নির্বাচনে কারা ভোট দিয়েছে বা দেয়নি, তা না দেখে জনপ্রতিনিধিদের সবার জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে খুলনা, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত তিন মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
এ অনুষ্ঠানে শপথ নেন খুলনা সিটি করপোরেশনের তালুকদার আব্দুল খালেক, বরিশালের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) এবং গাজীপুরের জায়েদা খাতুন। পরে একই স্থানে আলাদা এক অনুষ্ঠানে শপথ নেন রাজশাহীর এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান।
মেয়রদের শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর কাউন্সিলরদের পড়ান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম।
শপথ অনুষ্ঠানে বক্তব্যে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আমরা কিন্তু এলাকা দেখে কাজ করি না, কে ভোট দিল, কে দিল না, সেটা নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য আমাদের কাজ। আমাদের (জনপ্রতিনিধিদের) সেভাবে কাজ করতে হবে।’
সরকারের নানা প্রকল্প তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি, ৩০ প্রকারের ওষুধ দিচ্ছি, ইনসুলিন দেওয়া শুরু করেছি। এটা কিন্তু সবার জন্য, শুধু আওয়ামী লীগের লোক পাবে, অন্য দলের লোক পাবে না, তা কিন্তু নয়—এটা সব জনগণের জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যা করি জনগণের জন্য করি, জনগণের কল্যাণে করি, সেটা আপনারা নিশ্চয়ই এতদিনে বুঝতে পেরেছেন। আমাদের সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের কল্যাণ করা।’
জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে জনগণ আপনাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আপনারা জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন। আমি চাই জনগণের সেবক হিসেবে আপনারা সবসময় নিজ নিজ এলাকায় কাজ করবেন।’
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে দলমত নির্বিশেষে সব জনপ্রতিনিধিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা, অর্থনীতি, কৃষিসহ সবকিছুই স্মার্ট হবে। তাই দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে কাজ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে এবং বিশ্ব বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। সব প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নি-সহিংসতার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে এমন কোনো ভয়ংকর পরিস্থিতি আমরা দেখতে চাই না।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে। ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত গত সাড়ে ১৪ বছরে সরকার বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার পাশাপাশি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিলেন।’
নিজের রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে, তারা যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে, দুবেলা দুমুঠো পেট ভরে খেতে পারে, সবাই যেন উন্নত জীবন পায়—সেটাই আমাদের কাম্য।’
নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিজ নিজ এলাকায় যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি তাদের এলাকার বাড়িঘর ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখা এবং জমা পানি থেকে মুক্ত রেখে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করতে বলেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
মন্তব্য করুন