আগুনে হাত দিলে যে হাত পোড়ে, এ জ্ঞান মানুষের প্রথম আত্মজ্ঞান। আগুন আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এটি শিখেছিল। পরে জানল—কাঁচা মাংস আগুনে ঝলসালে তার স্বাদ বাড়ে। এরও পরে জানল আগুনের উপাদান—তত্ত্বজ্ঞান। কিন্তু আত্মজ্ঞান? তা আজও মানুষের প্রাথমিক স্তরেই রয়ে গেছে। মানুষ চাঁদের খবর জানে, কিন্তু নিজের মনকে জানতে চায় না।
ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞাসা করুন—তাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী? অধিকাংশই নিরুত্তর। কেউ কেউ বলে, ডাক্তার হব। কেন? সিনেমায় দেখেছে, গ্রামে দেখেছে, ডাক্তার মানেই জীবন-মৃত্যুর চাবিকাঠি। সমাজ যা দেখিয়েছে, তাই তারা চায়—টাকা থাকলে সব কেনা যায়। কে কত দামে বিকোয়, সেটাই যেন মূল জ্ঞান।
আত্মজ্ঞান থাকলে তারা জানত, মানুষ জন্মায় নিজস্ব প্রবণতা ও প্রতিভা নিয়ে। সেই জন্মগত গুণাবলিকেই চর্চা ও পরিশ্রমে বিকশিত করতে হয়। আত্মজ্ঞান মানে নিজের সীমা বোঝা। এই সীমা না বুঝেই অনেকে অহংকারী হয়—যা নেই, তা আছে প্রমাণ করতে চায়। দামি পোশাক, সাজসজ্জা, টাকাপয়সা, ক্ষমতা—সবই মিথ্যা পার্সোনালিটির মুখোশ। ‘Persona’ মানেই মুখোশ। মুখোশ পরে মানুষ নিজের আসল মুখটাই ভুলে যায়।
আমরা কী চাই জানি না—আমাদের চালায় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও ধর্মের ব্যবসায়ীরা। তারা যা চায়, সেটাই আমরা করি। অথচ ভাবি করছি আমি!
এ মিথ্যা পরিচয়ের গ্লানি যারা আর বহন করতে চান না, তারা প্রতিদিন একটু সময় রাখুন নিজের জন্য। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন—আমি কে? আমি কী জানি? আমার জ্ঞান, মন, বুদ্ধি, চিন্তা কি পরিশীলিত হয়েছে? আমি কি আজ আগের চেয়ে ভালো মানুষ?
বিদ্যা, অর্থ না থাকলেও ভক্তি, আন্তরিকতা, ঐকান্তিকতা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে। নিজেকে দিন। নিজের মুখোশ খুলে আয়নায় নিজেকে দেখুন।
লেখক: সমাজচিন্তক
মন্তব্য করুন