ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ১১ দফা দাবিতে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। একই দাবিতে এরই মধ্যে পাঁচটি সমাবেশ করা হয়েছে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজকের শেষ সমাবেশে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের ভোটাধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্বৈরাচারকে রুখে দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার টানা প্রায় ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। ক্ষমতাসীনরা দেশের বিভিন্ন খাতে তাদের দর্শন প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ‘পরিবর্তন ও দলীয়করণ’ করেছে। তারা মনে করে, দেশের মহান স্বাধীনতা-সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধে শুধু আওয়ামী লীগেরই অবদান ছিল। অথচ আরও যাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল, তাদের উপেক্ষা ও অবহেলিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ ঘটানো হয়েছে। গত প্রায় ১৫ বছরে দেশের প্রায় পৌনে ৫ কোটি নতুন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ক্ষমতাসীনদের অনিয়ম-দুর্নীতির
বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করতে পারেনি। রাজপথে হামলা-মামলার শিকার হয়েছে অনেকেই। এ সরকারের বিরুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের
পাশাপাশি তরুণ সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাই তরুণদের মাঝে দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেম তৈরির লক্ষ্যেই এসব সমাবেশ হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শুক্রবার কালবেলাকে বলেন, আমরা সারা দেশের মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটকে অবহিত করার চেষ্টা করেছি। দেশে যে গণতন্ত্র নেই; বরং একদলীয়, একনায়কতান্ত্রিক আওয়ামী লীগের শাসন চলছে, সেটা বলেছি। সর্বোপরি এ সরকার মাফিয়াতন্ত্র ও লোপাটের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, একটি গণতান্ত্রিক দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে জনগণ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। এ আন্দোলনে আমরা তাদের শরিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। গত ২ জুন এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারুণ্যের সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, গত ১৪ জুন চট্টগ্রামে তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে শুরু হয় ওই কর্মসূচি। এরপর গত ১৯ জুন বগুড়া শহরের সেন্ট্রাল স্কুল কলেজ মাঠে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এবং ২৪ জুন বরিশাল শহরের বেলসপার্ক মাঠে, ৯ জুলাই সিলেটে, ১৭ জুলাই খুলনায় তারুণ্যের সমাবশে হয়েছে। সর্বশেষ আজ ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে তারুণ্যের সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তরুণরাও জেগে উঠেছে: এর আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিভাগীয় সভা-সমাবেশ, মিছিল, পদযাত্রা, গণঅনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি এবার তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করার কর্মসূচি দেয়। পাশাপাশি আন্দোলনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে নোয়াখালী, দিনাজপুরে পদযাত্রা কর্মসূচি হয়েছে। তারুণ্যের সমাবেশ নিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এরই মধ্যে যেসব তারুণ্যের সমাবেশ হয়েছে, তাতে দেশের তরুণ-যুবকদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে, যা আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেন, তরুণরা নিজেরাই জমায়েত হচ্ছে। তারাই জনগণকে বার্তা দেবে। বাংলাদেশ আজ এক ভয়ংকর অন্যায়-অত্যাচারীর কবলে পড়েছে। এরা গণতন্ত্র ও মানুষের সব অধিকার হরণ করেছে। সুতরাং গণতন্ত্র ফেরানো ও স্বৈরাচারীকে রুখে দেওয়ার বার্তা তরুণদের দেওয়া হবে—এটিই জনগণ প্রত্যাশা করে। সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি: ঢাকায় আজ অনুষ্ঠেয় তারুণ্যের সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আয়োজক সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের সমন্বয়ে এ সমাবেশ হবে। এটি সফলের লক্ষ্যে গতকাল রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর নয়াপল্টন, কাকরাইলে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান ও শ্রীনগরে লিফলেট বিতরণ করেন দলের কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু। সমাবেশে অংশ নিতে এরই মধ্যে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর নেতাকর্মী ও পেশাজীবীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। সমাবেশ ইতিহাস সৃষ্টি করবে: গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে আজ রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’। দুপুর ২টায় অনুষ্ঠেয় সমাবেশে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংবাদ সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ছিলেন। টুকু বলেন, আমরা তরুণদের প্রতিনিধিত্বকারী তিন সংগঠন সারা দেশে পাঁচটি সফল সমাবেশ করেছি। শনিবার (আজ) দুপুর ২টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হবে। আমরা গত বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি মৌখিকভাবে আমাদের অনুমতি দিয়েছেন। আমরা মনে করি, তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, আজ তারুণ্যের সমাবেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। তরুণদের নিয়ে রাজপথে এ ফ্যাসিবাদী সরকারকে রুখে দেব ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্য করুন