ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। আগামীকাল বুধবার ১৪১টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনিয়ম ঠেকাতে ভোরেই কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হবে ব্যালট পেপার। এদিকে ভোটের সব আয়োজন সম্পন্ন হলেও কেন্দ্রে ভোটার আনাকেই এ নির্বাচনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। সেজন্য ভোটের হার সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে যাতে কোনোভাবেই কম না হয়, সে ব্যাপারে বেশ তৎপর রয়েছে কমিশন। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে নানা কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যেন এর চেয়ে বেশি হয়, সে ব্যাপারে সজাগ রয়েছে সংস্থাটি। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে শুরুতেই বিধিমালা পরিবর্তন করে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রচারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যমেও। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে পত্রপত্রিকা, বেতার, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়েছে ইসি। প্রচার চালানো হয়েছে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমেও। ভোটারদের
কেন্দ্রে নিয়ে আসতে সারা দেশেই মতবিনিময়সহ নানাভাবে সক্রিয় ছিলেন নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ভোট উপলক্ষে ৮ মে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা কালবেলাকে বলেছেন, ‘গত জাতীয় নির্বাচনে যে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হয়েছে, আমরা আর তার নিচে নামতে দিতে চাই না; বরং ওপরে
উঠতে চাই। ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আসছে উপজেলা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করাই আমাদের লক্ষ্য।’
নিয়ম অনুযায়ী, ৩৬ ঘণ্টা আগেই ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়। সে অনুযায়ী সোমবার মধ্যরাতেই প্রথম ধাপের প্রচার শেষ হয়েছে। পোলিং এজেন্ট নিয়োগসহ শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন প্রার্থীরা। সেইসঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীরাও এরই মধ্যে প্রচারে নেমে পড়েছেন। আর তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোট নিয়েও অনানুষ্ঠানিক প্রচারে রয়েছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে ইসি। এর মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় (হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, পরশুরাম, বাগেরহাট সদর ও শিবচর) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এরই মধ্যে সব প্রার্থী বিজয়ী হন। এ ছাড়া ধাপ পরিবর্তন, মামলা ও মৃত্যুজনিত কারণে ছয়টি উপজেলায় (নারায়ণগঞ্জ সদর, কুমারখালী, রোয়াংছড়ি, থানচি, গোপালপুর ও মহাদেবপুর) এ ধাপে ভোট হচ্ছে না। ফলে বাকি ১৪১টি উপজেলায় অনুষ্ঠিতব্য ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১৪১ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে ইসি। নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে তারা সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন। পরবর্তী ধাপগুলোর জন্যও একইভাবে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেবে ইসি। এ ধাপের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।
সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের এ নির্বাচনে ১৪১ উপজেলায় মোট কেন্দ্র রয়েছে ১১ হাজার ৫৫৬টি। এর মধ্যে দুর্গম এলাকার ৪২৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের আগের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। আর ১১ হাজার ১৩২ কেন্দ্রে ব্যালট যাবে ভোটের দিন সকালে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, চার ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনের সব ধাপেই দুর্গম কেন্দ্রে আগের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। অন্যগুলো যাবে ভোটের দিন সকালে। কয়েক বছর ধরে ভোটে কারচুপি রোধ করতে আগের রাতে ব্যালট না পাঠিয়ে সকালে পাঠায় কমিশন।
ইসি সূত্র জানায়, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার ও ইসি। এরপর অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের কয়েকটি নির্বাচনেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি ভোটের হার। গত ১১ মার্চ ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের ২৩১টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহ সিটিতে ভোট প্রদানের হার ৫৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে কুমিল্লা সিটিতে ভোটের হার ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ।
জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির এমন চিত্র নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা। সেজন্য ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে ভোটার উপস্থিতির হার বাড়াতে ব্যাপক তৎপর হয়ে পড়েন তারা। নির্বাচনে প্রার্থী সংখ্যা বাড়িয়ে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবার নির্দলীয় ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দিয়ে ভোটের ব্যাপারে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী পোস্টার, নির্বাচনী প্রচার এবং প্রার্থীদের জামানতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়।