কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২:১৫ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকার-মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান

সুপার ফাইভের নিয়ন্ত্রণে বিএনপি

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। সৌজন্য ছবি
মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। সৌজন্য ছবি

বিএনপিতে সুপার ফাইভের রাজনীতি চলছে মন্তব্য করেছেন দলটির বহিষ্কৃত নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, বিএনপিতে চাটুকারিতার রাজনীতি চলছে। দলের ভেতর সুপার ফাইভ তৈরি হয়েছে। এই সুপার ফাইভকে কেউ মানে না; কিন্তু পদ তারা আঁকড়ে ধরে আছেন। এর বাইরে আমাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বোঝাতে পারিনি বলেই আমি ব্যর্থ হয়েছি। কালবেলাকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, তারেক রহমানের গায়ে হাত দেওয়ার মতো অবস্থা বর্তমান সরকারের নেই। তাই অনতিবিলম্বে তারেক রহমানের বাংলাদেশে চলে আসা উচিত। বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করা উচিত। তাহলে তারেক রহমান আগামী দিনের বাংলাদেশের নায়ক হবেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এম এম মুসা -

কালবেলা: জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: বিএনপি স্পষ্ট করে বলেছে, বর্তমান সরকারের অধীনে তারা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখে না। তাই বিএনপি গত দুই বছরে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। যেসব নেতা নির্বাচনে গেছে বিএনপি তাদের বহিষ্কার করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো বিএনপি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চায়, তারা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। দলের সিদ্ধান্ত আমাদের সবার সিদ্ধান্ত, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।

কালবেলা: দাবি আদায়ে বিএনপি জনসভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। এতে কী দাবি আদায় হবে?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: এখন যে সমাবেশগুলো হচ্ছে বা যে সমাবেশগুলো হয়েছে সেগুলো হলো র্যালি জাতীয় সমাবেশ। আনন্দ-ফুর্তির সমাবেশ বা সমবেত হওয়ার সমাবেশ। মেলায় যাওয়ার মতো সমাবেশ। এখানে কোনো বিক্ষোভ করা হয়নি, কোনো বিক্ষোভ মিছিল হয়নি। সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু হয়নি। সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসি-এসপির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তারা সমাবেশ করেছেন। মেলায় যেমন হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয় এবং আনন্দ করে বাড়ি ফিরে যায়। সমাবেশগুলোর অবস্থাও তাই। এই মেলা দিয়ে সরকার পরিবর্তন হবে না বা সরকার পরিবর্তন করা যাবে না। মেলা দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। দরকার বিক্ষোভ। বিক্ষোভে লোকজন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত নেতা সমাবেশ থেকে মাঠ ত্যাগ করতে অস্বীকার করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এসব সমাবেশ বিক্ষোভে রূপান্তর হবে না।

কালবেলা: সরকারের অনুমতি ছাড়া সভা কি সম্ভব? তাহলে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে না?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: আন্দোলন করে আজ পর্যন্ত কেউ কি ফুলের মালা পেয়েছে? আন্দোলনে নামলে ধরে নিয়ে যাবে, এটিই স্বাভাবিক। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে সরকার ধরে নিয়ে যাবে। গুম-খুনের শিকার হবে। এজন্যই যারা আন্দোলন করে তাদের বলা হয় বীর। আন্দোলন হলো বীরের কাজ। যারা আন্দোলনে ভয় পায়, আন্দোলনের গুম-খুন-অত্যাচার-জেল-নির্যাতনে ভয় পায়, তাদের জন্য রাজনীতি না। তাদের জন্য সরকারি রাজনীতি। সরকারি দলে যান, সেখানে আরাম-আয়েশে বসে চিল্লাচিল্লি-মারামারি-কাটাকাটি করতে পারবেন। কিন্তু বিরোধী দল করতে গেলে সরকারের বিরুদ্ধে আপনার অবস্থান, সরকারকে সরানোর জন্যই আপনার আন্দোলন—সেখানে সরকার আপনাকে আঘাত করবে। এটা মেনেই রাজনীতি করতে হবে। এটা মেনে যারা রাজনীতি করতে পারবেন তারাই যদি এগিয়ে আসতেন, তারাই যদি সামনের সারিতে থাকতেন, তারা যদি মাঠে থাকতেন, তাহলে আজকের রাজনীতির চিত্র ভিন্ন রকম হতো।

কালবেলা: বিএনপিতে ত্যাগী নেতার অভাব রয়েছে কী?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: অবশ্যই বিএনপিতে এরকম নেতা রয়েছেন। বিএনপিতে হাজার হাজার এরকম নেতা রয়েছেন। কিন্তু তাদের মূল্যায়ন করা হয় না, তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় না। বিএনপিতে প্রতিটি জেলায় এরকম অগণিত ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছেন। কিন্তু তাদের রাজনৈতিকভাবে এমন কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে, তারা দায়িত্ব পান না। বিএনপিতেও চাটুকারিতার রাজনীতি চলছে। এক ধরনের তুষ্টির রাজনীতি চলছে। এখানে সুপার ফাইভের রাজনীতি চলছে। বিএনপির কত নেতাকর্মী কত বছর ধরে জেলে পড়ে আছে, তার খবর কয়জন নেন। তারপরও একই কথা, এই সরকার কবে যাবে। এই নেতাদের খবর রাখে না সংবাদমাধ্যম। এই নেতাদের খবর পত্রিকায় আসে না। বিএনপিতে ত্যাগী ও বুকের রক্ত দেওয়ার মতো, পুলিশের সামনে বুক পেতে দাঁড়ানোর মতো অসংখ্য নেতা রয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো—হয় আমরা তাদের চিনি না, নয়তো তাদের মূল্যায়ন করি না।

কালবেলা: আপনি বললেন ত্যাগী নেতাদের সামনে না আনলে কোনো দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। এ বিষয়টা কি বিএনপির নেতৃত্ব বোঝে না?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: না, বোঝে না। যদি বুঝত তাহলে তার প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পেতাম। তারা বোঝেন না। বোঝার মতো মেধা এবং বুদ্ধি তাদের কারও নেই। তারা যে যে পদে রয়েছেন, তারা ওই গ্রুপটার পদে রয়েছেন। তারা জানেন ত্যাগী নেতারা সামনে এলে তারা সেই পদে থাকতে পারবেন না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি বিশাল দল। দলের চেয়ারপারসন আজ অসুস্থ অবস্থায় ঘরে বন্দি। সরকার তাকে জেলে বন্দি করে রেখেছে। আমরা একটি সম্মেলন করে নেতৃত্ব তৈরি করতে পারতাম। আমরা কেন সম্মেলন করলাম না? আমরা দলীয় সম্মেলন ডাকতাম। সরকার আমাদের বাধা দিত, এ ছাড়া তো কিছু না। গত পাঁচ বছরে আমরা কেন সম্মেলন করলাম না! কেন সম্মেলন করে আমরা দলীয় নেতা নির্বাচিত করলাম না। বর্তমান মহাসচিবই মহাসচিব হতেন, তাতে তো কোনো সমস্যা ছিল না। সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি মহাসচিব হতেন। সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় নেতৃত্ব নির্বাচিত হতো। কেন আমরা প্রতিটি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি করলাম না! তারেক রহমান আমাদের দলের নেতা থাকবেন। আমরা কেউ নেতা হতে যাচ্ছি না। অন্য কারও নেতা হওয়ার সুযোগও নেই। তারেক রহমানের কোনো বিকল্প বিএনপিতে নেই। তাহলে সেখানে সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে সমস্যা কোথায়? আমরা পদ রক্ষার রাজনীতি করছি। তারেক রহমানকে রক্ষার রাজনীতি করছি না। আমরা খালেদা জিয়াকে রক্ষার রাজনীতি করছি না। এটাই সত্য, এটাই বাস্তব।

কালবেলা: আপনি কি মনে করেন তারেক রহমানের দেশে এসে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: একটি অস্থায়ী পদ পাঁচ-সাত বছর থাকতে পারে না। এটা অনৈতিক হয়ে গেছে। এই পদটা অবৈধ হয়ে গেছে। এটা কেউ বলে না, কিন্তু রাজনীতির ভাষায় এই পদটি আর বৈধ নেই। কাজেই বিএনপির সম্মেলন করতে হবে। তারেক রহমানকে হজম করার মতো অবস্থা এখন বর্তমান সরকারের নেই। আমি স্পষ্ট করে বলতে পারি তারেক রহমানের গায়ে হাত দেওয়ার মতো অবস্থা বর্তমান সরকারের নেই। তারেক রহমান যদি এখন বাংলাদেশে ফিরে আসেন, তবে বড়জোর এ সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে জেলখানায় রাখবে। যেমন কিছুদিন আগে পাকিস্তানে ইমরান খানকে রাখা হয়েছিল। ভারতে রাহুল গান্ধীর পদ নিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের কাউকেই গ্রেপ্তার করে রাখতে পারেনি। তারেক রহমান এই সরকারের জন্য তখনই চ্যালেঞ্জ হবেন, যখন তিনি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবেন। আমি মনে করি, অনতিবিলম্বে তারেক রহমানের বাংলাদেশে চলে আসা উচিত। তার বোঝা উচিত, তার ফেস করা উচিত—আমার নেতাকর্মীরা যেখানে গুম-খুন হতে পারে, সেখানে দরকার পড়লে আমিও গুম-খুন হব; কিন্তু আমি জনগণের পাশে থাকব। যদি তাই হয়, তাহলে তারেক রহমান আগামী দিনের বাংলাদেশের নায়ক হবেন।

কালবেলা: আপনি কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। কী নিয়ে আলোচনা হলো?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: আমি একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি এবং আমি রাজনীতি করি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে আধা ঘণ্টার বেশি সময় দিয়েছেন। আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত টেবিলে কথা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কীভাবে দেশ চালাচ্ছেন এবং তার আগামীর পরিকল্পনা কী—এসব বিষয়ে আমার সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে এই সুযোগ না দিলেও পারতেন। তবে তিনি আমাকে এই সুযোগ দিয়েছেন, এটা তার বদান্যতা। তিনি দেশের একজন নাগরিক এবং একজন রাজনীতিবিদের কাছে তার অবস্থান প্রকাশ করেছেন। এটিই রাজনীতি। তিনি একজন সরকারপ্রধান। তার অবস্থান জনগণের সামনে প্রকাশ করেছেন, এর চেয়ে বড় জবাবদিহি আর কী হতে পারে। বেশিরভাগ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেই কথা বলেছেন। তার পরিকল্পনা, তার অ্যাক্টিভিটিস, বৈদেশিক সম্পর্কের বিষয়ে তার নীতি—এগুলো সম্পর্কেই বেশিরভাগ কথা হয়েছে।

কালবেলা: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর অনেকেই বলছেন আপনি আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন। বিষয়টি একটু স্পষ্ট করবেন কী?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: আমি আগেও পরিষ্কার করে বলেছি, এখনো বলছি ব্যক্তিগতভাবে আমার এলাকার স্বার্থে, এলাকার জনগণের স্বার্থে একটি কাজে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া এই কাজটি করার জন্য আমার সামনে আর কোনো সুযোগ ছিল না। দল পরিবর্তন করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। দল পরিবর্তন করতে চাইলে সেটা যৌবনকালেই করতাম। আমি মহান আল্লাহর কাছে এটাই বলি যে, আমি যেন বিএনপির কর্মী হিসেবেই মৃত্যুবরণ করতে পারি। আমার নামের আগে-পিছে বিএনপি থাকলেই হলো। এখন বহিষ্কৃত বা বিএনপিতে আছি, সেটা পরের বিষয়। আমি কমিটমেন্ট করেছি, দেশমাতা খালেদা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছি এবং থাকব। এটা পরিষ্কার। আগামী দিনের রাজনীতিতে আমার পক্ষে নতুন নেতৃত্বকে মানিয়ে চলতে সমস্যা হবে না। সেটা হয়তো আমার বয়সের জন্য। আমি নেতা হিসেবে সেখানে জায়গা নাও পেতে পারি। কিন্তু রাজনীতিতে আমাদের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। বিএনপি আমাদের রাজনীতির আদর্শ।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে-ই বাংলাদেশে রাজনীতি করুন না কেন, তাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বাইরে কোনো রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার সুযোগ বাংলাদেশের মাটিতে দেওয়া উচিত নয়। হবেও না। কারণ সেটা হবে আমার রাষ্ট্রের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান।

কালবেলা: অনেকেই অভিযোগ করছেন আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপিকে ভাঙার একটা প্রচেষ্টা চলছে। এটা কতটা সত্য?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: রাজনৈতিক দলে ভাঙাগড়া থাকবেই। কিছু লোক দল থেকে চলে যাবে, কিছু লোক নতুন করে দলে আসবে—এটাই তো স্বাভাবিক। এখানে তারেক রহমানের হারানোর কিছু নেই। আমি তারেক রহমানের সঙ্গে থাকি বা না থাকি সেটা বড় বিষয় নয়। তারেক রহমানকে এগিয়ে যেতে হবে, এটিই প্রধান বিষয়। বিএনপি তারেক রহমানের সঙ্গে থাকবে। বিএনপিতে তারেক রহমানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি তারেক রহমানকে ছাড়া বিএনপিকে ভাবে, তাহলে আমি বলব সে বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। আগামী দিনের বিএনপি তারেক রহমানকে ঘিরে গড়ে উঠবে। আমার অনুরোধ থাকবে, তারেক রহমান যেন সেটিকে সাংগঠনিকভাবে সঠিক করে নেন। তিনি যেখানেই থাকুন না কেন এখন ডিজিটাল যুগ। তিনি সম্মেলনের ডাক দিতে পারেন। এক মাসের নোটিশে সম্মেলন করতেও পারেন। আমাকে হাতটা তোলার সুযোগ দেন। বিএনপি যেন সুপার ফাইভের মধ্যে আটকে না থাকে।

কালবেলা: আপনি অনেকদিন ধরে বিএনপিতে সংস্কারের কথা বলছেন। আপনি বলছেন দলে অনেক ত্যাগী নেতাও রয়েছে। তাহলে সুপার ফাইভ কীভাবে দলকে কন্ট্রোল করছে?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: দলের ভেতর সুপার ফাইভ তৈরি হয়ে গেছে। তাদের চ্যালেঞ্জ করলে দলের মধ্যে অন্তর্কোন্দল শুরু হবে। সুপার ফাইভকে কেউ মানে না। কিন্তু এই পদ তারা আঁকড়ে ধরে আছেন। এর বাহিরে আমাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বোঝাতে পারিনি বলেই আমি ব্যর্থ হয়েছি। আর বোঝানোর চেষ্টা করেছি বলেই আমি বহিষ্কার হয়েছি। আমি যদি বোঝানোর চেষ্টা না করতাম তাহলে আমি বহিষ্কার হতাম না। দলের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করতে হলে আমাকে দলের মধ্যে একটি অন্তর্দল তৈরি করতে হবে। অভ্যন্তরীণ একটি গ্রুপিং করতে হবে। কিন্তু গ্রুপিং করলে আবার সুযোগসন্ধানীরা সুযোগ নেবে। তাই এসব দুর্বলতা সত্ত্বেও দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।

কালবেলা: ১০ বছর পর হঠাৎ করে জামায়াতকে সমাবেশ করতে দিল সরকার। আবার ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকেও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। আপনি কি কোনো পরিবর্তন দেখছেন?

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান: এটাকে আমি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও চৌকস রাজনৈতিক চাল বলে মনে করি। সরকার বিভিন্ন কারণে ইসলামিক দলগুলোকে সামনে আনতে চাচ্ছে। যেহেতু এই মুহূর্তে কোনো কট্টর ইসলামপন্থি দল নেই। যেহেতু র্যাবের ওপর স্যাংশন রয়েছে, তাই আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার চেয়ে তাদেরকে সরকার সামনে নিয়ে এলো। কারণ সারা বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামের অসংখ্য কর্মী বা শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে। কিন্তু তাদের আসন নেই। ৩০০ আসনের মধ্যে তিনটি আসনও তাদের নেই। জামায়াতে ইসলামের প্রচুর ভালো কর্মী রয়েছে। প্রচুর জ্ঞানী-গুণী কর্মী রয়েছে। জামায়াতের অনেক মেধাবী এবং রাজনীতির দর্শন সম্পন্ন কর্মী রয়েছে, যা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে নেই। বিএনপি নির্বাচনে না এলে জামায়াতে ইসলামী সেই সুযোগ নিতে চাইবে। কারণ বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জামায়াত কয়েকটি আসন পেতে পারে। বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলে বোকা মানুষ সব জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেবে। সেখানে জামায়াতের একটি বড় রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ফলে বিএনপি আজীবন ভুগবে। সরকার সেই চালটাই চেলেছে। সরকার জামায়াতে ইসলামীকে ৩০-৪০টি আসন দিয়ে দেবে। সেই আসনে জামায়াতকে ভোট দেবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। একটি জাতীয় নির্বাচনে ৩০-৪০টি আসন পেয়ে গেলে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এতে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে বিএনপির।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গোল্ডেন ভিসার সুবিধা কী, খরচ কত?

আইলার দুঃস্বপ্নকে ছাপিয়ে যেতে পারে ভয়ংকর ‘রেমাল’ 

সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য

ভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেল বাইসাইকেল আরোহীর

‘এমন খুচরা এমপি আমি পকেটে রাখি’

কুরলুস ওসমানের নায়ক কবে ঢাকায় আসছেন?

খেলতে গিয়ে শিশুরা দিল এলএমজি-ম্যাগজিন-গুলির সন্ধান

বিশ্বকাপ যাচ্ছে ব্রাজিলে

তিনি এসেছিলেন বলে……

বাসাবোতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু 

১০

শেখ হাসিনা: স্বাধীন বাঙালির অনিঃশেষ প্রেরণা

১১

রাজধানীর সড়কে প্রাণ গেল তরুণীর

১২

নির্বাচনী প্রচারণার মাঠের পাশেই ককটেল বিস্ফোরণ, গ্রেপ্তার ৫

১৩

জনতার মুখোমুখি হলেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা

১৪

‘বিএনপি পাকিস্তানের দালাল হয়ে জনগণকে শোষণ ও অত্যাচার করত’

১৫

দিঘিতে মিলল এক মণ কোরাল মাছ

১৬

চবিতে ঝরনার নেমে স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু

১৭

ভালো ফলনের পরও হতাশ কৃষক

১৮

কিশোর গ্যাংবিরোধী র‌্যালিতে গ্যাং লিডার মিজান

১৯

সাহাবির তিলাওয়াতে যে কারণে দিগ্‌বিদিক ছুটছিল ঘোড়া

২০
X