শেখ হারুন
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৪১ এএম
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০১:১৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রকল্প শেষে জমা হয়নি ৪০০ গাড়ি, ৬৯টির হদিস নেই

আইএমইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদন
প্রকল্প শেষে জমা হয়নি ৪০০ গাড়ি, ৬৯টির হদিস নেই

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এর ৪০০ গাড়ি সরকারি পরিবহন পুলে জমা দেয়নি তিনটি মন্ত্রণালয়। আবার ৬৯টি গাড়ির হদিসও পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সমাপ্ত বিদ্যুৎ, দুর্যোগ ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের এমন চিত্র তুলে ধরেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

এ বিষয়ে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন দৈনিক কালবেলাকে বলেন, ‘প্রকল্পে ব্যবহৃত গাড়িগুলো পরিবহন পুলে জমা দেওয়ার জন্য বারবার বলা হলেও ঠিকমতো জমা হচ্ছে না। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পরিবহন পুলের কমিশনারকে নিয়ে একটি সভা করা

হবে। সেই সভায় গাড়িগুলো কেন জমা হয়নি, তা জানতে চাওয়া হবে।’

সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর কালবেলাকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে গাড়ি পুলে জমা দিতে হয়।’

এক বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কেউ গাড়ি জমা দিতে চায় না। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর গাড়িগুলো জমা দেওয়ার দায়িত্ব যাদের, তারা জমা দিলে আমি জমা নিই। গত এক বছরে দু-তিনটি আধাভাঙা মাইক্রোবাস পেয়েছি।’

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকল্প শেষ হলেও গাড়ি জমা না দেওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিভাগের। চার বছর হয়ে গেলেও এই বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কেনা ৪৭টি গাড়ির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের ১২টি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ১০টি গাড়ির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব গাড়ি কিনতে খরচ করা হয়েছিল প্রায় ৩২ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘যেসব সংস্থা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছে, গাড়ির বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে যতটুকু জানি, বর্তমানে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকায় আগের প্রকল্পের অনেক গাড়ি নতুন প্রকল্পে ব্যবহার করতে হচ্ছে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে বিভিন্ন সংস্থার সমাপ্ত প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের আট সিটি করপোরেশন এলাকায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ৯টি জিপ এবং ৭টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনা হয়। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুনে শেষ হলেও এখনো গাড়িগুলো পরিবহন পুলে জমা দেওয়া হয়নি। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গাড়িগুলো সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য দপ্তরে সরবরাহ করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের পটিয়ায় পিডিবির ‘শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় চারটি জিপ এবং চারটি পিকআপ কেনা হয়। চার বছরে জমা হয়েছে একটি জিপ এবং একটি পিকআপ।

মুন্সীগঞ্জ জেলায় পিডিবির ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের’ একটি পিকআপ এবং একটি মোটরসাইকেল কোথায় ব্যবহার হচ্ছে, তার তথ্য নেই। একই অবস্থা আশুগঞ্জ ভুলতা ৪০০ কেবি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের গাড়ির।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) একটি প্রকল্পের আওতায় ১০টি গাড়ি কেনা হয়। বর্তমানে একটি পিকআপ অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকিগুলো পিজিসিবির প্রধান কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে।

‘পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ খুলনা বিভাগীয় কার্যক্রম-২’ শীর্ষক প্রকল্পে কয়েকটি জিপ, পিকআপ ও মোটরসাইকেল কেনা হয়। চার বছর আগে সেই প্রকল্প শেষ হলেও গাড়ি সম্পর্কিত কোনো তথ্য দেয়নি বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় ‘ইনস্টলেশন অব ৭.৪ মেগাওয়াট সোলার ফটোভোল্টেজ পিভি গ্রিড কানেক্টেড পাওয়ার জেনারেশন প্লান্ট অ্যাট কাপ্তাই’ প্রকল্পের একটি জিপ ও একটি ডাবল কেবিন পিকআপ এখনো জমা হয়নি।

‘কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড এক্সপানশন অব ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক অব নর্থ অ্যান্ড সাউথ জোন আন্ডার ডিপিডিসি’ শীর্ষক প্রকল্পে একটি জিপ এবং একটি পিকআপ কেনা হয়। জিপ পুলে জমা দেওয়া হলেও পিকআপটির তথ্য নেই।

‘পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ বরিশাল বিভাগীয় কার্যক্রম-২’ প্রকল্পের একটি জিপ, দুটি ডাবল কেবিন পিকআপ এবং সাতটি মোটরসাইকেলের তথ্য জানা যায়নি।

‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সংস্কার’ প্রকল্পের আওতায় দুটি জিপ এবং দুটি মাইক্রোবাস কেনা হয়। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর গাড়িগুলো কোথায়, কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে, তার কোনো তথ্য দিতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

রেলওয়ের ‘লাকসাম-চিনকী আস্তানার মধ্যে ডাবল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্পে দুটি জিপ এবং তিনটি পিকআপ কেনা হয়। গাড়িগুলোর তথ্য পায়নি আইএমইডি।

‘চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় একটি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনা হয়। প্রকল্প শেষে পরিবহন পুলে জমা না দিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে গাড়িটি বাংলাদেশ রেলওয়েতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘গ্রামীণ রাস্তায় কমবেশি ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ১৮টি জিপ, দুটি মাইক্রোবাস এবং ৩৩৭টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছিল। এর মধ্যে ৮টি জিপ এবং দুটি মাইক্রোবাসের হদিস নেই। ১০টি জিপ জেলা এবং মোটরসাইকেলগুলো উপজেলা পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের ৩৪৭টি গাড়ি পরিবহন পুলে জমা দেওয়া হয়নি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আরেকটি প্রকল্পে কেনা ছয়টি জিপ এবং একটি পিকআপ কাজ শেষে অন্য প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

পরিবহন কমিশনার আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘গাড়ি অন্য কোথাও ব্যবহার করতে দেওয়ার ক্ষমতা কোনো প্রকল্প পরিচালক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই। প্রকল্প অনুমোদনের সময় সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকলে সমজাতীয় প্রকল্পেও এভাবে গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ নেই।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আফ্রিদির বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি, উকিল খুঁজছেন স্বপন

মুন্সিগঞ্জে ‘গত আগস্টে লুট করা অস্ত্র’ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা

গরিবের স্বপ্নেই থাকে ইলিশ

কেউ ছাই দেওয়া হাত থেকে বের হতে পারবে না : উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন

বাংলাদেশে তিন বছরে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে

রুট ১৩ হাজার রান ছুঁতেই মুখ খুললেন শচীন

‘উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর হামলা হয়নি, কনস্যুলেট অফিস ভাঙচুর হয়েছে'

১৫০ টাকায় দেখা যাবে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ

সাব্বিরকে পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ বিসিবির আকুর

জিয়ার সমাধিতে ডা. সাবরিনার শ্রদ্ধা, যুবদল সভাপতির ক্ষোভ

১০

শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিতর্ক, অর্থপাচার বিরোধী অভিযানে চাপ

১১

অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া মারা গেছেন

১২

ঢাকা শিশু হাসপাতাল শাখা ড্যাবের নতুন দায়িত্বে ডা. ফারুক

১৩

এনসিপির আরও চার নেতার পদত্যাগ 

১৪

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিসের শ্বশুর লুৎফর রহমান

১৫

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিধিমালা প্রকাশ

১৬

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

১৭

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

১৮

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

১৯

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

২০
X