এক ওভারে ৩ রান নিলেই সিরিজ ভারতের। প্রথম দুই বলে দুবার প্রান্ত বদল করেন ভারতের শেষ দুই ব্যাটার জেমিমা রদ্রিগেজ ও মেঘনা সিং। তৃতীয় বলে দারুণ এক ডেলিভারিতে মেঘনাকে কিপারের গ্লাভসবন্দি করেন পেসার মারুফা আক্তার। আউটের জন্য বাংলাদেশ ফিল্ডারদের জোরালো আবেদন চলছিল, ব্যাটে লাগায় আউট ভেবে ড্রেসিংরুমে ফিরতে কয়েক পা এগোলেন মেঘনা। অন্য প্রান্তে থাকা জেমিমা থামাতে চাইলেন মেঘনাকে। ততক্ষণে আঙুল তুলে আউট দেন আম্পায়ার। মুহূর্তেই রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচটি ড্র হয়ে যায়। কিন্তু ম্যাচজুড়েই বিতর্কিত কাণ্ড ঘটিয়ে গেছেন ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর। ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণীতেও সেটি টেনে নিয়ে গেছেন তিনি। তবে ম্যাচ ড্র হওয়ায় জয়ের সমান সিরিজ টাই পেয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। ভারতের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ টাই করেছেন তারা। আরও একটা ইতিহাস হয়েছে মিরপুরে। যে কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মেহরাব হোসেনের সঙ্গে এক বন্ধনীতে উচ্চারিত হবে ফারজানা হক পিঙ্কির নাম। ১৯৯৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপির ১০১ রানের ইনিংসটি ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি। দুই যুগ পর মেয়েদের ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন ফারজানা হক। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ১৫৬ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৬০ বলে ১০৭ রান করে ৫০তম ওভারে রানআউট হন। বাংলাদেশের দেওয়া ২২৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২২৫ রানে আটকে যায় সফরকারীরা। ড্র হলেও সুপার ওভার হয়নি। কেননা, বৃষ্টিতে মাঝে কিছু সময় খেলা বন্ধ থাকে। এতে করে সুপার ওভারের অতিরিক্ত সময়টুকুও আগেই পার হয়ে গেছে। সুপার ওভার ভেবে বসেছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের খেলোয়াড়রা। কিন্তু যখনই সময় শেষের ইঙ্গিত দিলেন আম্পায়াররা, তখনই মাঠে উল্লাসে ফেটে পড়েন জ্যোতি, মারুফারা। তিন ম্যাচের সিরিজ ১-১ ব্যবধানে রেখে দেওয়ার মতো অর্জন পেলেন তারা। ভারতের বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ জয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্তকে সামনে রেখে মিরপুরে খেলতে নেমেছিলেন জ্যোতিরা। টস জিতে এবার ব্যাটিং নিতে ভুল করেননি জ্যোতি। উদ্বোধনী জুটিতে পুরো পরিবর্তন আনেন তারা। শারমিন আক্তার সুপ্তা ও মুর্শিদা খাতুনকে বিশ্রামে রেখে একাদশে আনেন শামীমা আক্তার ও সুবহানা মোস্তারিকে। ইনিংসের শুরু করেন শামীমা ও ফারজানা হক পিঙ্কি। আগের দুই ম্যাচে পিঙ্কি ছিলেন তিনে। প্রমোশন পাওয়ার ম্যাচে শামীমার সঙ্গে ৯৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন তিনি। এক যুগ পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিও, এর আগে ২০১১ সালে হয়েছিল ১১৩। ৫২ রান করে শামীমা ফেরার পর একপাশ আগলে স্কোর বোর্ডে রান বড় করতে থাকেন পিঙ্কি। ১৫৬ বলে পেয়ে যান দেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিও। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত মাঠে থেকে ১০৭ রান তোলেন পিঙ্কি। ৪ উইকেটে বাংলাদেশ পায় ২২৫ রান, এটিও এক যুগ পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রান তাড়ায় শুরুতে হোঁচট খায় ভারত। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান অন্যতম সেরা ব্যাটার স্মৃতি মান্ধানা। একই ওভারের পঞ্চম বলে আরেক ওপেনার শেফালি ভার্মাকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন মারুফা। পঞ্চম ওভারেই তিনে আসা ইয়াসতিকা ভাটিয়াকে ফেরান সুলতানা খাতুন। তৃতীয় উইকেটে ম্যাচের দৃশ্য বদলে দেন স্মৃতি ও হারলিন দেওল। ১০৭ রানের এ জুটি ম্যাচের ছবিই বদলে দিলে ম্যাচ চলে যায় ভারতের নিয়ন্ত্রণে। শূন্য রানে জীবন পাওয়া স্মৃতি ফেরেন ৫৯ রানে। দলীয় ১৬০ রানের মাথায় ক্যাচ আউট হন কৌর। পায়ে লাগলে এলবিডব্লিউ আর ব্যাটে লাগলে ক্যাচ। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি কৌর। ঘুরে গিয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করেন তিনি। স্টাম্প উড়ে গিয়ে পড়ে কয়েক মিটার দূরে। বিষয়টি হতবাক করে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দেরও। শেষ দিকে জোড়ায় জোড়ায় উইকেট এনে দেন নাহিদা আক্তাররা। নাটকীয়তার শেষ হয় মেঘনার আউটের মধ্য দিয়ে। সিরিজ টাইয়ে স্বস্তি পায় বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন