কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৩ এএম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছাত্রলীগকে থামাবে কে

ক্ষুণ্ন হচ্ছে সুনাম
ছাত্রলীগকে থামাবে কে

ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, ছিনতাই, শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা, তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে মারামারি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা—এমন কোনো অপরাধ নেই, যাতে জড়িত হচ্ছেন না ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসব অপরাধে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হচ্ছেন অনেকে। ফৌজদারি মামলাও হচ্ছে অনেকের নামে। কখনো বা কারাগারেও যেতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। তা সত্ত্বেও থামানো যাচ্ছে না ছাত্রলীগকে; বরং দিনে দিনে ছাত্রলীগ যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা একের পর এক অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। গ্রুপিংয়ের নামে নিজেরা সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা তৈরি করছেন। এসব কারণে ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আর শেষ পর্যন্ত সব দায় গিয়ে পড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাঁধে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণের পেছনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরও মদদ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এলাকায় নিজের দাপট প্রমাণ করতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত অপরাধের বিচার না হওয়ার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।

ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী কোথাও কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তার পরও অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কমিটি না হওয়া, অযোগ্যদের নেতৃত্বে বসিয়ে দেওয়ার কারণে ছাত্রলীগের পদপদবি ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অনেকে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছেন। কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইর মতো অপরাধে জড়াচ্ছেন।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান কালবেলাকে বলেন, ‘এতবড় সংগঠনের নেতাকর্মী সংখ্যাও প্রায় ৫০ লাখ। কিছু ব্যত্যয় ও অপরাধ সংঘটিত হয়। আমরা কখনো সেগুলোকে প্রশ্রয় দিই না। কোথাও সামান্যতম বিচ্যুতি ঘটলেই জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। অপরাধ অপরাধই, অপরাধীর সাংগঠনিক পরিচয় যা-ই হোক, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

জানা গেছে, গত শনিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে হলে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর সিদ্দিকী, হাসানুজ্জামান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসানের বিরুদ্ধে। ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগ ওঠে ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত মামুনুর রশিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরাদের বিরুদ্ধে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হলের বিভিন্ন কক্ষে টর্চার সেল স্থাপনের মাধ্যমে মাদক কারবার, আটকে রেখে মারধর করে চাঁদা ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে ১৩ জানুয়ারি বাগেরহাটের দুই কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে ফকিরহাট সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল সরদার ও তার কর্মী মেহেদী হাসান।

এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে স্থায়ী বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কার, পদ থেকে অব্যাহতি, কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ কালবেলাকে বলেন, ‘ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেককে বহিষ্কারও করা হয়েছে।’

এ ছাড়া ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, ইসলামী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন। এতে অনেকে আহত হন। ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাসগুলোতে অস্থিরতা তৈরি হয়।

এর মধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি চাঁদাবাজি, লুটপাট ও মারামারির মামলায় গ্রেপ্তার হন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী তানজিদ মঞ্জু।

গত শনিবার সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম ডালিম ও তার সহযোগী শামীম মোল্লা মাতাল অবস্থায় কলেজের আক্কাসুর রহমান আঁখি হলের সামনে সংগঠনের কয়েকজন নেতার ওপর রড ও চাপাতি দিয়ে হামলা করেন।

চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের কর্মী-সমর্থকদের হামলায় আহত হন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সৈয়দ মোস্তফা সাদিক রিজভী।

গতকাল বুধবার ফরিদপুরের সালথায় মারামারির মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

গত সোমবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিভাগভিত্তিক গ্রুপ বিজয়ের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে লিপ্ত গ্রুপ দুটির নাম ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) এবং চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারস (সিএফসি)। এ সময় উভয়পক্ষকেই দেশীয় অস্ত্রসহ মহড়া দিতে দেখা যায়।

গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে চারজনকে বহিষ্কারও করে ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃতরা হলেন মাশফিউর রহমান, ফিরোজ আলম অপি, আব্দুল্লাহ আল মারুফ এবং নিঝুম ইফতার।

খাবারের পাত্রের হাতধোয়া পানি পড়ে যাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই নেতার নেতৃত্বে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

গত ৩১ জানুয়ারি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর দুর্গাপাশা ইউনিয়নের ডিজিএল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষিকা সাজেদা সাজুকে লাঞ্ছিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক মাসুদ রানা।

গত ১৪ জানুয়ারি রাতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২১ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গত সোমবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুব্রত মণ্ডলের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

এর আগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রুদ্রনীল সিংহসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গত ২৯ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হুদা শুভর বিরুদ্ধে শাবির শাখা ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমানের সমর্থক শিপন হাসানকে মেরে আহত করার অভিযোগ ওঠে।

সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার ন্যূনতম সুযোগ নেই। প্রতিটি ঘটনা অভ্যন্তরীণ জবাবদিহির আওতায় আনা হয়। জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেই সাংগঠনিক শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অন্যায় কাজে জড়িত হওয়ার অধিকার কারও নেই। তবু ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক কিছু উপাদান ও প্রভাবের কারণে কিছু ঘটনা ঘটে। দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছি।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমেরিকানদের কথা বাদ দিয়ে ‘ট্রাম্প শুনছেন নেতানিয়াহুর কথা’

‘পানির দামে’ বিক্রি হচ্ছে দুধ 

হাজারীবাগের আগুন নিয়ন্ত্রণে

ইরানে মার্কিন হামলা / ট্রাম্প কি এবার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন

সকালের নাশতা বাদ দিলে যা হতে পারে

ইরানে মার্কিন হামলার পর আতঙ্কে নিউইয়র্ক, কড়া নিরাপত্তা জারি

প্রথমবার একসঙ্গে অপি, সাগর ও তাহসান 

আমি নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানাচ্ছি : ট্রাম্প

৯ অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে শৈল্পিক বাবুই পাখি

১০

ইরানে হামলার পরপরই ট্রাম্প-নেতানিয়াহু ফোনালাপ

১১

আগের ভিডিও শেয়ার করে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করলেন খামেনি

১২

‘জমেছে হতাশা, বাড়ছে ঋণের বোঝা’

১৩

টিভিতে আজকের খেলা 

১৪

বিএনপির দুপক্ষের দ্বন্দ্ব, বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা

১৫

‘টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ ধ্বংস করে পর্যটন চলতে পারে না’

১৬

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সবশেষ খবর

১৭

২২ জুন : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৮

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

১৯

২২ জুন : আজকের নামাজের সময়সূচি

২০
X