলাপের বিষয়ে দুদলের নমনীয় সুর থেকে সব মহলের প্রশ্ন পর্দার আড়ালে কী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্য কোনো আলোচনা হচ্ছে?

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানও আলোচনার সম্ভাবনাকে বাতিল না করে দিয়ে বরং রাজনীতিতে সংলাপ হতে পারে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন। তবে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের আশা দেখেন না জানিয়ে ফারুক খান বলেন, ওদের (বিএনপির) সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সংলাপের নামে বিএনপি শুধু সময়ক্ষেপণ করে। অতীতে দুটি সংলাপ সফল হয়নি। তাই ওদের সঙ্গে সংলাপে আশাবাদী না। চাইলে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘জনযুদ্ধের’ জন্য প্রস্তুত ভেনেজুয়েলা, মাদুরোর হুঁশিয়ারি

নুরকে দেখতে হাসপাতালে শামা ওবায়েদ, চাইলেন সুষ্ঠু তদন্ত

জাগপা সভাপতির ওপর হামলার ঘটনায় জামায়াতের নিন্দা

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে বেলজিয়াম, ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি

ডিএনসিসির সতর্কবার্তা

আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে কত?

সুমনার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ

জুতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সাপের কামড়ে যুবকের মৃত্যু

সেই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিবিরের লিখিত অভিযোগ

১০

সাংবাদিক বুলুর মৃত্যু ঘিরে সামনে এলো ‘ভিডিও’, বাড়ছে রহস্য

১১

শোবিজে হেনস্তার শিকার, অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দিলেন আলিজাহ

১২

এলপি গ্যাসের দাম বাড়বে না কমবে, সিদ্ধান্ত আজ

১৩

চাকরি দিচ্ছে ওয়ান ব্যাংক, থাকছে না বয়সসীমা

১৪

তিন মাস পর সুন্দরবন উন্মুক্ত, খুশি জেলে-দর্শনার্থী

১৫

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পুতিনের মন্তব্য

১৬

সুদানে এক গ্রামে ভূমিধসে প্রাণহানি ১ হাজার, বেঁচে রইলেন মাত্র একজন

১৭

ঢাকায় আসছেন টিআই চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ

১৮

আজ ২৪ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যে জেলায়

১৯

আজ সাত দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা

২০
X