দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছুদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রায় সব রাজনৈতিক দলেরই বেড়েছে সক্রিয়তা। তবে নির্বাচন কার অধীনে হবে, তা নিয়ে প্রধান দুই বড় দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির দুই মেরুতে অবস্থান পরিস্থিতিকে দিন দিন অস্বাভাবিক করে তুলছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উভয়েরই ঘোষিত ‘একদফা’ একদিকে যেমন দেশে সংঘাত ও সহিংসতার শঙ্কা তৈরি করছে। একই সঙ্গে কিছু দিন পরপর রাজধানী ঢাকা শহরে তাদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি সৃষ্টি করছে অসহনীয় জনভোগান্তি।
আগামীকাল ২৭ জুলাই সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি রাজধানীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। একই দিন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগও ঘোষণা দিয়েছে পাল্টা সমাবেশের। এ ঘোষণা ও পাল্টা ঘোষণায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানী। সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে বাড়ছে জনজীবনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কারণ অতি সম্প্রতি এই দুই দলের সমাবেশে ঢাকা শহর প্রায় নিশ্চল, স্থবির হয়ে পড়ে। অতি ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরের দুই কোটির অধিক মানুষের জীবন বাস্তবিকই থেমে যায় এসব কর্মসূচির কারণে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সরকার পতনের একদফা লক্ষ্য অর্জনে ঢাকাকে ঘিরেই চূড়ান্ত পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। সারা দেশে নানা কর্মসূচি শেষে রাজধানীকে আন্দোলনের কেন্দ্রে পরিণত করতে চায় দলটি। এই লক্ষ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশের পর লাগাতার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সেই পর্বের সূচনা করতে চায় তারা। এদিন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ‘চলো চলো, ঢাকা চলো’ স্লোগান তুলে বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলা থেকে ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। বিএনপির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের ৩৭টি দলও একই তারিখে ঢাকায় পৃথকভাবে মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তারা আশা করছে, এ সমাবেশে কয়েক লাখ মানুষকে সমবেত করতে সমর্থ হবেন। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের যে কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল ২৪ জুলাই, এর দিন পরিবর্তন করে নেওয়া হয়েছে ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার। এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, তাদের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ সোমবারের পরিবর্তে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ-পশ্চিম গেটে অনুষ্ঠিত হবে।
আমরা মনে করি, রাজধানীতে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমাবেশ বা জনজমায়েতে ঢাকাবাসীর ভোগান্তি হবেই। যেটা প্রয়োজন, তা হচ্ছে জনভোগান্তির বিষয়টি কতটা কমানো যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য তো এ বিষয়টি অবশ্য কর্তব্য। কেননা তারাই জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের ভালো-মন্দের দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করা যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার। তেমনি ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের রয়েছে একটি সুস্থ, স্বাভাবিক ও নিরাপদ শহরে চলাচলের অধিকার। রাজনৈতিক দলগুলোর মনে রাখতে হবে, তাদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করতে গিয়ে যেন কোটি মানুষের ভোগান্তি না ঘটে। আমাদের প্রত্যাশা, ঢাকা শহরে মানুষের ভোগান্তিসহ সব ধরনের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি পালন করবে। পাশাপাশি সব দল একই দিনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
মন্তব্য করুন