মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২
নবাব শাহজাদা
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৬ এএম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিক

ভাষা ও সাহিত্যের মিলনমেলা—একুশে বইমেলা

ভাষা ও সাহিত্যের মিলনমেলা—একুশে বইমেলা

ফেব্রুয়ারি এলেই ঢাকা শহরের বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এক ভিন্ন আবহে সেজে ওঠে। সারা দেশের পাঠক, লেখক, প্রকাশক এবং সংস্কৃতিমনা মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে প্রাণের মেলা—অমর একুশে বইমেলা। একদিকে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী মাস, অন্যদিকে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ—এ দুয়ের সমন্বয়ে একুশে বইমেলা হয়ে ওঠে বাঙালির আবেগের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু বই কেনাবেচার মেলা নয়; বরং এটি আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির এক বিশাল উৎসব। শুধু পাঠক-লেখকদের মিলনই ঘটে না, বরং একটি জাতির সৃজনশীলতা ও মননশীলতার প্রতিফলন ঘটে।

একুশে বইমেলার শুরুটা হয় বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের চেতনা থেকে। এ মেলা ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে এর সূচনা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি নিয়মিত রূপ পায় ১৯৭৮ সালে। ভাষা আন্দোলনের চেতনা সামনে রেখে এ মেলার বিস্তৃতি ঘটে ধাপে ধাপে আর এখন এটি শুধু বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক সাহিত্য-সংস্কৃতিরও এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি জুড়ে চলা এ মেলা শুধু বই প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং লেখক-পাঠকের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি করে। এখানে প্রতিদিনই নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়, সাহিত্য আড্ডা বসে, আলোচনা সভা হয়, যেখানে সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে মতবিনিময় চলে। ফলে একুশে বইমেলা হয়ে উঠেছে এক বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কেন্দ্র, যেখানে নতুন প্রজন্মের লেখকরা নিজেদের সৃজনশীলতা তুলে ধরার সুযোগ পান।

বইমেলার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি শুধু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আয়োজিত মেলা নয়, বরং একটি আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতা। একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগের চেতনা ধারণ করেই এ মেলা গড়ে উঠেছে, যেখানে ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি মানুষের ভালোবাসা গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়। এখানে নানা ধরনের বই প্রকাশিত হয়—কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গবেষণা, শিশুতোষ সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাসসহ নানা বিষয়ে বই পাওয়া যায়। ফলে পাঠকের চাহিদা ও রুচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেলাটিও ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে।

বইমেলা শুধু শহরের নয়, সারা দেশের পাঠকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাঠকরা তাদের প্রিয় লেখকের নতুন বই সংগ্রহ করতে ভিড় করেন। তরুণ লেখকদের জন্য এটি বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। কারণ তারা সরাসরি পাঠকের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেন। পাঠক-লেখকের এ মেলবন্ধন বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি নতুন লেখকদের আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রও প্রসারিত করে। বিশেষ করে নতুন প্রকাশনাগুলো এ মেলার মাধ্যমেই পাঠকদের কাছে পরিচিতি লাভ করে।

এ মেলায় প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে সাহিত্যিক মান নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। অনেকেই বলেন, মেলায় বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছুটা বাণিজ্যিক মনোভাব কাজ করে। ফলে অনেক বই কাঙ্ক্ষিত মান ধরে রাখতে পারে না। তবে এটি যেমন সত্য, তেমনি এটিও সত্য যে, বইমেলা না থাকলে নতুন লেখকদের জন্য প্রকাশনার সুযোগ সীমিত হয়ে যেত। তাই একদিকে যেমন গুণগত মান বজায় রাখা জরুরি, তেমনি নতুন লেখকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিত করাও প্রয়োজন।

বইমেলার পরিবেশ প্রতি বছরই উন্নত হচ্ছে। বাংলা একাডেমি ও সরকার মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। ই-টিকেটিং, ডিজিটাল ক্যাটালগ, মোবাইল অ্যাপসহ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি পাঠকদের জন্য মেলায় আসা আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পাশাপাশি নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা পাঠাগার, প্রবীণদের বসার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার ও বিশ্রামের জায়গা যুক্ত হওয়ায় মেলার পরিবেশ আরও মনোরম হয়ে উঠেছে।

একুশে বইমেলা শুধু এক বা দুটি প্রজন্মের জন্য নয়, এটি বাঙালির সার্বজনীন উৎসব। এটি শুধু বই কেনাবেচার স্থান নয়, বরং এটি একটি চেতনার নাম, যা আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে। বাংলা ভাষার বিকাশ, নতুন লেখকদের উত্থান, পাঠকদের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা—সবকিছু মিলিয়ে এ মেলা হয়ে উঠেছে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যা যুগ যুগ ধরে আমাদের সাহিত্যের পথচলা সমৃদ্ধ করে চলেছে।

নবাব শাহজাদা, শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জয়পুরহাট জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ

শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান

‘ড. তোফায়েলের শূন্যতা বহু দশক অনুভূত হবে’

আওয়ামী লীগ নেত্রী কেকার মরদেহ উদ্ধার

স্থানীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আনোয়ারুজ্জামানের

পূজা পরিষদ ও মহানগর কমিটির প্রত্যাশা / সংকট সমাধানে এক হয়ে কাজ করার নজির অব্যাহত থাকুক

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে : পিএনপি

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় প্রোটিয়াদের কাছে বাংলাদেশের হার

নিষিদ্ধ হওয়া ভিডিও নির্মাতাদের সুখবর দিল ইউটিউব

জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে জামায়াতের অংশগ্রহণ

১০

‘ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াও আমাদের দিনে দাঁড়াতে পারবে না’ 

১১

রিপন মিয়াকে প্রাণনাশের হুমকি

১২

ঢাবি সাদা দলের বিবৃতি / এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ অপ্রত্যাশিত

১৩

৪৮ জেলার ৪৩৫ স্পটে হত্যাকাণ্ড ঘটায় পুলিশ-যুবলীগ : তাজুল ইসলাম

১৪

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল জামায়াত নেতার

১৫

ইয়ামালের জন্য আল হিলালের ৫২৬০ কোটি টাকার প্রস্তাব!

১৬

অতিরিক্ত সিম স্বেচ্ছায় বাতিল না করলে যা করবে বিটিআরসি

১৭

‘দ্বাদশ ব্যক্তি’ হামজাদের প্রতিপক্ষ

১৮

জনগণের আমানত রক্ষায় জমিয়ত সর্বদা সচেষ্ট থাকবে : মোহাম্মদ আলী

১৯

স্বর্ণে সর্বোচ্চ দামের নতুন ইতিহাস, ভরি কত

২০
X