

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ের পথে হাঁটছেন নৌকার প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বিএনপির প্রার্থীবিহীন এই নির্বাচনে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে রাত-দিন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে যাচ্ছেন। প্রচারেও এনেছেন নতুনত্ব। বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এবং একটি জরিপ সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য মিলেছে।
ইউরোপভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানুভেয়ারিং আর্কিটেকচারের (সীমা) জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছে, নিরপেক্ষ, অ্যান্টি পাওয়ার সেন্টিমেন্ট, ভাসমান ভোট, ফ্লোটিং বা বস্তির ভোট এবং সংখ্যালঘুদের ভোটে সিলেটে মেয়র প্রার্থী নির্ধারণ হবেন। দুমাস ধরে সংস্থাটি ওই জরিপ কার্যক্রম চালায়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডে মোট ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৭ জন ভোটারের মধ্যে কোন দলের ও গোষ্ঠীর কত ভোট, সে ধারণাও দিয়েছে সংস্থাটি। জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ওই সিটি করপোরেশনে সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে অন্তত ৫৩ হাজার ৩১৬ জন। তবে নিরপেক্ষ, অ্যান্টি পাওয়ার সেন্টিমেন্ট বা ভাসমান (সুইং) ভোট রয়েছে অন্তত ৮৭ হাজার।
সংখ্যালঘু ভোটারদের বাইরে আওয়ামী লীগের সরাসরি ভোটার রয়েছে ৪৫ হাজার, বিএনপির সরাসরি ৪০ হাজার, জামায়াতের ২৩ হাজার, জাতীয় পার্টির ১৭ হাজার, ইসলামী আন্দোলনের ১৫ হাজার, জাকের পার্টির তিন হাজার, পীরপন্থি (ফুলতলী, বরুনা ও গাছবাড়ি) ২০ হাজার, কওমিপন্থি ও অন্যদের অন্তত ২৫ হাজার ভোট রয়েছে। এর বাইরে ছোট ছোট দল মিলিয়ে আরও অন্তত ১৫ হাজার ভোট রয়েছে।
এ ছা্ড়া বস্তি বা ফ্লোটিং ভোট রয়েছে সবচেয়ে বেশি ৯০ হাজার, নিরপেক্ষ, অ্যান্টি পাওয়ার সেন্টিমেন্ট ভাসমান (সুইং) ভোট রয়েছে ৮৭ হাজার, পপুলার বা ইয়াং ভোট রয়েছে ৩৫ হাজার এবং প্রবাসী পরিবারের ভোট রয়েছে অন্তত ১৮ হাজারের মতো। এই ভোটই মেয়র প্রার্থীর বিজয় নির্ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আগামী বুধবার ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে চারজন দলীয় প্রার্থী। বাকি তিনজন স্বতন্ত্র। দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নৌকা প্রতীকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুল লাঙ্গলে এবং জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল আলম গোলাপ ফুল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু ঘোড়া প্রতীক, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন ক্রিকেট ব্যাট প্রতীক এবং মো. শাহজাহান মিয়া বাস গাড়ি প্রতীকে লড়ছেন। শুরুর দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান হাতপাখা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও দলটি কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মতো এখানেও বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
জরিপ প্রতিবেদনটিতে ধারণা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনে ৪৪ থেকে ৫১ ভাগ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৫০ থেকে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭০ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
সংস্থাটি তাদের জরিপে কোন প্রার্থী কত ভোট পেতে পারেন, সে বিষয়েও ধারণা দিয়েছে। তাতে দেখা যায়, নৌকা প্রার্থী ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৫০, লাঙ্গল ২৫ হাজার থেকে ৩৩ হাজার, জাকের পার্টি সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার, ঘোড়া প্রতীক সাড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার, ক্রিকেট ব্যাট প্রতীক ৭ হাজার থেকে সাড়ে ১১ হাজার, অপর এক স্বতন্ত্র প্রার্থী ৭ থেকে ১০ হাজার ভোট পেতে পারেন। হাতপাখা প্রতীক নির্বাচনে থাকলে ৮ থেকে ১৩ হাজার ভোট পেত বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে। তবে এই সংখ্যা ১০ ভাগ এদিক-সেদিক হতে পারে বলে বলছে সংস্থাটি।
সিলেটে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে কারা?
জরিপকারী সংস্থাটি দাবি করছে, যে কোনো প্রার্থীর বিজয়ের জন্য দরকার ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার ভোট। ভোটাধিকার প্রয়োগ করা ভোটাররা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে কারা কত ভোট দেবেন, সে বিষয়েও ধারণা দেওয়া হয়েছে জরিপ প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে অন্তত ৩৪ হাজার ভোট পাবেন নৌকার প্রার্থী। আওয়ামী লীগের দলীয় ভোট পাবেন সাড়ে ১৭ হাজার। পপুলার ভোট বা ইয়াং ভোট পাবেন ১২ হাজার, বস্তি বা ফ্লোটিং ভোট ৯০ হাজার, প্রবাসী পরিবারের ভোট সাড়ে ৪ হাজার, পীরপন্থিদের ভোট ৫ হাজার, কওমিপন্থি ও অন্যরা ৫ হাজার ভোট পাবেন বলে ওই জরিপে উঠে এসেছে। জামায়াত ও বিএনপি থেকে অন্তত ৫০০ ভোট পেতে পারেন নৌকার প্রার্থী। সব মিলিয়ে ৪৪ ভাগ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হতে পারেন।
জরিপ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ভোটারদের মধ্যে অন্তত সাড়ে ২২ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন; কিন্তু নৌকায় সাড়ে ১৭ হাজার ভোট দেওয়ার ধারণা দিলেও প্রায় ৫ হাজার ভোট কেন দেবেন না বা তারা অন্য কোনো প্রতীকে দেবেন সে ধারণা দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সিলেট জেলা সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন উৎসাহ তারা দেখতে পাচ্ছেন না। কত ভাগ ভোটার ভোট দিতে যান, সেটাই বড় বিষয়। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীরা হয়তো ভোটারদের কেন্দ্রে টানবেন।
তিনি বলেন, আমার ধারণা নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে তারা সবসময়ই ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ দাবি করে আসছেন। মানুষ যাতে তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোট দিতে পারেন, সেই বিষয়ে নজরদারি থাকবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রত্যেক নেতাকর্মী ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন, ভোটের জন্যে আবেদন করছেন, নিজেও ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত ৪২টি ওয়ার্ডের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাচ্ছেন। এতে চারদিকে মানুষের বিপুল সমর্থন পাচ্ছে নৌকা প্রতীক।
তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের রাত-দিনের পরিশ্রমে চারদিকে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় ২১ জুন নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হবে।
মন্তব্য করুন