বিরূপ আবহাওয়া মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। গত ৩১ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত টানা ৩৩ দিন দেশের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ চলমান রয়েছে। তপ্ত এপ্রিল পার হওয়ার পর মে মাসও এসেছে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস নিয়ে। তবে মে মাসে টানা তাপপ্রবাহ থাকবে না এপ্রিলের মতো। চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে, পাশাপাশি তাপমাত্রা কমেছে।
গত এপ্রিলজুড়ে ছিল গরমের দাপট। ১ থেকে ১৯ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে তীব্র এবং ২০ থেকে ৩০ এপ্রিল তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। পুরো মাসে ১৬ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী হয়েছে। ২৭ এপ্রিল সিলেট ও ২৮ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ৮৯ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া রেকর্ড করা হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ এলাকা ছিল বৃষ্টিশূন্য। ৩১ মার্চ থেকে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে ৩০ এপ্রিল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাধীনতার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
মে মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে ৩ থেকে ৫ দিন বজ্র, শিলাবৃষ্টিসহ কালবৈশাখী এবং দুই থেকে তিন দিন তীব্র কালবৈশাখীর আভাস রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, এপ্রিলে সারা দেশে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর সারা দেশে গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে তিনটি মৃদু অথবা মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। মে মাসে বঙ্গোপসাগরে এক বা দুটি লঘুচাপ হতে পারে। যার মধ্যে একটি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
চলতি মাসে নদনদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজ করতে পারে। তবে উজানে ভারি বর্ষণের ফলে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও পানি বিপৎসীমার উপরে যেতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। তাতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদনদীতে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি উঠে আসতে পারে।
আরও ৪৮ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট: আরও ৪৮ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা ঢাকা বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলসহ খুলনা, রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে গত দুই দিনেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিটস্ট্রোকে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া রাজশাহী, ঈশ্বরদী ও যশোরে ৪১, কুমারখালীতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কুতুবদিয়ায় ২৭, রাঙামাটিতে ২২, কক্সবাজারে ১১, সীতাকুণ্ডে ৮, ফেনী, চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপে ৭, নোয়াখালী ও বান্দরবানে ৪ মিলিমিটার এবং সিলেটে ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর, দিনাজপুর ও নেত্রকোনায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রাজশাহী, পাবনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা দেশের কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস এবং রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।
বৃষ্টির সম্ভাবনা: আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক কালবেলাকে বলেন, এর আগে বৃষ্টি ছিল সিলেটকেন্দ্রিক। বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি বেড়েছে। আগামী ৫ মে থেকে ক্রমান্বয়ে বৃষ্টি বৃদ্ধি পেতে পেতে ১০ মের মধ্যে সারা দেশে বিস্তার লাভ করতে পারে। ৫ থেকে ৬ মে দেশের মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জে বৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা শহরেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা পরিমাণে কম। এখন যেখানেই বৃষ্টি হোক সেই বৃষ্টি অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ হবে।
বৃষ্টির সময় খোলা আকাশের নিচে না থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এখন কালবৈশাখীর সময়। বৃষ্টি হলে আধাঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে। এই সময়ে বজ্রসহ বৃষ্টি হয়, তাই খোলা আকাশের নিচে না থাকার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।