বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ জিম্মির পর থেকেই ২৩ নাবিকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছিল জলদস্যুরা। তবে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। জিম্মি করার পর দস্যুরা একটি কেবিনে সব নাবিককে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। রাখা হয়েছিল ব্রিজেও। তবে এখন নিজ নিজ কেবিনে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা। অন্যদিকে, প্রথম পর্যায়ে জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়েও ছিল শঙ্কা। কারণ, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কয়লা দাহ্য জাতীয় খনিজ পদার্থ, এগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করা গেলে ঝুঁকি আছে বিস্ফোরণ হওয়ার। তবে এখন জাহাজে থাকা ইঞ্জিনিয়ার ও সংশ্লিষ্টরা ৮০ কোটি টাকার এই কয়লা নিয়মিত তদারকি করছেন।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। কালবেলাকে তিনি বলেন, বুধবার দুপুরে নাবিকরা জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক চলছে। তাদের কেবিনে পাঠানো হয়েছে। কয়লার দেখাশোনা কার্যক্রমেও কোনো ধরনের ব্যাঘাত হচ্ছে না। ঈদের আগেই জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হচ্ছে জানিয়ে মিজানুল ইসলাম আরও বলেন, জাহাজের সব নাবিক সুস্থ আছেন। দস্যুদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। তবে যোগাযোগ চলছে। আমরা সব নাবিককে সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছি। আশা করছি, ঈদের আগেই আমরা নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হব।
যেভাবে উদ্ধার হতে পারেন জিম্মি নাবিকরা:
একাধিক মার্চেন্ট মেরিনারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দস্যুরা এখন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কোম্পানির কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, সেটি জাহাজে লেখা থাকে। কোম্পানির নির্ধারিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দাবি জানাবে। এরপর শুরু হবে দরকষাকষি।
তারা আরও জানান, কিডন্যাপ হওয়া জাহাজটির যদি ইন্স্যুরেন্স করা থাকে, তাহলে জাহাজটি উদ্ধারে থার্ড পার্টি হিসেবে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এর সঙ্গে যুক্ত হবে। তখন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সরাসরি জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। জলদস্যুরা সচরাচর নগদ টাকা নেয়। এটি সাগর, স্থল বা আকাশপথে তাদের কাছে পৌঁছানো হয়। এর আগে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সেখান থেকে দেখা যায় আকাশপথেই জলদস্যুদের মুক্তিপণের টাকা দেওয়া হয়। নিচ দিয়ে চলা একটি উড়োজাহাজে করে জলদস্যুদের নির্ধারিত স্থানে মুক্তিপণ নিচে ফেলা হয়। এরপর তারা সেটি গ্রহণ করে। সন্তুষ্ট হলে তখন জাহাজ ছেড়ে দেয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, এই ক্ষেত্রে জলদস্যুদের সৎ দেখেছি। মুক্তিপণ নিয়ে নাবিকদের মেরে ফেলেছে অথবা জাহাজটি ছেড়ে দেয়নি, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
কতদিন সময় লাগতে পারে—জানতে চাইলে আনাম চৌধুরী বলেন, ‘অপহরণের পর নাবিকদের উদ্ধার করতে ৯০ দিন থেকে সর্বোচ্চ এক বছর সময় লেগে যায়। চাইলে এটি ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেও সম্ভব। এটি নির্ভর করবে দরকষাকষির ওপর।’