সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ১২৬টি দূষিত শহরের মধ্যে দ্বিতীয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এ সময় ঢাকার স্কোর ছিল ২২৮। এ মানকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বায়ুদূষণে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার স্কোর ছিল ৩৪১। এ মানকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দূষণের ঢাকায় নিঃশ্বাস নেওয়া দিনে ২৩টি সিগারেট খাওয়ার সমান। অর্থাৎ ঢাকার অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই বায়ু যে কোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। জানা যায়, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। পরিবেশ মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ। পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের বিকাশ ঘটে। তাই পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র। কিন্তু পরিবেশ দূষণের মাত্রা প্রকট হওয়ার কারণে মানবসভ্যতা আজ হুমকির সম্মুখীন। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, তা নিয়ে আমাদের পরিবেশ। পরিবেশের উপাদানের মধ্যে রয়েছে গাছপালা, ঘরবাড়ি, পশুপাখি, রাস্তাঘাট, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত এবং আরও অনেক কিছু। এসব উপাদান মানুষ ও অন্যান্য জীবের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পরিবেশ অত্যন্ত প্রয়োজন। এগুলোর ক্ষতি হলে ভারসাম্য নষ্ট হয়।
প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় পরিবেশের সমন্বয়েই সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের পরিবেশ। মানুষের অসচেতনতা এবং অনিয়ন্ত্রিত আচরণের কারণেই পরিবেশ দূষণ হচ্ছে ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে উৎপাদিত ক্ষতিকারক পদার্থ, যেমন—গ্রিন হাউস গ্যাস, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, আগাছানাশক, ময়লা-আবর্জনা ইত্যাদি মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার উষ্ণতম স্থানের সঙ্গে শহরের বাইরে শীতলতম স্থানের দিন-রাতের ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য যথাক্রমে ৭ ও ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার ঢাকার মধ্যেও ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ঋতুবৈচিত্র্যের বাংলাদেশে এখন শুধুই বৈচিত্র্যতার অভাব, সময়মতো বৃষ্টির অভাব, অসময়ে প্রবল বৃষ্টিপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি আমাদের দেশের আবহাওয়ায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নির্বিচারে সবুজ বৃক্ষনিধন করার কারণে বৃক্ষ হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া শিল্পকারখানা, ইটভাটা, বর্জ্য, গ্রিন হাউস গ্যাস ইত্যাদি দ্বারা বায়ু দূষিত হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো সাধারণত জলাশয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে শহর, হাটবাজার, বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা, খাল, বিল ও নদীতে পড়ে পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো সাধারণত জলাশয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে শহর, হাট-বাজার, বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা, বিভিন্ন প্রাণীর মলমূত্র, খাল, বিল ও নদীতে পড়ে পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে ফুসফুস, পাকস্থলী ক্যান্সার ও লিউকোমিয়া রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্য, অ্যাসিড, বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য নদীর পানির সঙ্গে ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়ে মাটি দূষিত হচ্ছে। ঢাকার শব্দদূষণের কথা না বললেই নয়। বাস-ট্রাক, রেলগাড়ি, হর্নের শব্দ, বিমানের বিকট শব্দ, শিল্পকারখানার শব্দ, মাইকের শব্দ, যানজট, জনসভায় মানুষের কোলাহলের শব্দ ঢাকার মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। শব্দদূষণের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস, মাথাব্যথা, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাস করতে হলে বিশেষ করে ঢাকায় দূষণমুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। সবাইকে পরিবেশ দূষিত করে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। দূষণ প্রতিরোধের পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমরা নিজেরা বেশি করে গাছ লাগাব আর অন্যকে গাছ লাগানোয় উৎসাহিত করব। গাড়ির ক্ষতিকর ধোঁয়া বন্ধ রাখার চেষ্টা করা এবং অন্যকে এ ব্যাপারে সচেতন করা। ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলা এবং বর্জ্য পদার্থ যেখানে সেখানে নিষ্কাশিত না করা। শিল্পকারখানা, গৃহস্থালি ইত্যাদির বর্জ্য পদার্থ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে। সর্বোপরি পরিবেশ দূষণরোধে সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনার সঙ্গে জনগণের সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
সাকিবুল হাছান, শিক্ষার্থী
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা