

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এতে ঢাকায় চারজনসহ সারা দেশে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। গতকাল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এটি বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পর থেকে চারদিকে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অনেকের ধারণা এরপর হতে পারে এমন ভূমিকম্প। এ ধারণা ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় সমগ্র বাংলাদেশকে মোট ৩টি জোনে ভাগ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে উচ্চ ঝুঁকির আওতাভুক্ত অঞ্চলকে জোন-১, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জোন-২ এবং জোন-৩-এর এলাকা নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। এক মানচিত্রে দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত মানচিত্রে দেখা যায়, দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা জোন-১-এর আওতায় সর্বোচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। ফল্ট লাইন বা প্লেট বাউন্ডারির কাছাকাছি অঞ্চলগুলো ভূমিকম্পের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৯টি জেলা, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির নানা এলাকা উচ্চঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে জোন–৩ এলাকাভুক্ত খুলনা, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম।
রাজধানীজুড়ে প্রায় ২১ লাখ ৪৬ হাজার ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নগর সংস্থাগুলো। এসব ভবনের বেশিরভাগই নির্মাণ হয়েছে নিয়মকানুন না মেনে, পুরোনো নকশায় বা দুর্বল ভিত্তির ওপর। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে সতর্ক করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুক্রবারের ভূমিকম্প ঢাকা থেকে খুব কাছে ও কয়েক দশকের মধ্যে মাত্রা বেশি হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ কম্পন অনুভব করেছেন এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি ও জাইকার এক যৌথ জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে। এ ছাড়া ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তূপ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের অবস্থান ইন্ডিয়ান প্লেটে এবং এই প্লেট উত্তরপূর্ব দিকে এগোচ্ছে। সিলেটের উত্তরে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট, যেটি দক্ষিণমুখী। এই দুই প্লেট একটি অন্যটিকে চাপ দিচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পূর্ব দিকে মিয়ানমার সাবপ্লেটেও সাবডাক্ট হয়েছে, উত্তরে ডাউকি ফল্ট আছে এবং পূর্বে মিয়ানমারের সাগাইং ফল্ট, মধুপুর ফল্ট থাকায় ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকার একেবারে কাছেই ছিল, ফলে অনুভূত হয়েছে অনেক বেশি। চট্টগ্রামের রাঙামাটি বা খাগড়াছড়িতে যদি ৭ মাত্রার ওপরেও ভূমিকম্প হয়, তাহলে আমরা ঢাকায় এতটা ঝাঁকুনি অনুভব করি না। তবে এই ভূমিকম্পের স্থায়িত্বকাল আর ৫-৭ সেকেন্ড বেশি হলেই ঢাকার অনেক ভবনই ধসে পড়ত। এ ধরনের ভূমিকম্পের সম্মুখীন ঢাকা ও আশপাশের এলাকা আগে কখনো হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণভাবে মনে হতে পারে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প থেকে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প মাত্র এক পয়েন্ট বেশি; কিন্তু বিষয়টি এমন না। ৫ মাত্রার চেয়ে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের কম্পনের প্রবণতা ১০ গুণ বেশি। এখানে প্রতিটি ভগ্নাংশ মানে এর তীব্রতা তত গুণ বেশি। ফলে এই ভূমিকম্পের প্রবণতা বা তীব্রতা অন্তত ১০০ কিলোমিটার রেডিয়াসে থাকে।’
মন্তব্য করুন