খায়রুল আনোয়ার
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ০৭:৩১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভুল করে নেমেছে ভুল জলে

ভুল করে নেমেছে ভুল জলে

দেশকাঁপানো জুলাই অভ্যুত্থানে সফল নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দুই মাসের বেশি সময় পার করল। দল গঠনের প্রাক্কালে দেশজুড়ে আগ্রহ ও কৌতূহল উসকে দেওয়া এনসিপি সম্পর্কে লিখতে গিয়ে কবি রফিক আজাদের একটি কবিতার কথা মনে পড়ে গেল। কবিতাটি এরকম, ‘বালক ভুল করে পড়েছে ভুল বই, পড়েনি ব্যাকরণ, পড়েনি মূল বই। বালক জানে না তো সময় প্রতিকূল, সাঁতার না শিখে সে সাগরে ঝাঁপ দেয়, জলের চোরাস্রোত গোপনে বয়ে যায়, বালক ভুল করে নেমেছে ভুল জলে।’

গণআন্দোলনের তরুণদের দল গঠন ভুল সিদ্ধান্ত নয়। বরং বছরের পর বছর ধরে যে রাজনীতি চলছে, তা বদলে দিতে তরুণদের আরও বেশি বেশি করে রাজনীতিতে আসা দরকার। তবে এনসিপি যে প্রস্তুতি নিয়ে গঠন করা হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ভুলের আলমত দেখা যাচ্ছে। এনসিপির কেউ বালক নন। তরুণ ও যুবাদের নেতৃত্বেই এই দল গঠিত হয়েছে। এনসিপির অনেক নেতার রাজনীতি নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা আছে। সভা-সমাবেশ ও টিভি টকশোতে অনেকে ভালো বক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এনসিপি নেতারা নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে চান। তারা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলছেন। প্রচলিত রাজনীতির অনেক বিষয়কে তারা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে চলেছেন। তবে দিন যত যাচ্ছে সময় তাদের জন্য প্রতিকূল হয়ে দেখা দিচ্ছে। দল গঠনের কিছুদিন পর থেকেই নানাবিধ বিতর্ক, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এনসিপির পিছু ছাড়ছে না। নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ্যে চলে আসছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হতে পারে, নতুন রাজনীতির কথা বললেও এনসিপি যেন পরিচিত ছকে পুরোনো রাজনীতির পথেই হাঁটছে। সাঁতার না জেনেই যেন রাজনীতির সাগরে ঝাঁপ দিয়েছেন এনসিপি নেতারা। চোরাস্রোত ঠেলে তারা তীরে পৌঁছাতে পারবে কি না, তা নিয়ে এরই মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন অবসানের লক্ষ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ের ৩৬ দিনের আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের উদ্যোগে গঠিত দল নিয়ে জনমনে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা এখন ম্লান হতে শুরু করেছে। কিন্তু কেন এমন হলো, এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে বড় জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জমায়েতের ঘোষণাপত্রে দলের লক্ষ্য ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। তথ্য উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এসে দলটির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম সেদিন সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সামনে রেখে, জনগণের স্বার্থ সামনে রেখে রাষ্ট্র বিনির্মাণ করব। আগামীর কথা বলতে চাই। পেছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চাই।’ যে সম্ভাবনার কথা বলে এনসিপি নেতারা জনমনে নতুন প্রত্যাশা তৈরি করেছিলেন, তা পূরণের লক্ষ্যে তারা এ পর্যন্ত কতখানি অগ্রসর হতে পেরেছেন? এ ক্ষেত্রে আশা জাগানিয়ার মতো কিছু বলা যাচ্ছে না। শুরুতেই এনসিপি কিংস পার্টি কি না, এ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের তিনজন নেতা প্রফেসর ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হন। নাহিদ ইসলাম ছিলেন তাদের অন্যতম। আর এ কারণেই বিতর্কের সূত্রপাত। সরকারে থেকে তারা দল গোছাচ্ছেন, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ অভিযোগ উত্থাপন করে। অভ্যুত্থানের নেতারা এর পাল্টা জবাবে বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে সফল কিংস পার্টি হলো বিএনপি। সবচেয়ে নিপীড়িত দলেরও একটি বিএনপি। তাদের এ দুটি দিকে আমরা দেখি।’ এ নিয়ে বাহাস চলতেই থাকে। তারা রাজনীতিতে নতুন বন্দোবস্তের কথা বলছেন। ফ্যাসিবাদী শাসন পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ যাতে না পায়, সেজন্য জুলাই অভ্যুত্থানের নেতারা নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করছেন। আর এজন্য সংসদের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানান তারা। তবে সময় না গড়াতেই এনসিপি নেতারা নানা ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এনসিপি জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কার এবং জুলাই গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে উচ্চকিত। অথচ দলের নেতাদের অনেকেই এলাকায় রীতিমতো নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা তার এলাকায় শতাধিক গাড়ি বহর নিয়ে শোডাউন করেছেন। আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা জামায়াতের সমর্থক এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দামি গাড়ি নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন। অনেকের বিরুদ্ধে সচিবালয়ে তদবির-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পছন্দের জায়গায় বদলি করানো, ডিসি পদে পদায়ন, বড় বড় ঠিকাদারকে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া ইত্যাদি অসংখ্য অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে একজনের কথা উল্লেখ করা যায়। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। জেলা প্রশাসক নিয়োগে অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই ছাপার কাগজে কমিশন-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুরুতে আমলে না নিলেও তানভীরের কার্যকলাপ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠলে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এনসিপির সাধারণ সভায় অনেক নেতা সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ ওঠে আর্থিক অস্বচ্ছতার। কারও কারও নেতৃত্ব নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। এনসিপির কোনো কোনো নেতার তদবির-বাণিজ্য নিয়ে প্রকাশ্য সমালোচনাও আছে। গত ২৪ এপ্রিল ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান বলেন, ‘সবাই সবার জায়গা থেকে বাণিজ্য করছে। অভ্যুত্থানের আট মাস পর আমার উপলব্ধি, আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। মামলা-বাণিজ্য হচ্ছে। কারা করছে সবই বুঝি।’

সংগঠন বিস্তারেও এখন পর্যন্ত সাফল্য দেখাতে পারেননি এনসিপি নেতারা। অনেক জায়গায় কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছে। নতুন কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও কমিটি নিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতার সামনে মারামারি পর্যন্তও হয়েছে। এনসিপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা তার এলাকায় বিশাল গাড়িবহর নিয়ে শোভাযাত্রা করেছেন, যা বড় রাজনৈতিক দলের পুরোনো ধাঁচের রাজনীতির কথা মনে করিয়ে দেয়। রাজধানীর দামি ভবনে দলীয় কার্যালয় স্থাপন, পাঁচ তারকা হোটেলে ইফতার আয়োজন, কোনো কোনো নেতার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দামি গাড়ির উপহার পাওয়ার ঘটনা গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে সমালোচনার রসদ জোগাচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে এনসিপি নেতারা নিজেদের মধ্যেও বিতর্কে জড়িয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ফেসবুকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের ভিন্ন বক্তব্যের কথা মনে করা যেতে পারে। তাদের পোস্টের ভিন্নতা নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। এমনকি দলের ভেতরেও এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

আত্মপ্রকাশের জমায়েতে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ম্যানিফেস্টো হাজির করতে পারেনি দলটি। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনমুখী রাজনীতির প্রবণতার প্রবল বিরোধিতা করলেও এনসিপির অনেক নেতা এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করে চলেছেন। সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কার বাস্তবায়ন করে গণপরিষদ নির্বাচন ও গণহত্যার বিচারের দাবি জারি রাখলেও দলের ৩৫ নেতা আসন গোছাচ্ছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। তারা মাঝেমধ্যেই ভোটের মাঠে ছুটছেন। কোথাও কোথাও তারা বাধা ও হামলার মুখে পড়ছেন। হামলার ঘটনা ইতিবাচক বিবেচনা করে তারা মনে করছেন যে, এতে করে এনসিপির প্রতি সহানুভূতি বাড়বে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—এনসিপি রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষ কতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে? নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলা দলটির সঙ্গে জনগণ নৈকট্য অনুভব করবে—এমন কিছু কি এনসিপি এখন পর্যন্ত দেখাতে পেরেছে? জাতীয় রাজনীতি নিয়ে তাদের নতুন নতুন চিন্তাভাবনা, এজেন্ডা, দাবিদাওয়া থাকলেও এতে সাধারণ মানুষের জন্য কর্মসূচি কোথায়? শিক্ষা নিয়ে এনসিপি নেতাদের ভাবনা কী, সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সহজলভ্য হবে কীভাবে, কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য দাম পাবে কোন পন্থায়—এসব বিষয়ে এনসিপির কর্মসূচির কথা জনগণের জানা নেই। এনসিপির কিছু কিছু সভা-সমাবেশে কম জনসমাগমের খবর সামাজিকমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। দল গড়ার আগে যা দরকার ছিল, তরুণ নেতৃত্ব সেদিক মনোযোগ দেননি বলেই মনে হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু সভা-সমাবেশ করলেও ব্যাপকভাবে তা হয়নি। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া গ্রামগঞ্জে, হাটবাজারে, ফসলের মাঠে, শহর-বন্দরে, শিক্ষাঙ্গনে, শিল্পাঞ্চলে, খেটে খাওয়া মানুষের ডেরায় তরুণ নেতারা ছুটে যেতে পারতেন। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রনেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার নারী রাজপথে নেমেছিলেন। নারীদের নিয়ে এনসিপির চিন্তাভাবনার কথা নারীরা কি জানেন? বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমস্যা, আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা কি শোনা হয়েছে? ভোট দেওয়ার পর আরেক ভোট পর্যন্ত যারা উপেক্ষিত থাকেন তাদের কথা, অভাব অভিযোগ সরাসরি তাদের মুখ থেকে শোনা ও জানাকে কর্মসূচি হিসেবে নিলে নতুন দলটি জনমনে সাড়া জাগাতে পারত। এনসিপি প্রচলিত রাজনীতির বিকল্প হতে চাইছে। অথচ দলটি এখন পর্যন্ত রাজনীতির পুরোনো পথেই হাঁটছে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমি থাকাকালে চীন তাইওয়ানে হামলা করবে না : ট্রাম্প

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক চলাকালে ইউক্রেনে ৮৫ ড্রোন হামলা

গাজীপুরে সাত মাসে সড়কে প্রাণ গেছে ৩৪ জনের

ঢাকায় আনা হলো হাতির আঘাতে আহত চিকিৎসকদের

খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে ক্যালিফোর্নিয়ায় দোয়া মাহফিল

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফিচার, জেনে নিন কী থাকছে

জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কেউ আর আটকতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে : গোলাম পরওয়ার

ইংল্যান্ডের ১৩৬ বছরের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছেন বেথেল

১০

দেশে আরেক চেতনার উদ্ভব হয়েছে : রিজভী

১১

বানানীতে রাব্বি হত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল র‌্যাব

১২

তরুণদের রক্তে ফিরতে পারে ত্বকের তারুণ্য

১৩

গণতন্ত্রের জন্য জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে : সালাহউদ্দিন 

১৪

শরতের প্রথম দিন আজ

১৫

বিপুল অস্ত্র উদ্ধার, রাজশাহীতে বাড়ি ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী

১৬

কোনো যুদ্ধবিরতি, ‍কোনো চুক্তি হয়নি : বৈঠকের ফল ‘শূন্য’

১৭

৬৩ বছরে পা রাখতেন রক লেজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু

১৮

টাকার বিনিময়ে শেখ মুজিবকে নিয়ে পোস্ট? সামনে এলো সত্য ঘটনা

১৯

যমুনায় দ্রুত বাড়ছে পানি, প্লাবিত নিম্নভূমি

২০
X