রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৪৯ এএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপি আন্দোলন জমাতে পারছে না

নামকাওয়াস্তে পালিত হচ্ছে কর্মসূচি
বিএনপির লোগো
বিএনপির লোগো

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তপশিল বাতিলের দাবিও। দাবি আদায় করেই ভোটে যেতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে তারা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছে। ঝটিকা মিছিল ও বিক্ষিপ্ত পিকেটিংয়ে কর্মসূচি পালন ছাড়া আন্দোলন জমাতে পারছে না দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের অভিমত, চলমান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর বিএনপি কার্যত কোনো চাপই সৃষ্টি করতে পারছে না। সামনে শক্তভাবে কর্মসূচি পালন করতে না পারলে আন্দোলনকে জয়ের বন্দরে পৌঁছানোও সম্ভবপর হবে না। তপশিল অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হয়ে যাবে, আওয়ামী লীগও টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করবে। তবে গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেভাবে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, তাতে সন্তুষ্ট বিএনপি। নির্বাচনী ট্রেন গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চললেও দলটির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের হতাশ না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশ্বস্ত করা হয়েছে, ধারাবাহিক আন্দোলন এবং অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নস্যাৎ করতে সরকার গ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, আগামীতে এই আন্দোলন আরও ত্বরান্বিত ও বেগবান হবে এবং সরকারের পতন ঘটবে।

গত ২৯ অক্টোবর থেকে এক মাসের কর্মসূচি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকায় ‘ঝটিকা কৌশলে’ বিক্ষোভ মিছিলের মধ্য দিয়ে হরতাল-অবরোধ সফল করার চেষ্টা করছে বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি ৫৮৪ সদস্যবিশিষ্ট হলেও হাতেগোনা ১৫-২০ জন নেতাকে কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে। আর ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ৩-৪টির অল্প কিছু নেতা মাঠে সক্রিয় আছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে রুহুল কবির রিজভী, ডা. রফিকুল ইসলাম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, আকরামুল হাসান, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, হাসান মামুনসহ আরও কয়েকজন হরতাল-অবরোধের সমর্থনে রাজপথে ঝটিকা মিছিল করেন। এ ছাড়া ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক ও সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরীও মাঠে নামেন। তাদের মধ্যে রিজভী, ডা. রফিকুল ইসলাম, শ্রাবণ এবং শ্যামলকে কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি তৎপর দেখা গেছে। অঙ্গসংগঠনের মধ্যে রাজপথে সবচেয়ে সক্রিয় দেখা গেছে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে। এর বাইরে মৎস্যজীবী দল এবং মহিলা দলের গুটিকয়েক নেতাকে কয়েকটি কর্মসূচিতে দেখা গেছে। তবে কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির অংশগ্রহণ একেবারেই সীমিত। দুই মহানগরে ৫০টি থানা কমিটি থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটির নেতারা সক্রিয় রয়েছেন। আর বিক্ষোভ মিছিলে হাতেগোনা যে কজনকে মাঠে সক্রিয় দেখা গেছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই পদ-পদবিহীন।

গ্রেপ্তার এড়াতে হরতাল-অবরোধের সমর্থনে বিএনপি নেতাকর্মীরা মূলত ঝটিকা মিছিল করছেন। পরিস্থিতি বুঝে তুলনামূলক নিরাপদ সময়ে বিশেষ করে ভোরের দিকে ১০-১৫ নেতাকর্মী জড়ো হয়ে মিছিল করেন। পিকেটিংয়ের ক্ষেত্রেও নেই তেমন কোনো তৎপরতা। কোথাও কোথাও ঝটিকা মিছিল বা পিকেটিং থাকলেও তাতে খুব বেশি নেতাকর্মী সমবেত হন না। ঢাকার বাইরেও একই কৌশলে অর্থাৎ ঝটিকা মিছিল ও বিক্ষিপ্ত পিকেটিংয়ের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, কিন্তু তা জোরালো নয়। এর মধ্য দিয়ে দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ফুটে উঠেছে।

এদিকে কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতাকর্মীদের সমবেত হয়ে বড় পরিসরে রাজপথে না নামা এবং এই ‘ঝটিকা কৌশল’-এর মিছিল নিয়ে তৃণমূলে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। তাদের প্রত্যাশা ছিল, কেন্দ্রীয় নেতারা বেশি সংখ্যায় মাঠে নামবেন এবং রাজপথে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করবেন; কিন্তু কর্মসূচিতে তাদের প্রত্যাশিত উপস্থিতি না থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ। তারা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন হলেও রাজধানী ঢাকায় শক্তভাবে কর্মসূচি না হওয়ায় তখন আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। এবারও ঢাকায় জোরালো আন্দোলন না হলে এবং নেতাকর্মীরা ব্যাপক হারে রাজপথে না নামলে কর্মসূচি সফল হওয়া কঠিন।

জানা গেছে, একদফার চলমান আন্দোলনকে বেগবান করতে যুগপতের শরিকদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বিএনপিকে বর্তমান ‘ঝটিকা কৌশল’ থেকে বেরিয়ে এসে সংগঠিত হয়ে মাঠে নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিএনপিও কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে দলের কর্মসূচি মনিটরিং করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়িয়ে আন্দোলন জমাতে বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। এমনকি বহিষ্কৃত নেতাদেরও ফোন দেওয়া হচ্ছে। মাঠে থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে ভবিষ্যতে দলে মূল্যায়নের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। যেখানে ঠিকভাবে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না, এমন অনেক জেলার নেতাদের ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি, কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়েনি।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম মিত্র গণঅধিকার পরিষদ। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে দলটির একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, শুধু বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না, জনগণকে নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। এই আন্দোলনে পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই, রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।

বিএনপি ও যুগপতের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বিএনপির কারাবন্দি, গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীর স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় একটি সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরাসরি দলের পক্ষ থেকে না হয়ে অন্য সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হতে পারে। এর আগে ৮ অথবা ৯ ডিসেম্বর যুগপৎ এবং যুগপতের বাইরে আন্দোলনরত সব বিরোধী দলকে নিয়ে ঢাকায় গণমিছিলের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। ওইদিন একই সময়ে নিজ নিজ দল বা জোটের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হবে। আজকালের মধ্যে এই কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। বিরোধী দলগুলো যে সরকারের একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, দেশে-বিদেশে সেই বার্তা দিতে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া বিকল্প এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আত্মগোপনে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্যে আসতে চান। এ ছাড়া আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় জনসম্পৃক্ত নানা কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শাহবাগ অবরোধ বুয়েট শিক্ষার্থীদের 

সাদাপাথর পরিদর্শনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত কমিটি

যেসব দেশে বিয়ে করলেই নাগরিকত্ব পেতে পারেন আপনিও

‘মামাতো ভাইকে দিয়ে যুবদল নেতাকে খুন করান স্ত্রী’

জার্মান যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত 

জমি নিয়ে বিরোধ, প্রতিপক্ষের হামলায় বাবা-ছেলে খুন

নিউইয়র্কে কনস্যুলেটের ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে চিঠি

‘শেষবার মানিক আমাকে মা বলে ডেকেছিল’

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ 

অনলাইনে যেভাবে কাটবেন বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজের টিকিট

১০

পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট?

১১

প্লট দুর্নীতি / শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য শুরু

১২

ভাসমান বীজতলা তৈরিতে সফল খুলনার রোকেয়া

১৩

ব্রাজিল থেকে ১২০ টাকায় গরুর মাংস আমদানির খবর ভিত্তিহীন

১৪

ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন : এনবিআর চেয়ারম্যান

১৫

ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি যেদিন

১৬

শপথ নিলেন হাইকোর্টের ২৫ বিচারপতি

১৭

সাকিবের প্রিয় ‘শিকারের’ তালিকায় তামিম, দেখে নিন পুরো তালিকা

১৮

‘ভয়ংকর আফ্রিদির’ মুখোশ খুললেন তানভীর রাহী

১৯

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শুরু

২০
X