দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘শেষ মুহূর্তের মেসেজ’, ‘আগের রাতের মেসেজ’ ও ‘চূড়ান্ত মেসেজ’ নামে কোনো মেসেজ আমলে না নিতে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ বার্তা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা। কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানো বার্তাটি চূড়ান্ত ধরে নিয়ে ‘অন্য বা ভিন্ন’ কোনো মেসেজ আমলে না নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (রিটার্নিং কর্মকর্তা), ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার, ইউএনও (সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা) এবং তাদের অধীন কর্মকর্তাদের এ মেসেজ পাঠানো হয়। বার্তাটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রাশেদা নিজেই পাঠিয়েছেন। অন্য কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন তার একান্ত সচিব হাবিবা আক্তার লাবণ্য।
মেসেজ পাঠানোর বিষয়ে লাবণ্য কালবেলাকে বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্যই স্যার (রাশেদা) কর্মকর্তাদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। মেসেজটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছে।
মেসেজে ইসি রাশেদা লিখেছেন, ‘আজকের এই কমন বার্তাটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণের জ্ঞাতার্থে এবং কার্যার্থে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ ও একমাত্র বার্তা।’ মেসেজে কর্মকর্তাদের ৮টি নির্দেশনা দেন তিনি। এগুলো হলো—১. সব প্রার্থীকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। যে কোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু, পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। এজন্য তাৎক্ষণিকভাবে যেখানে যা করণীয়, তা করতে হবে; যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে হবে। সামর্থ্যের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। কোনো সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। সর্বোপরি ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে রকম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ২. সব প্রার্থীর এজেন্টকে ভোটকক্ষে উপস্থিত হয়ে দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও প্রয়োগকারী সব সংস্থার সমন্বয়ে এমন পরিবেশ সৃষ্টি ও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভোটাররা মনে করেন প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে এবং ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ৩. ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভোট গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। যত কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করা প্রয়োজন ততটাই করতে হবে। বিষয়টি ও সার্বিক কেন্দ্র পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনকে জানাতে হবে। ৪. কোনো কেন্দ্রে জাল ভোট, প্রক্সি ভোট, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ইত্যাদি হলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের গৃহীত ভোট গণনার অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. পক্ষপাতমূলক আচরণ বা কার্যকলাপ বা ভূমিকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এরূপ আচরণ প্রমাণিত হলে এর দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে। কোনো প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ বা নির্বাচনী অপরাধ করলে তাৎক্ষণিকভাবে উপযুক্ত ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৬. অনিয়মের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের অভিযোগ উত্থাপিত হলে কমিশন সে ভোটের ফল গেজেট না করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবে। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে কমিশন ওই ভোট বাতিল করবে। সে ক্ষেত্রে কমিশন পুনরায় ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করবে এবং দায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ৭. কোনো গুজবে দ্বিধাগ্রস্ত হবেন না। যদি কোনো গুজব বা বার্তা বা সংবাদ আপনাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সে ক্ষেত্রে দ্বিধাহীন চিত্তে ও নিঃসংকোচে আমাকে (ইসি রাশেদা) সরাসরি ফোন করবেন। প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেবেন। ৮. মনে রাখতে হবে ‘শেষ মুহূর্তের মেসেজ’, ‘আগের রাতের মেসেজ’, ‘চূড়ান্ত মেসেজ’ ইত্যাদি বলতে কিছু নেই। এই মেসেজই সংশ্লিষ্ট সবার জন্য একমাত্র ও চূড়ান্ত মেসেজ। অন্য বা ভিন্ন কোনো মেসেজ আমলে নেবেন না।