সব ধরনের বিভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং নিজ কর্তব্যে নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে এক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
জন্মাষ্টমী উদযাপন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমিটির যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান হয়।
এ সময় ডা. বিধান রঞ্জন রায় বলেন, শ্রীকৃষ্ণের জন্মবার্ষিকীতে আমাদের দুটি শিক্ষা বুকে ধারণ করতে হবে। একটি হচ্ছে- সব ধরনের বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকা, আর অন্যটি হচ্ছে- আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে নিজেদের কর্তব্যকর্মে নিয়োজিত হওয়া। আমরা যদি এই দুটি বৈশিষ্ট্য নিজেদের মাঝে ধারণ করতে পারি, তাহলেই শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে। এ সময় তিনি সকলকে ধর্মীয় সহনশীলতা চর্চার আহ্বান জানান।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, একটা কথা প্রচলিত আছে- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেমন, যার মনে যেমন। আমরা যদি ঐতিহাসিক পরিক্রমা দেখি, আমরা যদি বিভিন্ন সময়ে তার যে বিভিন্ন রূপ সেটা দেখি- তাকে আমরা মহাভারতে পাই, আবার শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতাতে পাই, ভাগবতে তার জীবন কাহিনি পাই। জয়দেবের গীতগোবিন্দে এসে আমরা আবার অন্যরকম কৃষ্ণকে পাই, যেটার ধারাবাহিকতা আমাদের বৈষ্ণব সাহিত্যে ছড়িয়ে আছে। তার আরাধনারও বিভিন্ন উপায় আছে। দার্শনিক রূপে যেমন তার আরাধনা করা যায়, তেমনি বন্ধুরূপেও করা যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজল দেবনাথ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, অসাম্প্রদায়িকতা বাংলাদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য। এ দেশের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের মাঝে কোনোরূপ ভেদাভেদ নেই। আমরা একে অপরের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করে থাকি। এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রসারিত হয়, ঐক্য ও সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়।
তারা আরও বলেন, মাথা নত করে, দুর্বল হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা বাতুলতা মাত্র। নিজেদের অধিকার নিজেদেরই আদায় করে নিতে হবে, যে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এ আয়োজন, সেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এটাই শিক্ষা। শ্রীকৃষ্ণের এ শিক্ষা মনে লালন করে আমাদের এগোতে হবে।
আলোচনা শেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ বছর কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলে দৃশ্যপট প্রদর্শনে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন- আমরা কজন সনাতন (অনলাইনভিত্তিক সামাজিক সংগঠন), দ্বিতীয় পুরস্কার শ্রীশ্রী গিরি গোবর্ধনধারী জিউ বিগ্রহ মন্দির এবং তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন কাজিরবাগ পঞ্চায়েত ও যুব উন্নয়ন কমিটি, মুগদা, ঢাকা।
মন্তব্য করুন