বিদ্রোহী যোদ্ধাদের রাজধানী দামেস্কে প্রবেশের আগমুহূর্তে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনামলের অবসান হয়েছে। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে বাশারের ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী ও সন্তানরা এখন কোথায়, এ কৌতূহল ছিল অনেকের। তবে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছেন, রাশিয়ায় আশ্রয় পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যসহ বাশার মস্কোতে অবস্থান করছেন।
ক্রেমলিনের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে তাস জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদ এবং তার পরিবারকে ‘মানবিক বিবেচনা’র ভিত্তিতে রাশিয়ায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
বিদ্রোহী যোদ্ধারা রাজধানী দামেস্কে ঢোকার আগেই বাশার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে। তবে তিনি কোথায়, বেঁচে আছেন কি না—সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। এরই মধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর দিয়েছে, সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে। আর এতে বাশার নিহত হয়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিরিয়ার দুটি সূত্র থেকে রয়টার্স এমন তথ্য নিয়েছে। তবে সেসব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জানা গেল, বাশার তার দীর্ঘদিনের মিত্রদেশ রাশিয়াতেই আশ্রয় নিয়েছেন।
এর আগে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আব্দেল রহমান বলেছিলেন, বাশারের সম্ভাব্য প্রথম গন্তব্য হতে পারে রাশিয়া। কারণ, রাশিয়ার সামরিক, রাজনৈতিক আর কূটনৈতিক সহায়তার ওপর ভর করেই মূলত তিনি এতদিন ক্ষমতায় টিকে ছিলেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদের ব্রিটিশ-সিরীয় স্ত্রী আসমা আসাদ এবং তাদের তিন সন্তান আগেই সিরিয়া ছেড়েছেন। সন্তানদের নিয়ে আসমা গত নভেম্বরের শেষের দিকে রাশিয়ায় চলে যান। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট দপ্তরের বরাতে গত মে মাসে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ৪৮ বছর বয়সী আসমার লিউকেমিয়া (রক্ত বা অস্থিমজ্জার ক্যানসার) শনাক্ত হয়েছে। এ কারণে তিনি জনসম্মুখে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া থেকে বিরত আছেন। এর বছর পাঁচেক আগে আসমা স্তন ক্যান্সার থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার কথা জানিয়েছিলেন। আসমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। সেখানেই বাশার আল-আসাদের সঙ্গে তার পরিচয়। বিনিয়োগ ব্যাংকে চাকরি করতেন আসমা। পরে বাশারকে বিয়ে করে সিরিয়ায় চলে আসেন। ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। তখন থেকে সিরিয়ার নিহত সেনাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে ও দাতব্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন আসমা। কিন্তু বিদ্রোহীরা তার এ কাজ ভালো চোখে দেখেননি। স্বামীর সঙ্গে গত বছর রাষ্ট্রীয় সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান আসমা। ২০১১ সালের পর দেশের বাইরে এটাই ছিল তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর।