কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০১ এএম
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আজ পাখপাখালির দিন

পাখি দিবস
আজ পাখপাখালির দিন

গত ৩০ বছরে সারা বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় পাখির সংখ্যা কমেছে সবচেয়ে বেশি। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে বাংলাদেশে। পাখি গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশে কয়েকটি পাখির জাত বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরে কয়েকটি পাখির জাত একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ অবস্থায় আজ রোববার পালিত হবে পাখি দিবস। সরকারিভাবে স্বীকৃত না হলেও প্রতি বছর ৫ জানুয়ারি ব্যক্তি বা বিভিন্ন সংগঠন পর্যায়ে জাতীয় পাখি দিবস পালন করা হয়। মূলত ২০০২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৫ জানুয়ারি জাতীয় পাখি দিবস হিসেবে পালন করে। সেই অনুপ্রেরণা থেকে বাংলাদেশেও কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি উদ্যোগে ৫ জানুয়ারি পাখি দিবস পালন করে থাকে।

দিনটি প্রকৃতি ও পাখিপ্রেমীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মূলত পাখি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেই এই দিনটি উদযাপন করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের ২০ শতাংশেরও বেশি পাখি অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। সংখ্যার নিরিখে যা প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির সমান। কিন্তু বাংলাদেশে পাখি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে কোনো জরিপ নেই। পাখি গবেষকরা বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্নভাবে যেসব গবেষণার কাজ করেছে, ওইসব কাজের তথ্য নিয়েই পরবর্তী সময়ে নানা ফোরামে আলোচনা করা হয়।

গবেষকদের দাবি, বাংলাদেশ থেকে পাখি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। উন্নয়নকাজের আগে পরিবেশগত জরিপে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখাসহ পরিবেশ জরিপে এই খাতের বিশেষজ্ঞদের রাখার কথা বলেন তারা। না হলে আগামীতে অনেক উপকারী পাখি হারিয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, জলজ পাখির পাশাপাশি কমছে শহর ও গ্রামের বনাঞ্চলের নানা জাতের পাখি। অব্যাহত উন্নয়নের ফলে পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়া এবং কৃষিকাজে রাসায়নিক ও বিষ ব্যবহারের ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে পাখি। গত ১০ বছরে রাজধানীতে উপকারী পাখি কাকের সংখ্যা কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এ ছাড়া পাখির অভয়াশ্রম বলে খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরে গত ২২ বছরে ৫৯ শতাংশ পাখি কমে গেছে।

তারা জানান, ৩০ বছর আগে যেখানে একটি হাওর এলাকায় ৬ লাখ পাখি পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন কম-বেশি এক লাখ পাখি পাওয়া যায়। অনেক জলাশয়ে যেখানে একসময় লক্ষাধিক পাখি দেখা যেত, এখন সেখানে মাত্র ৪০-৫০টি পাখি পাওয়া যাচ্ছে।

তবে এদেশে প্রায় তিন যুগ ধরে উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারি হয়ে আসছে জানিয়ে পাখি ও বন্যপ্রাণী চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আ ন ম আমিনুর রহমান বলেন, সচরাচর নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে এই পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় ও হাওরাঞ্চলে প্রতি বছর জলচর পাখিশুমারি পরিচালিত হয়। জনশুমারির মতো পাখিশুমারিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচরাচর জানুয়ারি মাসজুড়ে বিশ্বব্যাপী একসঙ্গে পাখিশুমারি পরিচালিত হয়। শুমারির ফল থেকে জানা যায়, পাখি ও তার বিচরণ এলাকার ভালো অথবা খারাপ অবস্থা। পাখির প্রজননকাল শেষে পাখি পরিবারের নতুন অতিথিদের অবস্থাও জানা যায় এই শুমারি থেকে।

প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের (আইইউসিএন) সর্বশেষ পাখি নিয়ে জরিপ ২০১৫ অনুযায়ী, ওই সময়ের জরিপে বাংলাদেশে ৬৫০ প্রজাতির অস্তিত্ব খুঁজে পায় সংস্থাটি। পাখি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ জামান। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা, বর্তমানে দেশে ৭০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এ ৭০০ প্রজাতির পাখির মধ্যে ২২০ থেকে ২৩০ প্রজাতি হলো পরিযায়ী পাখি। বাকিগুলো দেশীয় পাখি।

অধ্যাপক ফিরোজ জামান বলেন, শিগগির পাখি নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি জাতীয় সার্ভে করা প্রয়োজন। এই কাজটার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের কাছে এখন যেসব তথ্য রয়েছে, তা আমার মতো গবেষকদের তথ্য। তিনি বলেন, এখন আশঙ্কাজনক হারে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে জাতগুলো বিপন্ন হয়ে ওঠছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ডেভেলপমেন্ট অ্যাকটিভিটি। উন্নয়ন কাজে নামকায়াস্তে পরিবেশ জরিপ বা ইআইএ করে। এই খাতে বাজেট থাকে না। এ ছাড়া যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

এই গবেষক উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে, এটা আমাদের উন্নয়নের জন্য ভালো একটি কাজ। অল্প সময়ে আমরা যাতায়াত করতে পারছি। কিন্তু এই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক গাছ কাটা হয়েছে, জলাশয় ভরাট হয়েছে। একশর বেশি প্রজাতি এখান থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। অনেক পাখি ও প্রাণী মারা গেছে। কিন্তু এখানে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের পরিবেশ জরিপ করা হলে, ভালো একটা সমাধান করা যেত। এ ছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে ইকোনমিক জোন করা হয়েছে। এগুলো করা হয়েছে জলাশয় (ওয়েট ল্যান্ড) ভরাট করে।

গত কয়েক বছর ধরে ইকো ট্যুরিজমের নামে পরিবেশ ধ্বংস করার মহাআয়োজন শুরু হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক জামান বলেন, এগুলোর নামে পিকনিক করছে, উচ্চস্বরে গান বাজানো হচ্ছে, বিভিন্নভাবে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। সুন্দরবন ও হাওর অঞ্চলগুলোয় গেলেই এসব দেখা যায়।

অন্যদিকে আইইউসিএন বলছে, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৯ প্রজাতির পাখি চিরতরে হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে লালমুখ দাগিডানা, সারস, ধূসর মেটে তিতির, বাদা তিতির, বাদি হাঁস, গোলাপি হাঁস, বড় হাড়গিলা বা মদনটাক, ধলাপেট বগ, সাদাফোঁটা গগন রেড, রাজশকুন, দাগি বুক টিয়াঠুঁটি, লালমাথা টিয়াঠুঁটি, গাছ আঁচড়া ও সবুজ ময়ূর। বাংলাদেশে যেসব প্রজাতির পাখি রয়েছে, তার মধ্যে জলচর পাখি রয়েছে ২০০ প্রজাতির।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসস্থান ও খাদ্য সংকট, অপরিকল্পিত নগরায়নসহ নানা কারণে কাকসহ অনেক প্রাণীই ঢাকা শহর থেকে বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক চক্র বা বাস্তুসংস্থান বিপন্ন হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মাত্র ১০ বছরে কাকের সঙ্গে অন্য পাখির সংখ্যাও কমে গেছে। এর মূল কারণ বড় গাছপালা কেটে আবাস্থল তৈরি হচ্ছে। কাক-চিল এসব পাখি বড় বড় পুরোনো গাছে বাসা তৈরি করে। কিন্তু এখন তা হারিয়ে গেছে। সে কারণে কমছে কাক কিংবা চিল জাতীয় পাখির সংখ্যা। কাক-চিল এসব পাখি ময়লা খায়। এখন ঢাকা শহর থেকে বর্জ্য সরিয়ে ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার কারণে শহরে কাক-চিল কম দেখা যাচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু, আহত ৫

খাদ্যনালির ক্যানসারের যে উপসর্গগুলোকে অবহেলা করবেন না

দিল্লিতে আফগানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিক নিষিদ্ধ

লক্ষ্মীপুরে মা-মেয়ে হত্যা, আটক সোহেল নিহতদের ‘আত্মীয়’

ইশরাকের হবু স্ত্রীর ছবি প্রকাশ

প্রেম ভাঙার গুঞ্জনে যা বললেন সাদিয়া

সাংবাদিক হায়াতকে কুপিয়ে হত্যায় সাতক্ষীরায় প্রতিবাদ

গর্ভাবস্থায় হাড় শক্ত রাখতে যা করবেন

গুম-খুনের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচার দাবি ডাকসুর

১১ বছর পর বিগব্যাশ মাতাবেন স্টার্ক

১০

চলতি বছর ৫৮০ অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ : ফায়ার সার্ভিস ডিজি

১১

বাগদান সারলেন বিএনপি নেতা ইশরাক, পাত্রী কে

১২

ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল বৃদ্ধ মায়ের

১৩

গাজা ছেড়ে আরেক দেশে ইসরায়েলের হামলা

১৪

মাছের মাথা কেন খাবেন ? জানুন ৭ উপকারিতা

১৫

সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য : উপদেষ্টা সাখাওয়াত 

১৬

জামায়াতের আমির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে, মনোনীত প্রার্থী যারা

১৭

রাজবাড়ী / সাত দিনে অর্ধকোটি টাকার জাল ধ্বংস, ২৭ জনের কারাদণ্ড

১৮

হংকং চায়না ম্যাচের আগে যে কথা হয়েছিল তামিম-হামজার

১৯

পুকুরপাড়ে পড়ে ছিল নারী গ্রাম পুলিশের মরদেহ

২০
X