ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মচারী মোজাম্মেল। সরকারি অফিসের হাজারো খতিয়ান, দলিল ও গুরুত্বপূর্ণ নথি দিয়ে নিজের ভাড়া করা মেসের কক্ষকে একরকম ‘মিনি অফিসে’ পরিণত করেছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, এসব সরকারি নথি ব্যবহার করে তিনি জমির মালিকদের সঙ্গে অনৈতিক আর্থিক লেনদেন করতেন। এসব কাজে তার ঘরকেই কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাত ১১টায় ঠাকুরগাঁও পৌরসভার হাজিপাড়া এলাকার একটি মেসে ওই কর্মচারীর কক্ষ থেকে প্রায় তিন হাজার খতিয়ান ও সরকারি ফাইল পাওয়া যায়।
সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান, তার বিছানার নিচে এবং ঘরের যত্রতত্র স্তূপাকারে রাখা হয়েছে এসব গুরুত্বপূর্ণ নথি, যা আইনত সরকারি রেকর্ডরুমে বা কোষাগারে সংরক্ষিত থাকার কথা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা ওই মেসে যান। এ সময় অভিযুক্ত কর্মচারীসহ আরও দুই ব্যক্তিকে তার কক্ষে আলাপচারিতারত অবস্থায় পাওয়া যায়।
ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, বিছানার ওপর ও নিচে বান্ডিল আকারে রাখা হয়েছে জমির খতিয়ান, আরএস খতিয়ানের ফাইল এবং বিভিন্ন দলিল। এসব নথির মাধ্যমে তিনি জমির নামজারি, রেকর্ড সংশোধনসহ বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার নামে অর্থ নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযানের মুখে অভিযুক্ত কর্মচারী প্রথমে হতভম্ব হয়ে যান। শত শত সরকারি নথি ব্যক্তিগত কক্ষে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো অফিসেরই সম্পদ। বৃষ্টির কারণে অফিসে নিয়ে যেতে পারিনি। হেড অফিস থেকে এনেছিলাম, কাল সকালেই অফিসে পৌঁছে দেব।’
তিনি স্বীকার করেন, এভাবে ব্যক্তিগত কক্ষে সরকারি নথি রাখাটা তার অন্যায় হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এগুলো রাখার কোনো অধিকার আমার নেই। আমার ভুল হয়েছে।’
তবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা তার পরিচিত এবং তারা সবজি ব্যবসা করেন। নিছক দেখা করার জন্যই তারা এসেছিলেন বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে, একজন সরকারি কর্মচারীর ব্যক্তিগত হেফাজতে বিপুল জমির দলিল ও খতিয়ানের মতো সংবেদনশীল নথি পাওয়ার ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি নথি এভাবে বাইরে থাকায় জালিয়াতি ও ভূমিদস্যুতার সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার সাইফুদ্দিন সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন।
কোনো কর্মচারীরই সরকারি নথি ব্যক্তিগত হেফাজতে রাখার এখতিয়ার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন