কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নানা ঘটনার পর এনসিপি ছাড়লেন তিন নেতা

ফিরলেন গণঅধিকার পরিষদে
নানা ঘটনার পর এনসিপি ছাড়লেন তিন নেতা

নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তিন নেতা। তারা তিনজনই তাদের সাবেক দল গণঅধিকার পরিষদে ফিরে এসেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে আসন পাওয়ার প্রলোভনেই তারা নতুন দলে ভিড়েছিলেন। তবে দলে নিজেদের ‘সুবিধাজনক’ জায়গা না পেয়ে এবং ভুল বুঝতে পেরে ফের ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছেন বলে মনে করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতারা। যদিও প্রলোভনের বিষয়টি সব পক্ষ থেকেই অস্বীকার করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বরাবর পৃথক পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে পদত্যাগ করেন তিন নেতা। তারা হলেন, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তর অঞ্চল) হানিফ খান, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুজ জাহের ও আবু হানিফ। তারা তিনজনই পদত্যাগের কারণ হিসেবে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়েছেন।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নুরুল হকের দল গণঅধিকার পরিষদ ও দলটির ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের অন্তত ২০ জন নেতা এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন, আহ্বায়ক কমিটিতে তারা পদ পেয়েছেন। পদ পাওয়ার আগে নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন তারা। তাদের মধ্যে পদত্যাগ করা তিনজনই পরিষদের সর্বোচ্চ ফোরাম উচ্চতর পরিষদের সদস্য। তারা আহবায়ক কমিটিতে ভালো পদ পাওয়া এবং নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে পারার শর্তে দলে যোগ দেন। নিজ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এনসিপিতে যোগ দেওয়ায় বড় ধরনের সংকটে পড়ে গণঅধিকার পরিষদও। একদিকে চাপ বাড়তে থাকে নতুন দলে যোগ দেওয়া নেতাদের ওপর, অন্যদিকে এনসিপিতেও নিজেদের ভালো অবস্থান তৈরিতে বৈরী পরিবেশ বুঝতে পারেন। পরে তারা ফের গণঅধিকার পরিষদে ফিরতে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

তাদের এ সিদ্ধান্তে বিব্রত হয়েছেন এনসিপি এবং গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতারা। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক আরিফুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন নেতা আজকালকের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। আরিফুল ইসলামও গণঅধিকার পরিষদের সর্বোচ্চ ফোরাম উচ্চতর পরিষদের সদস্য। তবে এনসিপি নেতারা বলছেন, এতে নতুন পার্টিতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না।

পদত্যাগ করা হানিফ খান বলেন, আমি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছি। এর চেয়ে বেশি মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করা আবু হানিফ বলেন, এনসিপি বেটার কিছু হবে মনে করে আমি এই দলে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে গণঅধিকার পরিষদে থেকেই ভালো কাজ করতে পারব। তাই আমি গণঅধিকারে ফিরে যাচ্ছি।

নুরুল হক নুর অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন দলের উদ্যোক্তারা আমাদের দলের অনেককে তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা ও এমপি বানানোর অফার দিয়েছেন। এনসিপির নেতাদের পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কোনো উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রলোভন দেখিয়েছেন। এর কারণে আমাদের কয়েকজনের মধ্যে দ্বিধা ছিল।’

নুরুল দাবি করেন, তার দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফসহ কয়েকজনকে এভাবে বিভ্রান্ত ও ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে এনসিপিতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা ভুল বুঝতে পেরে গণঅধিকার পরিষদে ফিরে এসেছেন।

এদিকে গত রোববার একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে কথা বলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। তিনি বলেন, ‘নুরুল হক নুর নিজেই তার দল বিলুপ্ত করে আমাদের (এনসিপি) সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আমরা বলেছি, অবশ্যই আদর্শিকভাবে অনেক দিক থেকে আমাদের মিল আছে। কিন্তু আমরা প্রাথমিকভাবে কোনো একটা দল বিলুপ্ত করে আনতে চাইছি না। অনেক ধরনের সমালোচনা হতে পারে। ভবিষ্যতে আমরা একসঙ্গে এক উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে মুভ করতে পারি।’

হান্নানের এ বক্তব্যের জবাবে নুরুল বলেছেন, তিনি এনসিপিতে যোগ দিতে চাননি; বরং এনসিপির নেতাদের তিনি গণঅধিকার পরিষদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ এক নেতা কালবেলাকে বলেন, তাদের মূলত প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। তারাও ভাবছেন নতুন পার্টিতে সুবিধা করতে পারবেন, এমপি হতে পারবেন। বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষিতে তারা এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু এগুলো ভুল ধারণা। নতুন দলে এখান থেকে গিয়ে সুবিধাও করতে পারবে না। সবকিছু বুঝতে পেরে তারা আবার ফিরে এসেছেন।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে তাদের যোগদানের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসছে। তাদের ফিরে আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। বাকি যারা গেছে তারাও গণঅধিকার পরিষদে ফিরে আসবে।

তিনি আরও বলেন, গণঅধিকার পরিষদ রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল। শেখ হাসিনাই গণঅধিকার পরিষদকে ভাঙতে পারেনি। অন্য কেউ গণঅধিকার পরিষদকে ভাঙতে পারবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান কালবেলাকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্যই করতে চাই না।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালবেলাকে বলেন, তাদের পদত্যাগে এনসিপিতে কোনো প্রভাব পড়ছে না। আমরা বড় দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি। তাদের কাছে আগের দলের রাজনীতির চেয়ে আমাদের দলের রাজনীতি ভালো মনে হয়েছিল। এখন আবার তারা পদত্যাগ করেছেন। কেন, সেটা তারা ভালো বলতে পারেন।

তিনি বলেন, নুরুল হক নুর যে প্রলোভনের কথা বলেছেন, সেটি মিথ্যা কথা। কাউকে প্রলোভন দেখানোর প্রয়োজন আমাদের নেই। বরং আমরা অনেক যোগ্য ব্যক্তিকে আহ্বায়ক কমিটিতে জায়গা দিতে পারিনি। এখন তারা অন্য কোনো প্রলোভনে পড়ে গেছেন কি না সেটা জানি না। যারা পদত্যাগ করেছেন তারা ছাড়াও আমাদের পার্টিতে গণঅধিকার পরিষদের অনেকেই আছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর গাজায় আবারও ইসরায়েলি হামলা

জেহাদ স্মৃতিস্তম্ভে ছাত্রদলের শ্রদ্ধা

গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণ, সাতজন দগ্ধ

কোমর ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি

জুলাই সনদকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি : রিজভী

শান্তিতে নোবেল পাওয়া মাচাদোর রাজনৈতিক ইতিহাস

যে কারণে শান্তিতে নোবেল পেলেন মারিয়া

সাবেক নৌবাহিনী প্রধান সরওয়ার জাহান নিজাম আর নেই

বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ে সুখবর

কিউইদের বিপক্ষে টস হেরে বোলিংয়ে বাংলাদেশ

১০

ধানের শীষকে বিজয়ী করতে জনসাধারণ মুখিয়ে রয়েছে : ড. কিবরিয়া

১১

নিয়োগ দিচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, আজই আবেদন করুন

১২

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ নির্বাচন : মির্জা ফখরুল

১৩

পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসে চাকরির সুযোগ, সপ্তাহে দুদিন ছুটি

১৪

ফের মডেলের প্রেমে হার্দিক

১৫

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা

১৬

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে চাকরির সুযোগ

১৭

গুলশানে ডাক পেলেন বরিশাল বিএনপির যে ৩ নেতা

১৮

গাজীপুরে দিনে ভাঙছে ৩০ সংসার

১৯

কে জিতবেন নোবেল শান্তি পুরস্কার

২০
X