ব্রহ্মা চেলানি
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৩, ০৯:১৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্রের অস্বাভাবিক আচরণ বোধগম্য নয়

ব্রহ্মা চেলানি। ছবি : সংগৃহীত
ব্রহ্মা চেলানি। ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র একই সময়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে যে আচরণ করছে, তা বোধগম্য নয়। একদিকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণের অংশ হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে অঘোষিত সামরিক শাসন চললেও সে বিষয়ে একদম চুপ যুক্তরাষ্ট্র। গণতন্ত্রের স্বার্থের কথা বলে এর আগে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, সেটিও যে খুব কাজে দিয়েছিল তা বলা যায় না।

২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ধর্মনিরপেক্ষ একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দ্রুতগতির অর্থনৈতিক উন্নতির পথে নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। যদিও বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির ফলে দেশটির অর্থ ব্যবস্থা বিরূপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টানা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাওয়া দেশ পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে। পাকিস্তান তো প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে। অথচ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানে আয়োজিত ২০২১ এবং এ বছরের শুরুতে ডেমোক্রেসি সম্মেলনের বাইরে রাখা হয়েছে বাংলাদেশকে। পাকিস্তানকে দুবারই আমন্ত্রণ জানানো হলো, যদিও তারা তাতে যায়নি।

এই পরিস্থিতিকে ঠিক কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন একদিকে গণতন্ত্র সুসংহতকরণ উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশের যেসব কর্মকর্তা সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবেন, তাদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে অঘোষিত সামরিক আইন জারি হলেও সে বিষয়ে একদম চুপ থাকে মার্কিন প্রশাসন। অথচ পাকিস্তানে প্রতিনিয়ত গণগ্রেপ্তার, গুম ও নির্যাতন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই প্রশ্নের সংক্ষেপে উত্তর হলো—যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক অধিকার সুসংহতকরণের দীর্ঘ ইতিহাস বলে এটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। ভূরাজনৈতিক অবস্থা-পরিস্থিতি এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। গণতন্ত্র সুসংহত করার কথা বলে এমন বহু জায়গায় মার্কিন নীতিনির্ধারকরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

বাইডেন প্রশাসন এই ভিসা নীতির মধ্য দিয়ে মনে হয় দুটি জায়গা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চেয়েছে। একটি হলো দেশটির রাজনীতিবিদদের আত্মীয়স্বজন অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলেই আমেরিকান গ্রিন কার্ডধারী। তা ছাড়া বাংলাদেশের রপ্তানির বিরাট অংশ পশ্চিমা দেশগুলোতে যায়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের শীর্ষস্থানীয় একটি গন্তব্য। স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতার মেয়ে হাসিনা অবশ্য গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘তারা গণতন্ত্র উৎখাত করতে চায় এবং এমন একটি সরকার বসাতে চায়, যাদের মধ্যে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকবে না। এটি অগণতান্ত্রিক একটি কাজ হবে।’

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমার, ইরান, বেলারুশ ও কিউবায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনে ব্যর্থ হয়েছে। বৈশ্বিক ক্ষমতা কাঠামোয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমহ্রাসমান প্রভাব এসব নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা দিনকে দিন কমছে। যদিও এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলোই বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থার কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ডলার এখনো বিশ্বের রিজার্ভের প্রাথমিক মুদ্রা হিসেবে রয়ে গেছে। ফলে নিষেধাজ্ঞা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে আকর্ষণীয় পন্থা।

ঢাকার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ কড়াকড়ির তেমন কোনো অর্থ মিলছে না। এশিয়ার নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ, তাতে শেখ হাসিনার সরকার বরং যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে কাজ করতে পারে। অথচ বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা করতে গত মাসে শেখ হাসিনা যখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন, বাইডেন প্রশাসনের একজনও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন না।

সিঙ্গাপুরে এ মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বললেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ভ্রু কুঁচকানি বা অঙ্গুলি হেলনের বিপরীতে কিছু করবে না। কিন্তু ঠিকই বাংলাদেশে এমনটি করা হচ্ছে, সে পথেই আগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

লেখক: ভারতের নিউ দিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাবেক উপদেষ্টা। নিবন্ধটি টোকিওভিত্তিক বাণিজ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম নিক্কি এশিয়ার ইংরেজি ভার্সন থেকে অনূদিত

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্রাজিল থেকে ১২০ টাকায় গরুর মাংস আমদানির খবর ভিত্তিহীন

ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন : এনবিআর চেয়ারম্যান

ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি যেদিন

শপথ নিলেন হাইকোর্টের ২৫ বিচারপতি

সাকিবের প্রিয় ‘শিকারের’ তালিকায় তামিম, দেখে নিন পুরো তালিকা

‘ভয়ংকর আফ্রিদির’ মুখোশ খুললেন তানভীর রাহী

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শুরু

তথ্য গোপন করে প্রধান শিক্ষক, অতঃপর...

পুঁজিবাজারের প্রতারক চক্র গোয়েন্দা সংস্থার নজরে: ডিএসই

পরিবর্তন হচ্ছে বাংলাদেশ জেলের নাম 

১০

চট্টগ্রামে সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে ২ শ্রমিকের মৃত্যু

১১

রাতে খাওয়ার পরও ক্ষুধা লাগার কারণ জেনে নিন

১২

বৃষ্টি-গরম নিয়ে নতুন বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস

১৩

প্রেমের স্মৃতি টেনে কিমের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন ট্রাম্প

১৪

কমলাপুর রেলস্টেশনে নারীকে কুপিয়ে হত্যা, প্রেমিক আটক

১৫

নদীভাঙনের কবলে শতবর্ষী স্কুল, হুমকিতে মাঠ ও শহীদ মিনার

১৬

আবারও সেরা ব্রাজিল, কলম্বিয়াকে হারিয়ে জিতল টানা তৃতীয় শিরোপা

১৭

দুদিন বন্ধ থাকবে ঢাবি মেট্রো স্টেশন

১৮

‘দৈনিক আজকের কণ্ঠ’ নামের পেজটি গুজব তৈরির প্ল্যাটফর্ম : বাংলাফ্যাক্ট

১৯

সরকারি ইজারাবিহীন বালুমহালে মোবাইল কোর্টের হানা

২০
X