সীতার গণ্ডির মতো নির্বাচনের বৃত্ত ডিসেম্বর-জুন পেরিয়ে এপ্রিলের প্রথমার্ধের খোলসে প্রবেশ করেছে। কিন্তু আগের মতোই এর কোনো যৌক্তিক কারণ সরকার বলেনি। ফলে তা অনেকের বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয় কালক্ষেপণের ধারণার বলয়েই থেকে গেছে। এরপরও আশায় বুক বেঁধে, সাধারণভাবে বিষয়টি নির্বাচনের সুবাতাস হিসেবেই দেখা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনের মৃদু বাতাসে আশঙ্কা কেটেছে কি? এদিকে আগে মহা বন্ধুরাষ্ট্রের সীমান্ত দিয়ে আসত গরু, এখন আসে আদম সন্তান। পুশইন। আর এবার পানির যে আলামত দৃশ্যমান, তাতে আসন্ন বর্ষায় বন্ধুর কারসাজিতে বাংলাদেশ জলে ভাসা পদ্মপাতার মতো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। শুধু এই নয়, দেশের সংকটের অন্ত নেই। এরপরও আমাদের আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে রাজনীতি। ডিসেম্বর-জুনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এপ্রিলকে নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারও কারও ‘এপ্রিল ফুল’ বিবেচনার বাইরে রাখা যাক। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, দেশ কি নির্বাচনের বাতিঘরের দিকে যাচ্ছে নাকি চলমান সংকট আরও ঘনীভূত হবে? এ আলোচনা যখন বেশ জোরালো হচ্ছিল, তখন ৬ জুন জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা জানালেন, জাতীয় নির্বাচন হবে ২০২৬-এর এপ্রিলের প্রথমার্ধে। প্রধান উপদেষ্টা প্রকারান্তরে আগের সীমানার মধ্যেই থেকেছেন। আর বরাবরের মতো জামায়াত ও এনসিপি এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের জবানিতে দলটি প্রকাশ করেছে হতাশা। পরে ৭ জুন সকালে চন্দ্রিমা উদ্যানে দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন জাতির জন্য মঙ্গলজনক। গরম-বৃষ্টি চিন্তা করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া উচিত ছিল সরকারের।’ ভাবখানা যেন এই, বিএনপির প্রত্যাশা পূরণের জন্যই ড. ইউনূস বাঘের পিঠে উঠেছেন!
উল্লেখ্য, জাপান সফরকালে সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করার আগের বক্তব্যই তুলে ধরেছিলেন। আরও একধাপ এগিয়ে জাপানে নিক্কেই ফোরামের প্রশ্নোত্তর পর্বে গত ২৯ মে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেছিলেন, ‘সব দল নয়, একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়।’ তিনি বিএনপিকে লক্ষ্য করেই এ কথা বলেছেন—এটি স্পষ্ট। এদিকে ২৮ মে নয়াপল্টনে সমাবেশে সংযুক্ত হয়ে পোড়খাওয়া রাজনীতিক তারেক রহমান বলেছেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ তার কণ্ঠে আলটিমেটামের সুর ও অথরিটির দৃঢ়তা বেশ স্পষ্ট। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ৩১ মে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ‘সংস্কারের কলা’ দেখাচ্ছে। একই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘আসলে আমরা মানুষ চিনতে ভুল করেছি।’ রাজনীতির গভীর আলোচনায় তারেক রহমানের বক্তব্য এবং সাধারণ আলোচনায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মর্মপীড়া প্রভাবিত উচ্চারণ বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে আলটিমেটাম ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে এবং এ চাপ অনেকটাই সফল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, চাপে নয়, সরকারের ছকেই আছে বিএনপি। এদিকে জনগণ মনে করে, ডিসেম্বর থেকে জুনের সাত মাসের সীমানা পেরিয়ে এপ্রিলের আধা মাসের খোলসে সীমিত হয়েছে জাতীয় নির্বাচন। এরপরও প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে, নির্বাচন হবে তো? আর জাতীয় নির্বাচন অর্থ কি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নাকি অন্য জাতীয় নির্বাচন! এদিকে প্রশ্ন হচ্ছে, এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণার পরও আগের মতোই ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য কেন চাপ অব্যাহত রেখেছে বিএনপি? বাস্তবে কতটা চাপ তৈরি করতে পারবে দলটি? নির্বাচনের সময়ের ব্যাপারে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়ে এগোতে গিয়ে দেশের চলমান জটিল রাজনীতিতে বিএনপি একা হয়ে পড়বে কি না?
এ প্রশ্নও আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তা ছাড়া এ ঘোষণা বাস্তবতার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, এ প্রশ্নও উঠেছে অভিজ্ঞমহলে। কারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় প্রশ্নে বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে সমান্তরালে হাঁটছে না জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। আবার জামায়াতের সঙ্গে আছে নানান নামের ‘ইয়া আলী’ গ্রুপ। নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের অবস্থানের প্রতি এ দলগুলোর সমর্থন স্পষ্ট। এদিকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বেশ প্রভাব ফেলছে বিএনপির ভেতরে। দলটির নেতারা মনে করছেন, এনসিপির প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষপাতিত্ব আছে। এই দলটি সংস্কার ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার শেষ করার পর নির্বাচন চায়। আর সুদূরপ্রসারী কৌশলী পথে হাঁটছে জামায়াত। এই দুটি দলের সঙ্গে ইসলামপন্থি আরও কিছু দলকে এক অবস্থানে এনে সরকার বিএনপিকে প্রতিপক্ষ বানানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আছে। প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাওয়ার পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার বিষয়কেও সুবিধা হিসেবে দেখছে বিএনপি। কিন্তু এ দুর্বলতা কোন মানদণ্ডে পরিমাপ করা হচ্ছে, সেটি কিন্তু বেশ বড় প্রশ্ন। নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে, এই ধারণা তৈরি হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। একই ধারণা দেশের রাজনীতিতেও আছে। কারণ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে ভোটের মাঠে অন্য কোনো দলকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছে না সাবেক শাসক দলটি। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তৈরি হওয়া সুযোগ বা সম্ভাবনাকে ব্যবহার করে মসনদে আসীন হওয়ার বাসনা মোটেই দোষের নয়। তবে বিএনপিকে ঠেকানোর চেষ্টাও আছে। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে একটি অংশের ক্ষমতার মমতা বেশ স্পষ্ট। এজন্য নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা রয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আগে বলা হতো, ডিসেম্বরের পর আর মাত্র দুই মাস পার করতে পারলে নির্বাচনের দাবি তোলার পরিবেশ নাও থাকতে পারে। এখন বলা হচ্ছে, এপ্রিল আসা পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা দিয়ে অনেক জল গড়াবে। হয়তো এ ধরনের নানান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছিল এবং এখনো অব্যাহত রেখেছে। এজন্য শুধু বক্তব্য নয়, রাজপথেও নামতে পারে দলটি। যার ডেমো হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে দিয়ে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটি অংশ বলছে, রাজধানী থেকে একেবারে অজপাড়া পর্যায় পর্যন্ত দলটির বিএনপির নেতাকর্মীরা দখলবাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ অনেক অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। এ ধরনের অপরাধে জড়িত নেতাকর্মীদের অনেককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সাজাপ্রাপ্ত নেতাকর্মীর সংখ্যা অন্তত তিন হাজার। কিন্তু প্রত্যাশিত মাত্রায় লাগাম টানা গেছে মনে হয় না। এ পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের একটি অংশ বিএনপির বৈষয়িক প্রবণতাকে পতিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে মেলাতে চাচ্ছেন। কেউ বলছেন, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ধারণা করা হচ্ছে, এ পরিস্থিতি পুরোটাই জানা আছে বিএনপির হাইকমান্ডের। এর পেছনের ক্ষমতা কেন্দ্রের কৌশলী ইন্ধনের বিষয়টিও অজানা নয়। এ কারণে দলটি মনে করে, নির্বাচন অনুষ্ঠানে যত দেরি হবে, দলের নেতাকর্মীদের সামলানো তত কঠিন হবে। দখল, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাসহ এ ধরনের অপরাধ বাড়তে থাকবে। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন অপরাধের জন্য বিএনপি থেকে যত বহিষ্কার করা হয়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অধরাই থেকে গেছে। শুধু তাই নয়, মাল্লু কামানোর ধারায় ছুটন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ অন্য কোনো ঘরে আশ্রয় নেওয়ার আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়। লাভজনক সাইনবোর্ড পেলে অন্যরকম বিবেচনা আমাদের রাজনীতিতে নতুন কোনো বিষয় নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আওয়াজ দিয়ে তৃণমূলে যে টোপ শুরুর দিকেই ফেলে রাখা হয়েছে। আর রাজনীতিতে সব যে শুধু আওয়াজ দিয়ে হয়, তা তো নয়। বাতেনেও অনেক কিছু থাকে, ঘটে। যাকে অতিকথনের মনুমেন্ট ওবায়দুল কাদের ‘তলে তলে’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ভাইরাল করে দিয়েছেন। তবে তার ‘কাউয়া’ এতই প্রচার পেয়েছে যে, মানুষ এটি তার নামের সঙ্গেই যুক্ত করে দিয়েছে।
রাজনীতির উল্লিখিত জটিলতার পাশাপাশি ভোট প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গে অন্য দলগুলোর মতপার্থক্য ক্রমাগত বাড়ছে। বাম ঘরানার কিছু দল বিএনপির সঙ্গে স্পষ্টতই আছে। তবে রাজনীতিতে বাম দলগুলোর তেমন কোনো প্রভাব নেই। এদের দাপট মূলত টিভি টকশোর ‘পোস্টার বয়’ হিসেবে। যদিও কারও কারও বিবেচনায় এরা অঘটনঘটনপটীয়সী! তাও আবার অনেকটাই অতীতগাথার মতো। আবার কেউ কেউ মনে করেন, পতিত আওয়ামী লীগও চায় না দ্রুত দেশে নির্বাচন হোক। কারণ নির্বাচন হলে এই দলের কোনো লাভ নেই। এ সুযোগ ব্যবহার করে এনসিপি, জামায়াত ও ইসলামপন্থি দলগুলোকে এক বলয়ে এনে বিএনপির প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর সুযোগ নিতে চায় নেপথ্য কুশীলবরা। এটি বিএনপিও বিবেচনায় নিচ্ছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষক মহলের। ফলে নির্বাচন প্রশ্নে রাজনীতিতে একা হয়ে পড়লেও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য বিএনপি সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার ও নেপথ্য কুশীলবদের কতটা চাপে ফেলতে পারবে বিএনপি? এ প্রসঙ্গে বিগত ১৫ বছরের আমলনামা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এরপরও বিএনপির জন্য সুবিধাজনক বাস্তবতা রয়েছে। এ ধরনের চিন্তা থেকেই মে মাসে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, ‘সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে তাদের পক্ষে সরকারকে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়।’ সহযোগিতা না করার ইঙ্গিত স্পষ্ট। এরপর আসতে পারে অসহযোগিতার আওয়াজও, যা একপর্যায়ে রাজপথে বিরোধিতায় রূপান্তরিত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যদিও এখনো বিএনপির নেতারা বলছেন, সমাবেশ-গণজমায়েতের মতো গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা হবে। সাবেক শাসক দলের নেতাদের ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকার বাধ্য না হলে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবে না। আর এপ্রিলের প্রথমার্ধের সময়সীমাকেও এক ধরনের কালক্ষেপণের কৌশল হিসেবে দেখছেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা। ফলে সরকারকে বাধ্য করার চেষ্টা বিএনপির থাকবেই। এর শানে-নজুল হিসেবে বরিশাল অঞ্চলে একটি কথা প্রচলিত আছে—‘ধাওয়া না খাইলে বিলই গাছে ওঠে না!’
কারোর সংশয় নেই, দেশের মানুষ ১৬ বছর ধরে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ফলে দ্রুত ভোটের দাবি শুধু বিএনপির নয়, এ দাবি জনতার। এ অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যদি দৃঢ় অবস্থানে চলে যায় আর সরকারও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না করে, তবে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেশের রাজনীতিতে নতুন সংকট তৈরির আশঙ্কা করছেন। তবে শেষতক সংকট তৈরি হবে কি না, তা নির্ভর করবে সব পক্ষের আচরণের ওপর। কেউই বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তো থাকেই। পর্যবেক্ষক মহলের আশঙ্কা, সরকার ও বিএনপি কোনো একপর্যায়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেলে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকার একটি দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে মনে করেই বিএনপি নতুন দাবি এনেছে। এবারের সংকট কাটলেও নির্বাচনের ফল নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। বিএনপির মতো একটা বড় দলের দাবিকে সরকার কীভাবে সামলাবে সেটার ওপর নির্ভর করবে নতুন করে কোনো সংকট তৈরি হবে কি না। তার মতে, নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রবল চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ জনআকাঙ্ক্ষা উপেক্ষিত হলে অঘটনের আশঙ্কা থাকেই!
শেষ কথা হিসেবে বলা চলে, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপিকেই যে ‘শুধু একটি দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, তা সবাই বোঝেন এবং এ বক্তব্যে কোনো ভুল নেই। কারণ, দেশে নিবন্ধনকৃত অর্ধশত দলের মধ্যে অবশ্যই একটি দল বিএনপি, একাধিক নয়। যদিও খণ্ডিত করে একাধিক বিএনপি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে বহুবার। লেজ, কখনো আবার টিকি সংযুক্ত করে একাধিক বিএনপি ভূমিষ্ঠও করানো হয়েছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। কিন্তু সেই আগাছা টেকেনি। টিকটিকির লেজের মতো রাজনীতি থেকে খসে গেছে। ফলে চূড়ান্ত বিচারে বিএনপি অবশ্যই একটিমাত্র দল। একেবারেই সহি বাত! সঙ্গে এও সত্য, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে ভারে ও ধারে বিএনপি বাংলাদেশের প্রকাশ্য রাজনীতির এখন অন্তত ১৪ আনা এবং বাকি সব খুচরা পয়সার মতো। মোট দুই আনা। নিশ্চয়ই এ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা খুবই ভালো জানেন। তারপরও খনার বচন উপেক্ষা করে ‘জলে শিলা ভাসি যায়, বানরে সংগীত গায়’ কি বিশ্বাস করেছেন প্রধান উপদেষ্টা! উত্তর জানার উপায় নেই। ধরে নিতে হবে, তার কথায় অন্যরকম গভীরতা আছে, যা আমাদের মতো অতি সাধারণ মানুষের মগজে ঢোকার কথা নয়। তবে এটি সবার মগজেই ঢোকে, নির্বাচন ছাড়া অন্য পথে হাঁটলে হয়তো সামলানো কঠিন হবে। অসম্ভবও হতে পারে!
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মন্তব্য করুন