১৫ আগস্টের শোক দিবসের আলোচনা সভায় ‘বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ায় আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখতে প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া ওই দুজন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত না রাখলে ৪৮ ঘণ্টা পর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ সময় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সজলসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিচারপতিদের বক্তব্য বিচারপতি হিসেবে নেওয়া শপথের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সাধারণত কোনো রাজনৈতিক কর্মী যে ভাষায় তার দলীয় বক্তব্য প্রদান করেন, অনেক বিচারপতির বক্তব্যে তেমন একজন রাজনীতিবিদের বক্তব্যের প্রতিফলন আমরা লক্ষ করেছি। তাদের এই বক্তব্য কোনো বিচারেই বিচারক সুলভ নয়। যারা মানসিকভাবে নিজেদের রাজনীতিবিদ বলে বিবেচনা করেন, সেসব বিচারকের মাধ্যমে অতীতে কতটুকু ন্যায়বিচার সম্পন্ন হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। ভবিষ্যতেও তারা বিচারিক কার্য পরিচালনা করলে কী ধরনের বিচার করবেন তা বলাই বাহুল্য। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট তথা বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আরও বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে তৎকালীন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা একত্রে বিচার কাজ পরিচালনার অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান বিনা ভোটের সরকারের রোষানলে পড়ে বিচারপতি সিনহা দেশত্যাগ ও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। আমরা মনে করি, আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতি যেহেতু শপথ ভঙ্গের মাধ্যমে বিচার কাজ পরিচালনার আইনি ও নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন, তাই প্রধান বিচারপতি তাদের বিচারিক কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেন। বর্তমানে কথিত অজানা অভিযোগে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে পাঁচ বছরের অধিক সময় বিরত রাখা হয়েছে। আলটিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, গত ১৫ আগস্ট আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতির প্রদত্ত বক্তব্য নৈতিকতার প্রশ্নে কোনো অংশেই কম নয়। তাদের বক্তব্য সরাসরি সংবিধান প্রদত্ত শপথ ভঙ্গের দৃষ্টান্ত। কাজেই তাদের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির ন্যায়বিচারিক কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য আমরা প্রধান বিচারপতির প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। নয়তো আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর আমরা তাদের পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি পালন করব।
মন্তব্য করুন