দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন আগামী মঙ্গলবার। এদিন ১৫৭টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে। ভোটের ৩৬ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ আজ রোববার রাতেই শেষ হচ্ছে সব আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। তবে প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ধাপের এ নির্বাচনেও সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা সত্যিকারই দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। কেননা সদ্য শেষ হওয়া প্রথম ধাপের নির্বাচনে সংঘটিত সংঘাত-সহিংসতার ঘটনাগুলো থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্বাচন কমিশন, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা কেউই যে তা কমানোর বিষয়ে আন্তরিক ছিলেন না অথবা আন্তরিকতা থাকলেও সফল হননি—দ্বিতীয় ধাপের শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা কেন্দ্র করে বিভিন্ন উপজেলায় এ চরম শঙ্কাই তার সাক্ষ্য বহন করে।
শনিবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ভোটের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় এ সহিংসতার মাত্রা আরও বাড়ছে। ফলে বাড়ছে নির্বাচন কেন্দ্র করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। চতুর্থ ধাপের ভোট নিয়েও অনানুষ্ঠানিকভাবে চলছে প্রচার-প্রচারণা। ফলে এসব নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো উপজেলায় সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে কোথাও কোথাও হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। এর আগে প্রথম ধাপের ভোটকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দেশব্যাপী বিক্ষিপ্ত সহিংসতা হয় ভোটের দিনও। ওইদিন সারা দেশে অন্তত শখানেক আহত হয়। দ্বিতীয় ধাপেও এরই মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় শুরু হয়েছে সংঘাত ও সহিংসতা। কোনো কোনো প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা অনেকটাই বেপরোয়া। লাগামহীন বক্তব্য, প্রতিপক্ষ সমর্থকদের হত্যার হুমকি, ককটেল বিস্ফোরণ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চাপ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারি—নানাবিধ অনিয়ম হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও মাঠ প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে ইসি। এই সেলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদেরও রাখা হয়েছে। মনিটরিং সেল নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে ইসিকে অবহিত করবে। সেইসঙ্গে সেলে অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে কমিশনকে জানাবেন। এ ছাড়া ১৫৭ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে ইসি। ভোট গ্রহণের আগের দুদিন, ভোট গ্রহণের দিন ও ভোট গ্রহণের পরের দুদিন—পাঁচ দিনের জন্য তারা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
আমরা মনে করি, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করাই ইসির প্রথম কাজ। এজন্য যেসব নির্বাচনী এলাকায় বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের যেমন কঠোর ও নিরপেক্ষ হওয়া দরকার; একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদেরও হতে হবে দায়িত্বশীল। আবার একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসির মর্যাদা যেন অক্ষুণ্ন থাকে, অথবা হাসির খোরাকে পরিণত হতে না হয়—এ বিষয়ে তাদের সংযত থাকা দরকার। ফলে শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর ও ভয়-শঙ্কামুক্ত ভোটের পরিস্থিতি তৈরিতেই তাদের আগে মনোযোগ দিতে হবে। কেননা, উপজেলায় প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে ছিল না বলে কারণ হিসেবে ইসির ‘বৃষ্টি’ অথবা ‘ধান কাটা’র তত্ত্বের আশ্রয়, তাই হাস্যরসের উদ্রেক করেছিল। তাই সব ভয়ভীতি ও শঙ্কা দূর করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে পারাই ইসির বড় কাজ হবে। সংঘাতহীন, শান্তিপূর্ণ ভোট হোক—এটাই চাওয়া।