লেবু, শসা, বেগুনসহ অন্যান্য সবজিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। তবে ফলের দামে এখনো দিশেহারা মানুষ। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতায়ও দাম নাগালের মধ্যে নেই। গত সোমবার জারি করা খেজুরের খুচরা মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত স্মারকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে আমদানি করা বিভিন্ন মানের খেজুরের আমদানি মূল্য, আরোপিত শুল্ক, কর ও আমদানিকারকদের অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করে খেজুরের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে খেজুরের সরকার নির্ধারিত দামের কোনো প্রভাবই পড়েনি বাজারে।
রাজধানীর বাদামতলী পাইকারি ফল বাজারের একাধিক আড়তদারের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, অধিকাংশ আড়তদার ইতোমধ্যে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে খেজুর কিনেছেন রমজান মাসকে কেন্দ্র করে। তাই এখন এই দামে খেজুর বিক্রি করলে তাদের লোকসান হবে।
গতকাল রাজধানীর সদরঘাট, বাদামতলী, গুলিস্তান ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি জাইদি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩২০ টাকায়। অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের সরকার নির্ধারিত দাম সর্বোচ্চ ১৬৫ টাকা। এসব খেজুরও ২০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। গুলিস্তানে খেজুর কিনতে গিয়ে কামাল হোসেন নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে খেজুর গত বছর কিনেছিলাম ৫০০ টাকায়, সেটা চাইতেছে ৯০০ টাকা।
সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়ার বিষয়ে বাদামতলী ফলবাজারের খুচরা খেজুর বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, পাইকারি বাজার থেকে তারা যে খেজুর কিনেছেন, তার দাম বাড়তি ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকার খুচরা বাজারের জন্য যে দাম বেঁধে দিয়েছে, পাইকারি বাজারেই তার কাছাকাছি দামে তাদের খেজুর কিনতে হয়েছে। ফলে সরকার নির্ধারিত দামে খেজুর বিক্রি করতে হলে তারা লোকসানে পড়বেন।
গুলিস্তানের খেজুর বিক্রেতা রনি বলেন, সরকার এমন এক সময় খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, যখন রমজান শুরু হয়ে গেছে। তাতে বাজারে বেঁধে দেওয়া দামের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। কারওয়ান বাজারের খুচরা খেজুর ব্যবসায়ী জায়েদ হোসেন বলেন, খুচরা
ব্যবসায়ীরা দাম কমানোর মতো পরিস্থিতিতে নেই। কেউ হয়তো বেশি পরিমাণে নিলে কিছুটা কম দামে দেওয়া সম্ভব। চাহিদা না কমা পর্যন্ত খেজুরের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছি না।
এদিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেল গত সপ্তাহে জোড়া ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল এটির দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। তরমুজের দাম গত সপ্তাহে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাকা পেঁপের দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে। পেয়ারার দামও কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। গত সপ্তাহে আপেল বিক্রি হয়েছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। গতকাল বিক্রি হতে দেখা গেছে, ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। সাগর কলার ডজন ৯০ থেকে ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে চাঁপা কলা ও বাংলা কলার দামও।
বাদামতলীর পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, কমলার পাইকারি দাম প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, আপেল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, আনারস প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আঙ্গুর প্রকারভেদে পাইকারি দামে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে শসা, লেবুসহ অন্যান্য সবজির দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে বেগুন ২০ টাকা কমে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। শসা ১০০ থেকে ১২০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। লেবুর হালি ৮০ থেকে ১০০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তবে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, গাজর ৪০ টাকা। কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। রমজানের আগে যে করলা প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেটির দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, ঝিঙা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কচুরলতি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০, ঢ্যাঁড়শ প্রতি কেজি ৮০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ৪০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং আলু প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রকাশিত পণ্য তালিকায় দেখা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, হলুদ, দারচিনি, তেজপাতা ইত্যাদি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে কোনো সংকট নেই। কিন্তু কিছু ‘অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ’ বাড়তি মুনাফা পেতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের মতে, ডলারের মূল্য ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিয়ে নানা জটিলতার কারণে সার্বিকভাবে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের বাজারে ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।