গাজীপুর, খুলনা ও বরিশালের পর শেষ ধাপে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিলেট ও রাজশাহী সিটির ভোট। বাকি তিনটির মতো এ দুই সিটি নির্বাচনেও ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে। কেন্দ্রে ভোট পরিস্থিতি এবারও সিসি ক্যামেরায় দেখবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা। এর অংশ হিসেবে ভোট গ্রহণের ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনের উপকরণ কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেট নগরীর উপশহরে আবুল মাল আব্দুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচনী উপকরণ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আজ সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু করবেন প্রিসাইডিং অফিসাররা। অন্যদিকে, রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে রিটার্নিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটের সরঞ্জাম পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করেন। দুই সিটির ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসাররা নির্বাচনী সরঞ্জাম বুঝে নেন। এরপর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সেগুলো কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদির গণমাধ্যমকে জানান, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচনের নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার এবং আর্মড পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুরো নির্বাচনী এলাকায় সাতজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ৩ হাজার ৬১৪ কর্মকর্তা। ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ইভিএম মেশিন থাকছে ১ হাজার ৭৩০টি।
সিলেট সিটি নির্বাচন : এ নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৪২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭৩ এবং ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ নগরীতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৪টি। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না।
এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম (বাবুল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মাহমুদুল হাসান (বর্জন করেছেন), জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা, শাহ জাহান মিয়া, ছালাহ উদ্দিন ও আবদুল হানিফ।
এ সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নগরীতে আড়াই হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য মাঠে আছে বলে জানিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন কমিশনার ইলিয়াছ শরিফ বলেন, ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪২টি ওয়ার্ডে ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। থাকবেন প্রয়োজনীয়-সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও। তিনি জানান, প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশের ৪২টি মোবাইল টিম, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে ১৪টি স্ট্রাইকিং টিম এবং ছয়টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং টিম থাকবে। পাশাপাশি র্যাবের মোট ২২টি টিম ও ১০ প্লাটুন বিজিবির টহল থাকবে।
রাজশাহী সিটি নির্বাচন : এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুরশিদ আলম (বর্জন করেছেন), জাকের পার্টির এ কে এম আনোয়ার হোসেন ও জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন। এ ছাড়া ৩০টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে ভোটার আছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে নতুন ৩০ হাজার ১৫৭ জন ভোটার এবার প্রথমবারের মতো এ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে গতকাল সকালে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের ব্রিফিং শেষে কমিশনার আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ১৫৫টি কেন্দ্রে ভোট হবে। এর মধ্যে ১৪৮টি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বিশৃঙ্খলা বরদাশত করবে করা হবে না। ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন ২৫০ জন র্যাব ও বিজিবির ১০ প্লাটুন সদস্য। এ ছাড়া নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ৩ হাজার ৫১৪ জন পুলিশ, ১ হাজার ৯৩৫ আনসার সদস্য। থাকবেন ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ইসির ১০ পর্যবেক্ষক।
নৌকার প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। তবে বিএনপি-জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে আরও ভালো হতো।
এ দুই সিটি নির্বাচন ঘিরে গতকাল বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোট ৪ হাজার ১৪০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রাজশাহীতে ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৮৬০ জন এবং সিলেটে মোট ১৯০টি ভোটকেন্দ্রে ২ হাজার ২৮০ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন