আগামী (২০২৪-২৫) অর্থবছরে সরকারের উন্নয়ন বাজেট বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) খসড়া চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। নতুন এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় হবে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ কোটি টাকা বিদেশি উৎস থেকে ঋণ বা অনুদান হিসেবে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় নতুন এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে কমানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছর মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে তা ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়। সেই হিসেবে আগামী অর্থবছরে এডিপির আকার চলতি বাজেটের তুলনায় ২ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৩৩৭টি প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪০২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রাথমিক চাহিদা পাওয়া যায়। সেখান থেকে কাটছাঁট করে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১৬ মে এনইসি সভায় নতুন এডিপি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
বর্ধিত সভার কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ছে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। এ ছাড়া পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ কমানো হচ্ছে অবকাঠামো ও যোগাযোগ খাতে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমানো হচ্ছে।
নতুন এডিপি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পরই বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্থ ব্যয়ে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের বরাদ্দ কমিয়ে যারা বেশি ভালো করেছে, তাদের চাহিদামতো বাড়ানো হয়েছে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির হিসাবে উন্নয়ন বাজেটের আকার বাড়েনি, বরং কমেছে। সামর্থ্য অনুযায়ী এডিপির আকার ঠিকই আছে। কারণ বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ নেই। প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে বিদেশি অর্থায়নের যথাযথ ব্যবহারে জোর দিতে হবে।’
এডিপি-সংক্রান্ত সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সবুজায়ন ও জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, নতুন এডিপিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জন্য সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৩২ হাজার ৪২ কোটি, বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য ২৯ হাজার ১৭৫ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দ ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৮৮৬ কোটি, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
খাতভিত্তিক বরাদ্দের হিসেবে এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ও শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য খাতে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধা খাতে ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি, কৃষিতে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ১১ হাজার ৮৯ কোটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৬ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি, সাধারণ সরকারি সেবায় ২ হাজার ১৩৩ কোটি, প্রতিরক্ষায় ৭১০ কোটি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় ৩ হাজার ৩০৮ কোটি, ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে ৩ হাজার ৪৯১ কোটি, সামাজিক সুরক্ষা বিভাগে ৩ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।