বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুদৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’
স্মার্ট বাংলাদেশ: ইংরেজি ‘SMART’ শব্দের প্রতিটি বর্ণের পূর্ণরূপ হলো S = Specific; M= Measurable; A = Achievable; R = Realistic; T = Timely। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১’-এর পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে মূলত বোঝায় প্রযুক্তিনির্ভর জীবনব্যবস্থা, যেখানে সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে সবকিছুই স্মার্টলি করা যাবে। যেখানে ভোগান্তি ছাড়া প্রতিটি নাগরিক পাবে অধিকারের নিশ্চয়তা এবং কর্তব্য পালনের সুবর্ণ এক সুযোগ। স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখাকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে—স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এ শব্দগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ থিওরিকে বাস্তবে রূপায়ণ করা সম্ভব হবে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর মূল সারমর্ম হচ্ছে—দেশের প্রতিটি নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে—তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর নির্মল ও স্বচ্ছ তথা নাগরিক হয়রানিবিহীন একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ প্রক্রিয়া। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্পের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—১. জ্ঞানভিত্তিক ই-অর্থনীতি; ২. উদ্ভাবনী জাতি এবং ৩. অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ বিনির্মাণ। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘ভিশন-২০২১’ ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় একের পর এক উন্নয়ন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের হাত ধরে দেশ আজ বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। এভাবে স্মার্ট বাংলাদেশের ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে, এমনটাই সবার প্রত্যাশা।
উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের হাত ধরে উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে একটি উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ। তবে এ যাত্রায় অনেক সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়াতে হবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। একই সঙ্গে সার্বিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
স্মার্ট পুলিশিং: গত ৩ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সদস্যদের প্রতি বেশ কিছু মূল্যবান ও উপদেশমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একটি দক্ষ এবং বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়ে তোলা।” তিনি তার বক্তব্যে পুলিশ সম্পর্কে জনগণের ‘ভীতি’ দূর করে ভালো কাজ চালিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি পুলিশের প্রতি ‘জনগণের আস্থা’ অটুট রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতেও বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী এরপর যে মূল্যবান কথাটি বলেছেন তা হলো, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ হবে ‘জনগণের পুলিশ, শোষকের পুলিশ’ নয়।” পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিটি কথাই দেশের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী পুলিশের নানাবিধ কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে যথার্থই বলেছেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত বাংলাদেশ এবং সেটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। তার এ ঘোষণা জনসাধারণ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশে নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে সব আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার হবে।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো প্রশাসন। আর প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠন হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলতে প্রধানত পুলিশ সার্ভিসকেই বোঝানো হয়। পুলিশের ওপর জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকটাই নির্ভরশীল। উন্নত বিশ্বে পুলিশ জনগণের সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত থাকে। যে কোনো সমস্যায় জনগণ পুলিশের সাহায্য কামনা করে। পুলিশ সদস্যদের কাজই হলো জনগণের যে কোনো সমস্যায় সব ধরনের সহযোগিতা করা। অসহায়, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। পাশাপাশি জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া। মোটকথা, পুলিশ সদস্যরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
উন্নত বিশ্বে সাধারণত ধরা হয়ে থাকে যে, সমাজের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলবে। বাকি ১০ ভাগ মানুষ আইনের বরখেলাপ করবে অথবা বিপথগামী হবে। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে অথবা আইনের আওতায় আনবে। অন্যভাবে বললে বলা যায়, পুলিশ এই ১০ ভাগ মানুষ থেকে সমাজের ৯০ ভাগ শান্তিকামী মানুষকে রক্ষা করবে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ৯০ ভাগ মানুষ কি আইন মেনে চলে বা চলার মতো পরিবেশ আছে? তবে এ কথা ঠিক, অল্প কিছু মানুষের নিয়মবহির্ভূত কাজের প্রভাব সমাজে অনেক বেশি পড়ে। পুলিশের কাজ মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং কেউ যদি অন্যায়ভাবে আটক হন, তার প্রভাবও বেশি থাকে। সামান্যতম বিচ্যুতিও মানুষকে প্রভাবান্বিত করতে পারে। পুলিশকে আইনত মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করার অধিকার দেওয়া আছে, তবে তা সম্পূর্ণ ন্যায়সংগতভাবে হতে হবে।
পুলিশের কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিয়ে সতর্ক আছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে, সেটা নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। প্রতিদিন দায়িত্ব বণ্টনের আগে কর্মকর্তারা পুলিশ সার্ভিসের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে কাজ করার বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। থানা থেকে শুরু করে পুলিশ লাইনস, পুলিশ ক্যাম্প, বিভাগ—সবখানেই কাউন্সেলিং করা হয়। কাউন্সেলিংকালে পুলিশ সদস্যদের কোথাও তল্লাশি চালাতে হলে কী নিয়ম মানতে হবে, কী ধরনের আচরণ করতে হবে, তা বুঝিয়ে বলা হয়। সাধারণ মানুষকে যেন সম্মান দেওয়া হয়, তাদের প্রতি যেন ভদ্র আচরণ করা হয়।
Smart Policing emphasizes effectively using data and analytics as well as improving analysis, performance measurement, and evaluation research; improving efficiency; and encouraging innovation.
Smart Policing represents a strategic approach that brings more ‘science’ into police operations by leveraging innovative applications of analysis, technology, and evidence-based practices.
Smart Policing হলো তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থা। যেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যবহার হয় অত্যধিক। Smart Policing-এ অপরাধমূলক কার্যক্রমের উপাদানগুলোকে ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা হয়। অফিসারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি সহায়ক। তা ছাড়া নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা হয় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য। অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে, নির্ধারিত, বাস্তবিক এবং কাঙ্ক্ষিত পুলিশি সেবা প্রদানই হলো Smart Policing.
Five key components of Smart Policing
1. Performance measurement and resea partnerships.
2. Outreach and collaboration.
3. Managing organizational change.
4. Strategic targeting, and
5. Making better use of intelligence and ot data and information systems.
Collaboration Principles For The Police
l Strong Leadership
l Orient Towards Service
l Transform Training
l Build Community Relationships
l Engage With Diverse Community
l Improve Communication And Messaging
l Underst And Community Perspectives (চলবে)
লেখক: পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ