লা মিজেরাবল প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগো রচিত ফরাসি উপন্যাস। বইটির প্রকাশ ১৮৬২ সালে। এটি উনিশ শতকের অন্যতম সেরা উপন্যাস হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত। একজন প্রাক্তন কয়েদি জাঁ ভালজাঁর জেলজীবন ও মুক্তি এবং আরও কয়েকটি অসাধারণ চরিত্রের জীবন সংগ্রাম নিয়ে আবর্তিত। প্রকাশের পর দেড়শ বছর পেরিয়েও বইটির আবেদন একটুও কমেনি। উপন্যাসটি পড়ে বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি আলফ্রেড টেনিসন হুগোকে ‘লর্ড অব হিউম্যান টিয়ার্স’ আখ্যা দিয়েছিলেন। আর জর্জ মেরেডিথ বলেছিলেন, এটি ছিল সেই শতাব্দীর সেরা উপন্যাস। মিল্টন তো এটিকে পবিত্র বাইবেলের সঙ্গেই তুলনা করেছিলেন!
রাত পেরিয়ে যেমন দিনের আবির্ভাব ঘটে, আঁধার পেরিয়ে আসে আলো। ঠিক তেমনই মানুষের জীবনে দুঃসময়ের পর আসে সুসময়—এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু পৃথিবীতে সবার ক্ষেত্রে এ কথা যেন খাটে না। কিছু মানুষ আছেন যারা ভাগ্যের গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট হয়ে সারা জীবন শুধু দুঃখই পেয়ে যান। এমনই এক চিরদুঃখী মানুষকে নিয়ে ফরাসি ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগো সৃষ্টি করেন সর্বকালের অন্যতম সেরা উপন্যাস ‘লা মিজারেবল’। পুরো উপন্যাস আবর্তিত হয়েছে জাঁ ভালজাঁর জীবন কাহিনিকে ঘিরে।
ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে বড় বোনের সংসারে মানুষ হতে হয়েছিল তাকে। তবে সাত সন্তানকে নিয়ে তার বোনও ছিল অথৈ সাগরে। তাই সেখানেও অভাবের যাতনা লেগেই ছিল। জাঁ ভালজাঁ যখন ২৫ বছরের যুবক তখন আচমকা তার ভগ্নিপতি মারা গেলেন। দুর্দিনে আশ্রয় দেওয়া বোনের সংসার চালানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন তিনি। এক শীতে কাজ না পেয়ে দারুণ অর্থাভাবে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত সাতটি ছোট্ট শিশুর ক্ষুধা নিবারণে বাধ্য হয়ে রুটি চুরি করলেন। ধরা পড়লেন এবং তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
এমন বিচারে সমাজের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে এলো জাঁ ভালজাঁর মনে। এ সমাজ গরিবকে কাজ দিতে পারে না, ক্ষুধার্তকে অন্ন দেয় না। অথচ নিতান্ত পেটের দায়ে যদি কেউ চুরি করে, তাকে নির্মম শাস্তি পেতে হয়। জেল থেকে বারবার পালাতে লাগলেন জাঁ ভালজাঁ, কিন্তু প্রতিবারই ধরা পড়ে যান। আর ধরা পড়ায় সাজার মেয়াদও বেড়ে পাঁচ বছরের সাজা খাটতে এসে তিনি বের হলেন উনিশ পর! ৪৬ বছরের ভালজাঁ জেল থেকে বের হয়েও শান্তি পেলেন না।
সমাজের সর্বত্র প্রত্যাখ্যাত হয়ে হতাশ হয়ে পড়লেন। তবে একসময় ব্যবসা করে অল্প সময়ে ধনীও হয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখ ঘোচেনি। এক মিথ্যা মামলায় তাকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সেখান থেকে পালিয়ে পরিচয় গোপন করে কোজেত নামে এক এতিম মেয়েকে নিজের মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করে নতুনভাবে জীবন শুরু করেন। এ সুখও তার বেশি দিন টিকল না। এরপর বুকভরা কষ্ট নিয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানানোর অপেক্ষায় জাঁ ভালজাঁ।
শুরু হয় নতুন অপেক্ষা। যাহোক, বিশাল বইটিতে শুধু জাঁ ভালজাঁর গল্প নয়, আরও অনেক চরিত্রের আবির্ভাব হয়েছে। সব চরিত্রই গল্পকে এগিয়ে নিতে রেখেছে ভূমিকা। বিশ্ব সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের তালিকা করলে নিঃসন্দেহে সগৌরবে স্থান পাবে ভিক্টর হুগোর ‘লা মিজারেবল’।
মন্তব্য করুন