মেঘলা আবহাওয়া, তীব্র বাতাস, ছিল না সূর্যের আলোর দেখা। তার ওপর সবুজাভ উইকেট—এমন দিনে পেসারদের ভালো না করাটাই হতো বড় আশ্চর্যজনক ঘটনা। তাই তো দিনের ১৬ উইকেটের ১১টিই ছিল তাদের দখলে। সকালের শুরুতে আফগানিস্তানের পেসারদের সুবিধা পেতে দেখে বোধহয় একটু তাড়াহুড়া করেই ইনিংসের ইতি টেনেছেন মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজরা। কেননা, এমন আবহাওয়ায় পরের গল্পটা তো লিখতে যাচ্ছেন ইবাদত হোসেন, শরীফুল ইসলামরা। সেটাই হয়েছে। দুপাশ থেকে আক্রমণ চালিয়ে দ্রুত আফগান ব্যাটারদের ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন এ দুই পেসার। পাঁচ উইকেট নেওয়ার দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করেও দলের স্বার্থে ব্যক্তিগত অর্জনকে গৌণই মনে করেছেন ডানহাতি এ পেসার।
প্রথম ঘণ্টায় ৩৮২ রানে আটকে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। নতুন বল নেওয়ার পর ৫.৩ ওভার বোলিং করেন আফগান পেসার ইয়ামিন আহমেদজাই ও নিজাত মাসুদ। তারা যেখানে শেষ করেছেন, সেখান থেকেই যেন শুরুটা করলেন ইবাদত-শরীফুল। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে তিন আফগান ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান তারা। এরপর আরও ৩ উইকেট নেন। চার বিরতির আগে ইবাদতের দখলে ছিল ৪ উইকেট। পাঁচ উইকেট নেওয়ার সুযোগ থাকলেও দলের কথা ভেবে সেটাকে বিসর্জন দিয়েছেন ইবাদত। অতৃপ্ত কি না, ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নে ইবাদতের উত্তর, ‘না, আলহামদুলিল্লাহ।’ দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দুই ওভার পেছনে ছিলাম (স্লো ওভার রেট)। পিছিয়ে থাকলে তো সমস্যা, এজন্য অধিনায়ক চাইছেন দুপাশ থেকে দুজন স্পিনার দিয়ে শুরু করবেন। যেহেতু দল প্রথম, সেদিক দিয়ে ঠিক আছে। যেহেতু ব্যক্তিগত অর্জনের দিক থেকে আমার কাছে দলের চাওয়াটা বড় বিষয়।’
দলের জন্যই দারুণ এক অর্জন থেকে নিশ্চিত বঞ্চিত বলা যায় ইবাদতকে। কিন্তু দল কি তাদের কথা ভাবে! এমন প্রশ্নও এখন করা হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। দেশের মাটিতে সব সময় স্পিনবান্ধব উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পরিকল্পনা করে টিম ম্যানেজমেন্ট। সর্বশেষ দুই টেস্টে পেসবান্ধব উইকেট বানিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন তারা। এতে সাফল্যও মিলেছে বলা যায়। আগের তুলনায় এখন অনেকটাই উন্নতি করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। ভবিষ্যতে দলের কাছে এমন উইকেট প্রত্যাশা করেন কি না—ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ইবাদত জানালেন, ‘ভালো খেললে তো আত্মবিশ্বাস আসবেই, ভালো করছি। আশা করছি তাদের (টিম ম্যানেজমেন্টের) আস্থা থাকবে।’
দেশের মাটিতে সবুজাভ উইকেটে একটা সময় কল্পনাও করতে পারতেন না ইবাদতরা। প্রথমবার এমন উইকেট পেয়ে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছেন তারা। সফল হয়ে ইবাদত শোনালেন সে কথা, ‘দেখেন আমার দেখা বাংলাদেশে প্রথম এ ধরনের উইকেট আমরা পেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা যে, তিনজন ফাস্ট বোলার টেস্টে, এ ধরনের উইকেটে খেলা আমাদের অনেক বড় একটা সৌভাগ্য। সুতরাং আমরা চেষ্টা করছি যে, ওদেরকে যত কম রানে আউট করা যায়। আসলে পরিকল্পনাটা এক্সিকিউট করতে পারছি। এটাই সবচেয়ে বড় জিনিস।’ সবুজাভ উইকেট, বৈরী আবহাওয়া ও বাতাসের সাহায্য নিয়ে সফল হওয়া ইবাদতদের চাওয়া এখন শুধু এগিয়ে যাওয়া। উন্নতির গ্রাফটাও আরও ওপরের দিকে নিয়ে যাওয়া।
মন্তব্য করুন