মাদারীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে হেবা করে গত ৯ এপ্রিল বাবা ইসমাইল হোসেনকে বিলাসবহুল তিনতলা বাড়িটি দান করে দেন মেয়ে ফারজানা নাজনীন। ফারজানা নাজনীন মাদারীপুর জেলা যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পেছনে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। মাদারীপুর পৌরসভার ১১১ নম্বর শকুনী মৌজার ৩৮৭, ৩৮৮ ও ২৮৯ নম্বর দাগে ৭ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত বিলাসবহুল বাড়িটির মালিক ফারজানা নাজনীন ও তার মেয়ে তাসনিম জাহান মীম। ফারজানা নাজনীন তার বাবা কুনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনের নামে গত ৯ এপ্রিল ২৩৩৭ নম্বর দলিলে ‘হেবা ঘোষণার’ মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তন করেন। পরে দাখিল করেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র। নির্বাচনের হলফনামায় সম্পত্তি কম দেখাতেই বাবার নামে লিখে দিয়েছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি।
মাদারীপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সর্বশেষ ভূমি জরিপ বিআরএস রেকর্ডে সংশ্লিষ্ট দাগ ও খতিয়ানে ডোবা থাকায় ভবন নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ওই জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অনুমোদন চাইলেও সর্বশেষ পৌরসভার সার্ভেয়ার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিশেষজ্ঞরা অনুমোদন দেননি। পরে ফারজানা নাজনীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই ভবন নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারজানা নাজনীনের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনি ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে মাত্র ২ হাজার টাকা। আর নগদ অর্থ সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
হলফনামার তথ্য নিয়ে মাদারীপুরের জনমনে এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিপুল অর্থে নির্মিত ডুপ্লেক্স বাড়িটির অর্থ জোগান এলো কোথা থেকে? সম্প্রতি এ নিয়ে বেশ কয়েকজন বাড়িটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। দুদককে অনুসন্ধান করতেও অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মাদারীপুর যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফারজানা নাজনীন সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্বামী লিয়াকত হাওলাদার ইতালি থেকে টাকা পাঠিয়েছেন, সেই টাকা থেকে নির্মাণ করা হয়েছে এই বাড়ি। এ ছাড়া আমি জেলার একমাত্র নারী ঠিকাদার, আমি ব্যবসা করি। আমার ব্যবসার টাকায় বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। পৌরসভা থেকে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিলাম, কিন্তু পৌরসভা অনুমোদন দেয়নি। পরে অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করেছি। এই শহরের অনেক বাড়িই অনুমোদন ছাড়া তৈরি হয়েছে। সবাই যেভাবে বাড়ি নির্মাণ করছে আমিও সেভাবেই নির্মাণ করেছি।
সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগেই বাড়ির মালিকানা কেন পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়ির জমি নিয়ে ঝামেলা থাকায় বাবার নামে লিখে দেওয়া হয়েছে। জমিটা মূলত বাবার, কিন্তু বাড়ি আমি নির্মাণ করেছি।
মাদারীপুর পৌরসভার সার্ভেয়ার এনায়েত হোসেন বলেন, ফারজানা নাজনীন ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিলেন, পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জায়গাটি ডোবা। বিআরএস রেকর্ডে ডোবা থাকায় পৌরসভা এজন্য কোনো অনুমোদন দেয়নি। বাড়িটি তারা অনুমোদন না নিয়েই নিজেদের মতো তৈরি করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাদারীপুরের উপপরিচালক আতিক রহমান বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণে অর্থের উৎস নিয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।