বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘোরার বিষয়টি বহুল আলোচিত। বস্তুত তহবিল ঘাটতির কারণেই পেনশনের জন্য এসব শিক্ষক-কর্মচারীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কয়েক দশক থেকেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশন প্রাপ্তিবিষয়ক জটিলতা যে পর্যায়ে ছিল, বর্তমানেও সেই একই পর্যায়ে রয়ে গেছে। অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি এবং এর কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরিজীবনের শুরু থেকেই এমপিও প্রাপ্তি, চাকরি স্থায়ীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তার পরও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ার দায়িত্ব তারা পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। শেষ বয়সে এসে শিক্ষক-কর্মচারীরা যেন আর ভোগান্তির শিকার না হন, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। তবে সরকারের আন্তরিকতায় এ সংকট দিন দিন কমছে। শিক্ষকদের দুঃখ দূর করতে নিয়মিত বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া দরকার বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
গতকাল কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা চাকরিজীবন শেষে অবসরে গেলেও ঠিক সময়ে টাকা পাচ্ছেন না। তিন বছর সময় লেগে যাচ্ছে তাদের প্রাপ্য টাকা পেতে। টাকা চাইলেই তহবিল সংকটের অজুহাত দেখানো হচ্ছিল। এই সংকট কাটাতে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে। চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু গত দুই বছর টাকা তোলা হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) সেই টাকা জমা দিচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো গত বছরের তোলা টাকা পাঠায়নি। শিক্ষার্থীদের থেকে তোলা টাকা মাউশিতে পাঠাতে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও চিঠি দেওয়া হবে। চাপ কমাতে ষষ্ঠ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের সময় এই (অবসর ও কল্যাণ) খাতের টাকা যাতে তোলা যায়, সেই দায়িত্ব শিক্ষা বোর্ডকে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ১৯৯০ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
২০০৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে অবসর সুবিধা দেওয়া। এই দুই সুবিধা বাবদ শিক্ষকরা চাকরিকাল অনুযায়ী এককালীন অর্থ পান। আইন অনুযায়ী, শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) থেকে চাঁদা হিসেবে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে রাখা হয়। এর মধ্যে অবসর সুবিধা বোর্ড ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্ট ৪ শতাংশ পায়। এর বাইরে বিশেষ বা থোক বরাদ্দ এবং বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেওয়া সিড মানির (গচ্ছিত অর্থ) লভ্যাংশ পায় সংস্থা দুটি।
আমরা মনে করি, শিক্ষা খাতে সরকারের বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। শিক্ষার মান উন্নয়নের সঙ্গে শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টিও জড়িত। শিক্ষকদের কাঙ্ক্ষিত বেতন-ভাতা প্রদান করা না হলে শিক্ষার মান বাড়বে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। শিক্ষকতা পেশায় যাতে মেধাবীরা আগ্রহী হন, সে জন্য শিক্ষকদের সার্বিক জীবনমানের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাকরি আরও আকর্ষণীয় করতে হবে। এতে বেশি মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী হবে। অন্যথায় এ খাতের লক্ষ্য অর্জনে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।