আঙ্গুর নাহার মন্টি
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩, ০৯:৫৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সম্পর্ক জোরদারের সফরে মার্কিন প্রতিনিধিরা

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-ওয়াশিংটন প্রকাশ্য টানাপোড়েনের মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তার সঙ্গে রয়েছেন দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। মার্কিন এই হাই-প্রোফাইল সফরকে দুদেশের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা বলছে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো। আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উজরা জেয়ার সাক্ষাৎ নিশ্চিত হওয়ায় এমন ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশের অন্যতম।

উন্নয়ন সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রম অধিকারের মতো ইস্যুগুলোতে সরব থেকেছে সবসময়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে মার্কিন চাপও নতুন নয়। তবে ২০২১ সালে র্যাবের ওপর দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এত দিনেও তুলে না নেওয়া ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতাসহ নানা কারণে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সরকার। মে মাসে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণায় দুদেশের সম্পর্কের মধ্যে যেন নতুন দেয়াল ওঠে। সরকার বারবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেও নানাভাবে ঢাকাকে চাপে রাখছে ওয়াশিংটন। এমনও অভিযোগ আছে, মার্কিন মদতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনকালীন সরকারের একদফা দাবিতে মাঠে নেমেছে। এদিকে সংবিধান মেনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে অনড় ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে সরকারপ্রধান জাতীয় সংসদেও যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন। এমন বাস্তবতায় উজরা জেয়ার সফর ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ নিশ্চিত হওয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ইতিবাচক দিকে এগিয়ে যাওয়ার আভাস মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে আজ গণভবনে তাদের সাক্ষাতের পরই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

এরই মধ্যে উজরা দিল্লি সফরকালে ভারতীয় গণমাধ্যমেও বলেছেন, দিল্লির পরপরই ঢাকা সফরে তিনি খুবই আনন্দিত। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে জোরালো আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছেন। নির্বাচন ছাড়াও তার সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নিয়ে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

বাংলাদেশ নিয়ে নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর উজরা জেয়াই দেশটির কোনো জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি, যিনি বাংলাদেশ সফর করছেন। তবে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে আলোচিত নাম ডোনাল্ড লু সঙ্গে থাকায় তার এ সফর বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড লুর সফরের পর ঢাকা-ওয়াশিংটন দূরত্ব অনেকটা কমেছিল।

ঢাকা ও ওয়াশিংটনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, উচ্চপর্যায়ের এই মার্কিন প্রতিনিধিদের ঢাকা সফর কেন্দ্র করে দুই দেশই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মার্কিন প্রশাসনের এ সফরের পাঁচ এজেন্ডা ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন, উপাত্ত সুরক্ষা আইনসহ বিভিন্ন উদ্বেগের ইস্যুগুলোতে আলোচনার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন, মানবাধিকারসহ সব ইস্যুতে আলোচনার জন্যও প্রস্তুত বাংলাদেশ। এ সফরের আগে ওয়াশিংটনে গিয়ে হোমওয়ার্ক করে এসেছেন পিটার হাস। উজরাও ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন।

এ বিষয়গুলো তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে সাবেক কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান বলেন, নির্বাচন নিয়ে চাপে রাখলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইবে না যুক্তরাষ্ট্র। চীন, রাশিয়া, ইন্দো প্যাসিফিকসহ নানা ইস্যুতে কিছু স্বার্থ আদায়ে নির্বাচন এলেই তাদের সক্রিয়তা বাড়ে। পরে আবার সম্পর্ক ইতিবাচক হয়। উজরা ও লুর সফরও এর বাইরে নয়।

জানা যায়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রম সম্পর্কিত বিষয়, মানব পাচার ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব, ইন্দো-প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব ঠেকানোর মতো বিষয়গুলোও আলোচনা হতে পারে।

এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধু ভারতের শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি অগাধ আস্থার কারণে মার্কিন প্রশাসন ঢাকার বিরুদ্ধে খুব একটা কড়াকড়ি অবস্থান নিতে পারে না। এবার সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েও এগোচ্ছে বলে জানা গেছে। যদিও ভারত বলছে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করবে না। তবে দেশজুড়ে লোডশেডিং, পেঁয়াজ ও মরিচের আকাশছোঁয়া দামের নেতিবাচক প্রভাব এবং জনরোষ ঠেকাতে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি দিল্লির নীরব সমর্থন ও সহযোগিতাও কারও চোখ এড়ায়নি। সম্প্রতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে বাংলাদেশে একটি শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়ার পর বাংলাদেশ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নির্বাচনের ছয় মাস বাকি থাকায় সব সফরকেই নির্বাচনকেন্দ্রিক সফর হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও গুরুত্বের পুরো সুফল কাজে লাগাতেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ বন্ধুদেশগুলো এদেশে একটি ভালো নির্বাচন চায়। যাতে সামনের দিনে ইন্দো-প্যাসিফিক, আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির মতো বড় উদ্যোগগুলো গণতন্ত্র ও সুশাসনের অভাবে বাস্তবায়নে যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। তারা অংশীদারত্বটা আরও শক্তিশালীই করতে চায়। বাংলাদেশ চীন, রাশিয়া, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট বলেছে। অর্থনৈতিক কাঠামোতে থাকবে, কোনো নিরাপত্তা বলয়ে না, বাংলাদেশের এই দৃঢ় অবস্থানও সবার জানা। তাদের মূল চিন্তা—যাতে বাংলাদেশ অন্য কোনো বলয়ে ঝুঁকে না যায়। পদ্মা সেতু তো দৃষ্টান্ত হয়েই আছে। তারা একই রকম ভুল পদক্ষেপে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব হারাতে চায় না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রই না, আরও বিদেশি বন্ধুরা নির্বাচনী ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। উজরার সফরের পর মার্কিন প্রশাসনের কড়াকড়ি শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি কমবে না বাড়বে, সেই আভাস পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো বিদেশি সমর্থন ছাড়া আন্দোলন কতটা ধরে রাখতে পারবে, সেটিও স্পষ্ট হবে।

আজ মার্কিন প্রতিনিধিরা সিরিজ বৈঠকে ব্যস্ত থাকবেন : সফরসূচি অনুসারে, আজ সকাল ৮টায় মার্কিন দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হবেন উজরা জেয়া। সাড়ে ৯টায় তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন। সেখান থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। সেখানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও উপস্থিত থাকতে পারেন। দুপুরের পর মার্কিন দূতাবাস, দেশটির উপরাষ্ট্রদূত হেলেন লাফেইভের বাসভবন ও হোটেল ওয়েস্টিনে তিনটি বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। এসব বৈঠকে রাজনীতিক, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। এরপর রাতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে তার বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নৈশভোজ করবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। সফর শেষে মধ্যরাতেই উজরা জেয়া ঢাকা ছাড়বেন। তবে ডোনাল্ড লুর সকাল সাড়ে ৮টার ফ্লাইটে নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দোকানে গেলেই মিলবে একাকিত্ব দূর করার উপায়    

বিচারক-রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বেকারত্ব দূর করতে ব্যর্থ : শিবির সেক্রেটারি

জাতীয় নারী ফুটবলার সাগরিকার বাড়িতে চুরি

বোরকা পরা ছাত্রীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে দেখানোকে ঘিরে বিতর্ক

উদ্বেগ জানালেন আজহারি

পাঁচ দিন সাগরে ভেসে জীবিত ফিরলেন মোরশেদ

বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজে থাকছে নারী আম্পায়ার

মওলানা ভাসানী সেতুর স্বপ্নযাত্রা শুরু

বিএনপি কর্মীদের নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিলেন জয়

১০

খাঁচায় বন্দি রেখে পাখি পালন করা কি জায়েজ আছে?

১১

সাবেক স্ত্রীকে হত্যার পর যুবকের কাণ্ড

১২

বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা

১৩

নদীতে ভাসছিল নিখোঁজ চালকের মরদেহ, উধাও অটো

১৪

টাইফয়েড টিকার রেজিস্ট্রেশন মোবাইল থেকে যেভাবে করবেন

১৫

দুদকের দুই উপ-পরিচালক বরখাস্ত

১৬

দলের স্বার্থে খেলে কপাল পুড়ল দুই ক্রিকেটারের, দাবি অশ্বিনের

১৭

মহাখালীর সাত তলা বস্তিতে ভয়াবহ আগুন 

১৮

আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১২টা হাতি মরে গেছে : রিজওয়ানা

১৯

প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

২০
X