এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জ বা পুনর্নিরীক্ষার ফল পরিবর্তনের যে অস্বাভাবিক চিত্র দেখা যাচ্ছে, তা নিশ্চিতভাবেই বিদ্যমান পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিকেই ইঙ্গিত করে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সোমবার কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে শিক্ষার্থীরা যে খাতা চ্যালেঞ্জ করেছিল, তার ফল বলছে—চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় চার হাজার শিক্ষার্থী নতুন করে পাস করেছে। খাতা চ্যালেঞ্জের পর পুনর্নিরীক্ষণে ফেল করা সাতজন শিক্ষার্থী পেয়েছে সরাসরি জিপিএ ৫। এ ছাড়া অন্যান্য গ্রেড থেকে নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪৫ জন। গত রোববার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ১১ সাধারণ বোর্ডের প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর খাতা পুনর্নিরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার আবেদন বেড়েছে ৭১ শতাংশ। সব বোর্ডের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণে এবার ১৫ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। ২০২৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৮৭৫ এবং ২০২৩ সালে ১১ হাজার ৩৬২। এক বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৩৬৮ জন বা ৭১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি।
পুনর্নিরীক্ষণে শিক্ষার্থীদের ফল পরিবর্তনের ঘটনা এবারই নতুন নয়। তবে এবারের পরিবর্তনের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ফলে পরিবর্তন আসার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ জানা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে খাতা মূল্যায়ন, অন্যকে দিয়ে খাতা মূল্যায়ন, ভালো পরীক্ষক না পাওয়ার পাশাপাশি খাতা মূল্যায়নে সম্মানী কম হওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেখা গেছে, পরীক্ষকদের খাতা মূল্যায়নের পর নম্বরের যোগফলে ভুল করা; কিছু ক্ষেত্রে উত্তরের নম্বর ঠিকমতো যোগ না করা; এমনকি ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাট করতে গিয়ে অনেকে করছেন ভুল। এ বিষয়ে পরীক্ষকরা জানিয়েছেন, ভুলের অন্যতম কারণ পরীক্ষককে ১০-১২ দিন সময় বেঁধে দেওয়া। এতে খাতা মূল্যায়নে তাড়াহুড়া হয়। এভাবেই দিন দিন বাড়ছে ভুলের পরিমাণ।
প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতি বছরই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে যখন এমনটা ঘটছে এবং ভুলগুলোর পেছনে যখন একই রকমের কারণকে দায়ী করা হচ্ছে, তাহলে এ বিষয়ে কেন যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? খোদ সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে জানা যাচ্ছে, কোনো কোনো শিক্ষককে মাত্র ১০-১২ দিনের সময় দিয়ে ৫০০-৬০০ খাতা দেওয়া হয়! এটা কোনো স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত হতে পারে? একজন পরীক্ষকের পক্ষে কখনো এই স্বল্প সময়ে এত খাতা নির্ভুলভাবে নিরীক্ষা সম্ভব? তার মানে খাতা মূল্যায়নের এ পদ্ধতিটির গোড়ায়ই রয়েছে গলদ। শুধু পরীক্ষকদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর জায়গা নেই। বরং সংকট তৈরি হচ্ছে যেসব নির্দিষ্ট কারণে, সে জায়গাগুলোয় বাস্তবিক উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি পরীক্ষকদেরও হতে হবে আরও আন্তরিক ও দায়িত্বশীল। তাদের উপলব্ধি করতে হবে, খাতা দেখা শুধু কিছু সম্মানীর বিষয় নয়, শিক্ষার্থীদের জীবন-স্বপ্ন তথাপি জাতির অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি কর্ম।
মন্তব্য করুন