

দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তানজিন তিশা আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। কিছুদিন আগেই অনলাইনভিত্তিক ফ্যাশন হাউজ ‘অ্যাপোনিয়া’ তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে তার বিরুদ্ধে উঠল অর্থ আত্মসাৎ ও চরম অপেশাদারিত্বের অভিযোগ।
কলকাতার সিনেমা ‘ভালোবাসার মরশুম’-এ অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে মোটা অঙ্কের অগ্রিম টাকা নিয়েও এখন তা ফেরত দিচ্ছেন না তিশা—এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক শরীফ খান।
কী ঘটেছিল আসলে? জানা যায়, এম এন রাজ পরিচালিত ‘ভালোবাসার মরশুম’ সিনেমায় বলিউডের ‘থ্রি ইডিয়টস’ খ্যাত অভিনেতা শরমণ যোশির বিপরীতে অভিনয়ের কথা ছিল তানজিন তিশার। বাংলাদেশ ও ভারতের দর্শকদের জন্য এটি ছিল দারুণ এক চমক। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভিসা জটিলতার কথা বলে সিনেমাটি থেকে সরে দাঁড়ান তিশা। তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন গল্প।
সিনেমাটির প্রযোজক শরীফ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিশার অসহযোগিতা ও বারবার মিথ্যাচারের কারণেই তাকে সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাদ পড়ার পর অগ্রিম নেওয়া টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছেন অভিনেত্রী।
টাকার অঙ্ক ও লেনদেন প্রযোজক শরীফ খান বলেন, “আমরা চরিত্রটির জন্য তিশাকেই পারফেক্ট মনে করেছিলাম। বাংলাদেশে এসে তার সঙ্গে এগ্রিমেন্টও করি। প্রথমে তাকে ৩০ হাজার ভারতীয় রুপি অগ্রিম দেওয়া হয়। এরপর তিশার এক বোনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আমরা তাকে বাংলাদেশি ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা পাঠাই।”
ভিসা স্লট ও শিডিউল নিয়ে নাটক টাকা নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় তিশার টালবাহানা। প্রযোজক বলেন, “সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর আমাদের প্রোডাকশন হাউজ থেকেই তার ভিসা প্রসেসিং ও স্লট রেডি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে স্লট ডেটের মাত্র দুদিন আগে। ভারতীয় হাই কমিশন থেকে স্লট পাওয়া কতটা কঠিন, তা সবাই জানেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে স্লট নেওয়ার পর হঠাৎ তিশা জানান, তিনি যেতে পারবেন না। অথচ এটা তার আরও আগে জানানো উচিত ছিল।”
প্রযোজক আরও জানান, তিশার এই হুটহাট সিদ্ধান্তের কারণে তাকে পুরো শুটিং শিডিউল বদলাতে হয়, যা ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল। শরমণ যোশির শিডিউল থেকে শুরু করে লোকেশন বুকিং—সবকিছুতেই বড় লোকসানের মুখে পড়েন প্রযোজক।
শাকিবের দোহাই এবং টাকা নিয়ে গড়িমসি পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন তিশা শাকিব খানের সিনেমায় অভিনয়ের অজুহাত দেখান। প্রযোজক বলেন, “ভিসা স্লট নিয়ে অনেক ঝামেলার পরেও আমরা সব ম্যানেজ করেছিলাম। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি শাকিব খানের ‘সোলজার’ সিনেমায় যুক্ত হন। আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, শাকিব খানের সিনেমার জন্য কলকাতার কাজটি আরও এক-দু’মাস পিছিয়ে দিতে হবে। তখনই আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে।”
শরীফ খান বলেন, “আমি তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিই, ‘তোমাকে আর এই সিনেমা করতে হবে না। আমরা তোমাকে বাদ দিয়ে দিলাম। তুমি আমার টাকাটা ফিরিয়ে দাও।’ কিন্তু সিনেমা থেকে বাদ পড়ার পর তিনি আর সেই টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। ডকুমেন্টস চাইলেও ২০-২৫ দিন ঘুরিয়ে ফেরত দেন। কিন্তু টাকার বিষয়ে তিনি নীরব।”
খায়রুল বাসারের সততা বনাম তিশার প্রতারণা একই সিনেমায় অভিনয়ের কথা ছিল বাংলাদেশের আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা খায়রুল বাসারের। তার প্রসঙ্গ টানতেই প্রযোজক প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। তিনি বলেন, “বাসারও আমার সিনেমায় ছিলেন। কিন্তু চরিত্রটি তার সঙ্গে যাবে না মনে করে তিনি নিজেই সরে দাঁড়ান। এবং না করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি অগ্রিম নেওয়া টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেন। কোনো ঝামেলা বা ঘোরানোর চেষ্টা করেননি।”
খায়রুল বাসারের এই পেশাদারিত্বের উল্টো চিত্র দেখা গেল তানজিন তিশার ক্ষেত্রে। বর্তমানে কলকাতার এই সিনেমাটিতে তিশার বদলে নেওয়া হয়েছে উড়িষ্যার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শিবানী সঙ্গীতাকে।
পরপর এমন সব প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর তানজিন তিশার পেশাদারিত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই। এ বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য একাধিকবার অভিনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, তাকে পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন