২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ৩০ জানুয়ারি বসে সংসদের প্রথম অধিবেশন। ফলে ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি এ সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেক্ষেত্রে ১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে ইসি। নভেম্বরের শুরুতেই তপশিল ঘোষণা হতে পারে। তার আগে আগামী মাসের শেষ দিকে বসতে পারে বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশন। সরকারের শেষ সময়ে সংসদে বিল পাসের হিড়িক পড়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শেষ হওয়া সংসদের ২৪তম অধিবেশনের ৯ কার্যদিবসে মোট ১৮টি বিল পাস করা হয়। গড়ে প্রতিদিন দুটি করে বিল পাস হয়, যা চলতি সংসদে রেকর্ড। এ অবস্থায় শেষ অধিবেশনে বাকি সব বিলও পাস করতে চান সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বর্তমান সংসদের গত ২৪টি অধিবেশনের ২৬৩ কার্যদিবসে মোট ১৪০টি আইন পাস করা হয়। সর্বশেষ অধিবেশনের ৯ দিনে রেকর্ডসংখ্যক ১৮টি আইন পাস হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ অধিবেশনে সরকারি-বেসরকারি ২৯টি বিল আসে। এর মধ্যে ১৮টি বিল পাস হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর দুটি, ৫ সেপ্টেম্বর দুটি, ৯ সেপ্টেম্বর দুটি, ১০ সেপ্টেম্বর দুটি, ১১ সেপ্টেম্বর দুটি, ১২ সেপ্টেম্বর তিনটি, ১৩ সেপ্টেম্বর তিনটি এবং ১৪ সেপ্টেম্বর দুটি বিল পাস হয়। এবারের অধিবেশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত সাইবার নিরাপত্তা বিল, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিল-২০২৩ এবং ভূমি-সংক্রান্ত আরও দুটি বিল পাস হয়। এ ছাড়া অধিবেশনে আরও ১৭টি বিল পরীক্ষার জন্য কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। পাঁচটি বিল অপেক্ষায় রয়েছে, যা আগামী অধিবেশনে পাস হবে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া সংসদের প্রথম অধিবেশনে মোট ২৬ কার্যদিবসে ৫টি আইন পাস হয়। এরপর দ্বিতীয় অধিবেশনের ৫ কার্যদিবসে ৩টি, তৃতীয় অধিবেশনে ২১ কার্যদিবসে ৭টি, চতুর্থ অধিবেশনে ৪ কার্যদিবসে ১টি, পঞ্চম অধিবেশনে ৫ কার্যদিবসে ৩টি, ষষ্ঠ অধিবেশনে ২৮ কার্যদিবসে ৭টি, সপ্তম অধিবেশনে (বিশেষ) এক কার্যদিবসে একটিও না, অষ্টম অধিবেশনে ৯ কার্যদিবসে ৫টি, নবম অধিবেশনে ৫ কার্যদিবসে ৬টি, দশম অধিবেশনে ১০ কার্যদিবসে ৯টি, একাদশ অধিবেশনে ১২ কার্যদিবসে ৬টি, দ্বাদশ অধিবেশনের ৩ দিনে একটিও না, ত্রয়োদশ অধিবেশনে ১২ দিনে ৭টি, চতুর্দশ অধিবেশনে ৭ দিনে ৯টি, পঞ্চদশ অধিবেশনে ৯ দিনে ৯টি, ষষ্ঠদশ অধিবেশনে ৫ দিনে ১টি, সপ্তদশ অধিবেশনে ৮ দিনে ৯টি, অষ্টাদশ অধিবেশনে ২০ দিনে ৪টি, উনিশতম অধিবেশনে ৫ দিনে ৩টি, বিশতম অধিবেশনে ৬ দিনে ৪টি, ২১তম অধিবেশনে ২৬ দিনে ১০টি, ২২তম অধিবেশনে (বিশেষ) ৫ দিনে একটিও না, ২৩তম অধিবেশনে ২২ দিনে ১৪টি এবং সর্বশেষ ২৪তম অধিবেশনে ৯ দিনে রেকর্ডসংখ্যক ১৮টি আইন পাস হয়।
সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচন খুব কাছাকাছি। আগামী মাসেই শেষ অধিবেশন বসবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ঘোষণাও দিয়েছেন। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রস্তাবিত বিলগুলো বেশি তোলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিল পাসে খানিকটা তড়িঘড়িও করা হচ্ছে। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও একাধিক বিলের আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু কালবেলাকে বলেন, সরকারের শেষ সময়ে বিল পাসের সংখ্যা বেশি হবে, এটা স্বাভাবিক। কারণ শেষের দিকে বিল একটু বেশি জমা পড়ে। আর শেষ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলো অবশ্যই পাস করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এসব বিল পাস হচ্ছে।
মন্তব্য করুন