জাতীয় হকি দল থেকে বাদ পড়ে হতাশ নাঈম উদ্দিন। তার বাদ পড়ার কারণ জানতে ফেডারেশনে গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় ক্ষেপে গিয়ে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য সদস্যদের সামনে যুগ্ম সম্পাদক আবু জাফর তপন জাতীয় দলের খেলোয়াড়কে ‘বাস্টার্ড’ বলে গালি দেন! ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্মিত নাঈম উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে এএইচএফ কাপে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার নেপথ্যের কারণগুলো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে বলতে থাকেন।
ভারতের বিহার রাজ্যের রাজগির শহরে ২৯ আগস্ট শুরু হচ্ছে এশিয়ান কাপ হকি। আসরে অংশগ্রহণের বিষয় নিশ্চিত হয়েছে সোমবার। সেদিন রাতেই বাংলাদেশ প্রাথমিক দল থেকে চূড়ান্ত দল বেছে নিয়েছে। বিষয়টি খেলোয়াড়দের জানিয়ে দেওয়া হয় মঙ্গলবার। সে রাতেই বাদ পড়া চার সিনিয়র ক্রিকেটারের মাঝে দুজন নাঈম উদ্দিন ও মঈনুল ইসলাম কৌশিক ফেডারেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জানতে চেয়েছিলেন—কী কারণে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নাঈম উদ্দিন কালবেলাকে বলছিলেন, ‘আমি ফেডারেশন কর্মকর্তাদের বলেছি, যদি আপনারা আমাকে অন্যায়ভাবে বাদ দিয়ে থাকেন, ভবিষ্যতে এ জন্য আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। এ কথা শুনেই ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক আবু জাফর তপন রাগান্বিত হয়ে আমাকে বাস্টার্ড বলে গালি দেন।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবু জাফর তপন কালবেলাকে বলেন, ‘হকি ফেডারেশনে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। আপনি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলুন।’ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) রিয়াজুল হাসান বলছিলেন, ‘খেলোয়াড়রা এসেছিলেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলে গেছেন। এটা এমন কিছু না।’ এক খেলোয়াড় দাবি করেছেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলছিলেন, ‘আমি এমনটা বিশ্বাস করি না। কারণ দল নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোচ, নির্বাচক প্যানেল জড়িত। অনুশীলন কার্যক্রম কিন্তু ফেডারেশনের কর্মকর্তারাও দেখভাল করেছেন। এখানে মনগড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।’
হকির খেলোয়াড়-কর্মকর্তার এই দ্বন্দ্ব সামনে এনেছে এইচএফ কাপ ব্যর্থতাকে। এ প্রসঙ্গে নাঈম উদ্দিন বলেছেন, ‘ইন্দোনেশিয়ায় এএইচএফ কাপ চলাকালে আমাদের পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয়নি। পর্যাপ্ত খাবার না পেলে হকির মতো কঠিন ম্যাচ খেলা অসম্ভব। বিষয়টি আমাদের নৈপুণ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’ সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলে নিয়মিত খেলা এ খেলোয়াড় আরও বলেন, ‘বিগত দিনের তুলনায় দৈনিক ভাতাও কম দেওয়া হয়েছে। খাবার ও ভাতা নিয়ে দলের সবার অনুরোধে আমি ও পুস্কর খিসা মিমো ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলাম। পুরো বিষয়টি স্বাভাবিক হলে ওরা কয়েকজন আমরা প্রতিবাদী বলে আখ্যায়িত করে দলের বাইরে রাখার চক্রান্ত করছেন।’ তবে এতদিন পর কেন এসব অভিযোগ? প্রশ্নের জবাবে নাঈম উদ্দিন বলেন, ‘সবাই জানি, দেশের হকিতে জটিলতার শেষ নেই। তা ছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় ফল খারাপ হওয়ার পর নতুন কোনো জটিলতা হোক আমরা চাইনি। কিন্তু ফেডারেশন কর্মকর্তারা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে এই কারণগুলো সামনে এনে আমাদের সিনিয়রদের দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। নিজেদের দোষ ধামাচাপা দিতে আমাদের ছেঁটে ফেলার চক্রান্ত করছেন। সে কারণেই এ কারণগুলো সামনে নিয়ে এলাম। প্রয়োজনে প্রমাণও দিতে পারব। যাতে তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবাই সঠিক তথ্যটি জানতে পারেন।’
যদিও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন থেকে নাঈম উদ্দিনের করা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘মিমো কন্ডিশনিং ক্যাম্পে যোগ দেয়নি। তারপরও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে তাকে ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। নাঈম বিপ টেস্টে অংশগ্রহণ করেনি। যদিও বিপ টেস্টে সেরা মঈনুল ইসলাম কৌশিককে সিনিয়র কোটায় ছেঁটে ফেলা হয়েছে। সিনিয়র চারজন বাইরে রেখে তুলনামূলক অনভিজ্ঞদের নিয়ে গড়া ফরোয়ার্ড লাইনআপ এশিয়া কাপের মতো আসরে দল পাঠানোর যুক্তিটাও কতটা শক্ত, সেই প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন