শাহ বিলিয়া জুলফিকার
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ এএম
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিক

পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা দরকার

পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা দরকার

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই পরিবেশ। চারপাশের অবস্থা, জলবায়ু, প্রভাব বিস্তারকারী অন্যান্য জীব ও জৈব উপাদান সবকিছুই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। আর এর সবই ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে। ফলে কেউ যদি সচেতন না হন, তাহলে জীবন চলাচল ব্যাহত হবে।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি জরুরি বৃক্ষরোপণ করা। কেননা পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃক্ষ মানুষের প্রকৃত বন্ধু। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গাছ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করছে। অক্সিজেন সরবরাহ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণের মাধ্যমে গাছ প্রাণিকুলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে। একটি পরিণত গাছ বছরে ৪৮ পাউন্ড কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে; যা বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে প্রবলভাবে সাহায্য করছে। কিন্তু আজ আমরা তথাকথিত নগরায়ণ ও উন্নয়নের নামে নির্বিচারে কেটে ফেলছি এসব গাছ। ফলে বাস্তুতন্ত্র তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। আমরা জানি যে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূখণ্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অপরিহার্য। সেখানে বাংলাদেশের বনভূমি রয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। সুতরাং প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি রয়েছে ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ঘাটতি রয়েছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপর। সাম্প্রতিককালে দেশের তাপমাত্রা জানান দিচ্ছে, আমাদের পরিবেশ কী ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। তারপরও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় বৃক্ষের সংখ্যা কম হলে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই পৃথিবী নামক এ গ্রহে মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৃক্ষায়ন কর্মসূচি বাড়াতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে পরিবেশ, রক্ষা পাব আমরা।

শহরে যেহেতু গাছ লাগানো সম্ভব নয়, তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ছাদকৃষিই অন্যতম ভরসা। শব্দটি বাংলাদেশে কিছুটা অপ্রচলিত হলেও বহির্বিশ্বে এরই মধ্যে এটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। সারা বিশ্বে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর পরিধি। বিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে বাংলাদেশেও বড় বড় শহরে এর ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকাতে ছাদকৃষির ব্যাপকতা চোখে পড়ার মতো।

শহর অঞ্চলে গাছপালা কম থাকায় অক্সিজেন উৎপাদন কম। কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বড় বড় শহরে অধিক জনসংখ্যা, যানবাহন ও গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গাছ কেটে গাছ লাগানোর পরিবর্তে বড় বড় ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শহরগুলোতে বসবাসের উপযোগী করতে হলে গাছ লাগাতে হবে। যেহেতু সারি সারি ভবনের কারণে গাছ লাগানোর জায়গা তেমন নেই, তাই বাড়ির ছাদে কিংবা ব্যালকনিতে সুষ্ঠুভাবে বাগান করা হলে তাপমাত্রা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। ভবনের ফাঁকা ছাদগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এ সমস্যা থেকে অনেকাংশে নিস্তার লাভ করা সম্ভব। ভবনের ছাদে বাগান করা গেলে বাগানের গাছ এ তাপ শুষে নেয়। গাছের দেহ থেকে যে পানি জলীয়বাষ্প আকারে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে যায়, তা সেই স্থানের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি কমিয়ে আনে। অসংখ্য ছাদবাগান বা শহুরে গাছপালা এ প্রক্রিয়ায় শহরের উচ্চ তাপমাত্রাকে কমিয়ে আনে। ছাদকৃষি শুধু শখ থেকে নয়, পরিবেশের প্রয়োজনে করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের জন্য। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ নির্মল থাকবে, অন্যদিকে পারিবারিক ফুল, ফল ও শাকসবজির চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখারও সুযোগ রয়েছে। সরকারিভাবে ছাদকৃষির মতো সম্ভাবনাময় খাত সম্পর্কে জনগণকে উৎসাহিত করা হলে এটি আরও বৃদ্ধি পাবে।

সর্বশেষ যেটি জরুরি, তা হলো ব্যাপক জনসচেতনতা ও কার্যকরী পদক্ষেপ। কেননা আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়েই পরিবেশ। নশ্বর পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রাণিকুলের সুস্থতা, প্রাণবন্ততা, দৃঢ়চেতা মনোবল ও কর্মদক্ষতা নির্ভর করে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নির্মল পরিবেশের ওপর। অথচ পরিবেশের সুরক্ষায় মানবজাতির উদাসীনতা ও অপতৎপরতা প্রকাশ পায় প্রতিনিয়ত। তবে বর্তমানে পৃথিবীর সর্বস্তরের মানুষ পরিবেশ রক্ষায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ ও জনসচেতনতার অভাবে পরিবেশ রক্ষা সম্ভবপর হচ্ছে না। পৃথিবীকে জীবের জন্য বসবাসযোগ্য করার নিমিত্তে পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই। সরকারের উচিত উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নীতিমালা প্রণয়ন। পাশাপাশি গৃহীত নীতিমালা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা। এ ছাড়া পরিবেশ রক্ষার উপকারী দিকগুলো তুলে ধরে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

শাহ বিলিয়া জুলফিকার, শিক্ষার্থী

আইন ও বিচার বিভাগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরানে হস্তক্ষেপ : সম্মান হারানোর আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে শিক্ষা নিতে বললেন শি জিংপিং

কুয়াকাটায় গিয়ে প্রেমিকসহ প্রবাসীর স্ত্রী আটক, অতঃপর...

ইরান নিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে টুইট শি জিনপিংয়ের

তিন সন্তানের ঘরে ঠাঁই হয়নি বৃদ্ধা মায়ের, এগিয়ে এলো সোনাবহিনী

প্রেমিকের খোঁজে বেরিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণী, গ্রেপ্তার ৩ 

ইরানজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় শত শত নিহত

ফুঁসে উঠছে বঙ্গোপসাগর, পায়রায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর ফের সচল

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৪০০ জনের বড় নিয়োগ

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আজ অংশ নেবে জামায়াত

১০

আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি দিচ্ছে অ্যাপেক্স

১১

কতজন আমেরিকান ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চায়

১২

ঘুষ না দেওয়ায় জামায়াত নেতাদের ওপর ক্ষেপলেন কর্মকর্তা

১৩

ইরানি নেতাদের হত্যার মিশনে ইসরায়েলের ‘এআই সেনা’

১৪

তিস্তার শুষ্কতা ও ধরলার মরুকরণ : উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বাস্তবতা

১৫

ঢাকায় ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস 

১৬

৭ কারণে ইরানকে হারানো সম্ভব না

১৭

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত থেকে যেভাবে রক্ষা পায় বাংলাদেশি বিমান (ভিডিও)

১৮

ঘুমের মধ্যে শরীরে ঝাঁকুনি, অশুভ লক্ষণ নয়তো?

১৯

মালয়েশিয়ায় বেতন বন্ধ ২৮৩ বাংলাদেশি কর্মীর

২০
X