শোকের মাস আগস্টে কোনো সমাবেশ বা কর্মসূচির অনুমোদন পাবে না বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একই সঙ্গে জামায়াতের কর্মসূচি মোকাবিলায় সক্রিয় থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে আগামী ১ আগস্ট ঢাকায় সমাবেশসহ তিন দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে দলটি। সংঘাত এড়িয়ে যে কোনো মূল্যে কর্মসূচি পালনে অনড় তারা। গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন কালবেলাকে বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে শোকের মাস আগস্টে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের কর্মসূচি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণকে মানসিকভাবে আহত করবে। তা ছাড়া জামায়াত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল নয়।
গত ২৪ জুলাই রাজধানীতে এক ঘরোয়া সংবাদ সম্মেলনে তিন দিনের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৮ জুলাই বিভাগীয় শহরে মিছিল, ৩০ জুলাই জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ১ আগস্ট ঢাকা মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। এসব কর্মসূচি সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দফায় দফায় সাংগঠনিক সভা, প্রস্তুতি বৈঠকসহ নানা প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। গত কয়েক দিনে দলটি বিভিন্ন বিভাগে সাংগঠনিক সভা, প্রস্তুতি সভা ও গতকাল কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সভা করেছে। গত সোমবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত।
জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলছেন, তারা যে কোনো মূল্যে ওই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে চান। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশ প্রশাসন বাধা দিলে তারা আগ বাড়িয়ে কোনো কিছু করবেন না। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, কোনো ধরনের সংঘাতে যাওয়া যাবে না। সবাইকে ধৈর্য ও কৌশলে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।
এদিকে, গতকাল বুধবার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এক সভা সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাসহ জামায়াতকে সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া, কর্মসূচিতে বাধা প্রদান এবং হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়।
পরে জামায়াতের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের অভিমত হচ্ছে যে, জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশ্বাসী একটি দল। জামায়াত গত ১০ জুন শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ পালন করে আবারও তা প্রমাণ করেছে। আগামীকাল ২৮ জুলাই মহানগরী ও ৩০ জুলাই জেলা সদরে মিছিল এবং ১ আগস্ট ঢাকা মহানগরীতে সমাবেশের যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, প্রশাসনের সহযোগিতার মাধ্যমে জামায়াত ঘোষিত সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। আরও বলা হয়, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো দলের পক্ষে কাজ না করে নিরপেক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছে। সেইসঙ্গে ঘোষিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে প্রশাসন ও দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছে এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
দলটির দুজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কালবেলাকে বলেন, আর মাত্র পাঁচ মাস পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ।
গতকাল রাজধানীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৯টি রাজনৈতিক দল সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। পর্যালোচনা শেষে কয়েকটি দলকে অনুমতি দেব। যারা অনুমতি পাবেন, রাজনৈতিক সমাবেশ করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্তব্য। আমি আপনাদের (গণমাধ্যমের) মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরোধ করব, ওয়ার্কিং ডেতে বিশাল বিশাল সমাবেশ করে ঢাকার লাখ লাখ মানুষকে থামিয়ে, রাস্তা আটকে রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে, ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিকল্পনা পরিবর্তন করে বন্ধের দিনে নিয়ে যান।’
তবে ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, শোকের মাস আগস্টে জামায়াতকে রাজধানীতে প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
মন্তব্য করুন