জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) দেশের অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করছে। তবে আজও বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো আবাসন সংকট। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে ছাত্রদের জন্য নিজস্ব কোনো আবাসিক হল নেই। মেয়েদের জন্য আছে মাত্র একটি হল, যেখানে স্থান সংকুলান সংকট তো আছেই, সেইসঙ্গে রয়েছে গ্যাস সংকট, রান্নার চুলার জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা, নিম্নমানের খাবারসহ নানা ভোগান্তি।
ছেলেদের জন্য একসময় একটি হল থাকলেও তা এখন দখলদারদের কবলে। ফলে জবির অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে নিরুপায় হয়ে পুরান ঢাকার উচ্চভাড়া ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মেস কিংবা বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। এসব স্থানে নিরাপত্তার অভাব, জীবনের ঝুঁকি এবং অতিরিক্ত খরচ শিক্ষার্থীদের জীবন কঠিন করে তোলে। টিকে থাকার জন্য অনেক শিক্ষার্থী স্বল্প বেতনের টিউশনি বা খণ্ডকালীন কাজ করতে বাধ্য হয়। যার ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। বিশেষ করে, আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভুগছে এসব সমস্যায়। কারও কারও জন্য মাস শেষে ভাড়া মেটানোই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম হয় তাদের পক্ষে। কেউ কেউ এতটা নিরুপায় হয়ে পড়ে যে, পুনরায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। শুধু আবাসনের জন্য তাদের এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
আরও কষ্টের বিষয় হলো—কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, নরসিংদীর মতো দূরবর্তী এলাকা থেকে কিছু শিক্ষার্থী প্রতিদিন যাতায়াত করে ক্লাস করছে শুধু ঢাকায় বাসা ভাড়া মেটাতে পারবে না বলে। এতে তাদের মানসিক ও শারীরিক চাপ বেড়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলছে পড়াশোনার ওপর।
একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হল না থাকা শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং মানসিক বিকাশে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে—এতে কোনোই সন্দেহে নেই। এটি একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে; একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ে হতাশা ও ক্ষোভ।
এ পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। কেরানীগঞ্জে যে নতুন ক্যাম্পাস তৈরি হচ্ছে, সেখানে যেন দ্রুত অস্থায়ী হলেও আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের তালিকা করে অন্তত একটি ন্যায্য ভাতা চালুর চিন্তাও করা যেতে পারে। পাশাপাশি নতুন হল নির্মাণে সরকারকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
একটি গর্বের বিদ্যাপীঠ হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন টিকে থাকার সংগ্রাম সত্যিই দুঃখজনক। এ সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মোসা. মিশকাতুল ইসলাম মুমু
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন