ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা এবং উসকানিমূলক অপপ্রচারের প্রতিবাদে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। গতকাল রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে হাইকমিশনের দুই কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয় বলে জানান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন।
বিএনপির পক্ষে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, কোনো দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও অপতথ্য বন্ধ করতে ভারত সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে মনে করে এসব সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, বাংলাদেশ পরস্পরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা, পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও সম্মান প্রদর্শনের ভিত্তিতে।
এর আগে ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে বিএনপির তিন সংগঠনের পূর্বঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ হিসেবে রাজধানীয় নয়াপল্টনে জড়ো হন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রার উদ্বোধনী বক্তব্য দেন দেশটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, প্রতিদিন ভারতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে দিল্লি থেকে কলকাতা পর্যন্ত এক ভয়ংকর মিথ্যা কথার বেষ্টনী তৈরি করে গোটা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাতে কোনো লাভ হবে না। রিজভী বলেন, ওরা বাংলাদেশের মানুষকে পছন্দ করে না, ওরা বাংলাদেশবিরোধী। ভুটান তাদের (ভারত) সঙ্গে নেই, নেপাল নেই, পাকিস্তান, শ্রীলংকা নেই, ছোট্ট একটি দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ তাদের সঙ্গে নেই। ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে না। কারণ ওরা মুখে যাই বলুক, ধর্মনিরপেক্ষ বলুক আর সেকুল্যার বলুক, মনের ভেতরে কট্টর হিন্দুত্ববাদী হিংসা ছাড়া ওদের মধ্যে কিছু নেই।
তিনি বলেন, ভিসা বন্ধ করে দিয়ে আপনারা বাংলাদেশের মানুষের উপকার করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ সেখানে গেলে ডলার খরচ হতো, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচারও হতো। আমাদের ডলারগুলো এখন সেখানে (ভারতে) যাবে না।
রিজভী বলেন, নানা অপপ্রচার, অপতথ্য দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন; কিন্তু লাভ তাতে কী। কলকাতার নিউমার্কেট বন্ধ, কলকাতার ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বন্ধ, কলকাতার হাসপাতালে রোগী নেই, ক্লিনিকগুলো বন্ধ। এতে আপনাদের আনন্দ হতে পারে। আমাদের এখানে কোনো ধরনের ভ্রুক্ষেপ নেই। ভারতে যায় মানুষ চিকিৎসা করার জন্য, টুকটাক কেনাকাটার জন্য। এটা এই কারণে যে, একটি বড় দেশ, ট্যুরিজম হয়, বেড়ানোর সুযোগ থাকে।
পদযাত্রায় পুলিশি বাধা: দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পদযাত্রা রামপুরা ব্রিজের কাছে পৌঁছলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। পরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল নেতাকর্মীদের সেখানে রেখে বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দেয়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন।
স্মারকলিপিতে যা বলা হয়েছে: ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে আশ্রয় দেওয়ায় স্মারকলিপিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের উগ্রবাদী নেতারা ও কিছু সংবাদমাধ্যম শেখ হাসিনাকে ফের পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একের পর এক অর্বাচীনের মতো কাজ করে যাচ্ছে। এতে স্পষ্ট হয়, ভারতের বন্ধুত্ব ছিল হাসিনার সঙ্গে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, হাসিনা এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। একদিকে তিনি বাংলাদেশের ভিন্ন দলমতের মানুষদের ঘরবাড়ি সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুকুম দিচ্ছেন। অন্যদিকে যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছেন। ভারতের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার এই অপচেষ্টা বাংলাদেশের জনগণ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না। এর মধ্যে গত ২ ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যে প্রমাণ হয় যে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করা হয়। সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তির ক্ষতি করা হয়। দুঃখজনকভাবে সেখানের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ছিল না। এটি কূটনৈতিক নিয়ম ও আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও ভারত সরকারের নীরবতায় বাংলাদেশের জনগণ হতাশ।
ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি প্রদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুবদলের সভাপতি বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের অশান্তিতে বিশ্বাসী নই। বাংলাদেশের মুসলমানরা শান্তিপ্রিয়। তারা অত্যন্ত ধৈর্যশীল। আমাদের কোনো প্রভু নেই। আমাদের বন্ধু আছে। আমরা আগ্রাসীতে বিশ্বাসী নই।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর শান্তি রক্ষা মিশন বিষয়ে জ্ঞান না থাকলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি ও বরখেলাপ বলে আমরা মনে করি।