মেজর (অব.) ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কাবা শরিফ

কাবা শরিফ

পবিত্র কোরআনের তৃতীয় সুরা আল ইমরানের ৯৬তম আয়াতে উল্লিখিত আছে যে, ‘নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ইবাদত গৃহটি নির্মিত হয়, সেটি বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত। তাকে কল্যাণ ও বরকত দান করা হয়েছিল এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়েতের দিশারিতে (কেন্দ্রে) পরিণত করা হয়েছিল।’ আর এই পবিত্র গৃহ (কাবা) নির্মাণের তথ্য রয়েছে পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সুরা বাকারার ১২৭ নম্বর আয়াতে, যেখানে বলা হয়েছে, হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) কাবাগৃহের ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। পরবর্তীকালে যুগের পরিক্রমায় তা অবিশ্বাসীদের দখলে চলে যায়। বিভ্রান্ত এ মানুষদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার জন্যই পৃথিবীতে মহানবী (সা.)-এর আগমন ঘটে। তবে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা এবং মূর্তি পূজার বদলে পবিত্র কাবাঘরে নামাজ আদায়ের প্রথা চালু করতে মহানবী (সা.)-কে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ৬১০ সালে নবুয়ত লাভের পর থেকেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কাবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু বংশ পরম্পরায় মূর্তি পূজায় অভ্যস্ত মক্কাবাসী তা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। বরং মহানবী (সা.)-এর কণ্ঠরোধ, একঘরে করে রাখা এমনকি তাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। ৬১৯ সালে মহানবী (সা.) তার প্রিয়তমা স্ত্রী ও অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত মা খাদিজা (রা.)-এর মৃত্যু ঘটে। একই বছর তিনি তার আশ্রয়দাতা এবং এতিম জীবনের অবলম্বন চাচা আবু তালিবকে হারান। ফলে হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজের নিরাপত্তা ও ইসলামের স্বার্থে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় শক্তি সঞ্চয় করে ৬২৯-৩০ সালের রমজান মাসে মক্কায় ফিরে আসেন এবং মক্কানগরী জয় করে পবিত্র কাবাঘরে প্রবেশ করেন। কাবাঘর তখন দেব- দেবীর মূর্তি ও চিত্রকলায় পরিপূর্ণ ছিল। মহানবী (সা.) তার প্রিয় উটে বসেই হাতের লাঠির সাহায্যে বেশ কিছু মূর্তি মাটিতে ফেলে দেন। মূর্তির অনেক শক্তি এবং মূর্তিই তাদের রক্ষাকারী বলে বিশ্বাস ছিল মক্কাবাসী মূর্তি উপাসকদের। কিন্তু চোখের সামনে এসব মূর্তির মাটিতে লুটিয়ে পড়া এবং খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যাওয়া দেখে সে বিশ্বাস নিমিষেই উবে যায়। অন্যদিকে সাধারণ ক্ষমা ও মুসলমানদের উদারতায় মুগ্ধ হয়ে মক্কাবাসী দলে দলে ইসলামের পতাকাতলে জড়ো হতে থাকে। মহানবী (সা.) তার প্রিয় সাহাবি হজরত বিলাল (রা.) এর মাধ্যমে কাবা চত্বরের মূল ঘরের চাবি সংগ্রহ করেন এবং কাবার ভেতরে থাকা এসব মূর্তি ও দেব-দেবীর ছবি অপসারণ করেন। জমজম কূপের পবিত্র পানি দিয়ে কাবাঘরের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে আঁকা সব ছবি ধুয়ে ফেলা এবং মুছে দেওয়া হয়। এ সময় জোহরের নামাজের সময় হলে হজরত বিলাল (রা.) কাবাঘরের ওপর দাঁড়িয়ে তার স্বভাবজাত আবেগী ও সুরেলা কণ্ঠে উচ্চৈঃস্বরে আজান দেন। এই আজানের পর মহানবী (সা.) তার সঙ্গীদের নিয়ে কাবাঘরে জোহরের নামাজ আদায় করেন। পরবর্তীকালে তিনি যতদিন মক্কায় ছিলেন, প্রায় ততদিনই কাবা চত্বরে নামাজ আদায় করেন। তাই কাবা আজ ‘বায়তুল্লাহ’ বা আল্লাহর ঘর এবং ‘মসজিদ আল হারাম’ বা পবিত্র মসজিদ নামে সুপরিচিত এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত। একাধিক হাদিস মতে, কাবা চত্বরে এক রাকাত নামাজ আদায় করলে অন্যত্র এক লাখ রাকাত নামাজ আদায়ের সওয়াব লাভ করা যায়।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত মেজর। গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘আ.লীগ আমলে হওয়া বিদ্যুৎ সংক্রান্ত দেশি-বিদেশি সব চুক্তি পর্যালোচনা করা হবে’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা / তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার

যুদ্ধ থামাতে রাশিয়াকে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাম্প

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা

ফিটনেস ঠিক রাখতে কী খান কারিনা

সেদিন কার কথা শুনে কেঁদেছিলেন রেখা?

ক্রেডিট কার্ড নিতে চান? জেনে নিন কী কী কাগজপত্র দরকার, কারা পাবেন

জনগণই ঠিক করবে কে কাকে লাল কার্ড দেখাবে : ডা. জাহিদ

আমাদের সকলে মিলেই সফল হতে হবে : আলী রীয়াজ

১৭ জুলাই সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা ঢাবি উপাচার্যের

১০

বিদেশি নম্বর থেকে আসা ফোনকল ধরলেই বিপদ, কীভাবে নিরাপদ থাকবেন

১১

‘সিআইডি’ তারকাদের পারিশ্রমিক, কে কত পান?

১২

ঘুষ দিয়ে পিয়নের চাকরি, বেতন না পেয়ে যুবকের কাণ্ড

১৩

গবেষণা / সঙ্গী খোঁজা, মিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে মাছেরা 

১৪

পালমার শেখালেন কখনো কখনো ছেড়ে যাওয়াটাই উত্তম

১৫

এইচএসসি পরীক্ষায় দায়িত্বে গাফিলতি, আশুলিয়ায় কেন্দ্রপ্রধান বরখাস্ত

১৬

বনানীতে পথশিশুকে ধর্ষণ

১৭

সাত কলেজে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি শিগগিরই, পরীক্ষা আগস্টের শেষে

১৮

ঢাকাতেই এসিসি বার্ষিক সভা, ভারতকেও আশা করছে বিসিবি

১৯

ইসরায়েলের সীমান্তের কাছে এগিয়ে গেল সিরিয়ার ট্যাংক, অতঃপর...

২০
X